খেতে। রোববারের দুপুর। ওদের হয়তো অন্য কোনো প্রোগ্রাম ট্রোগ্রাম…।
লাহিড়ীর বউ বলে, না সেসব কিছুই নেই। দুপুরটা কাটিয়ে যেতে পারলে তো আমাদেরও ভালই লাগত। কিন্তু ছেলে মেয়েকে ফেলে এসেছি তো? চায়ের কাপে চুমুক মেরে লাহিড়ী বলে, আজ্ঞার পক্ষে খিচুড়ি কিন্তু উত্তম। বৃষ্টিও পড়ছে। তিলক! তাস ফাস চলবে নাকি?
তারপর নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি না হয় বাড়ি যাও। অনেকদিন পর আমাদের আজ এখানে তাসের আড়াই হোক।
ফ্যাসফেসে গলায় তিলক কী বলতে যায়, তিলকের বউ হেসে বলে, ওই বা যাবে কেন? একটা দুপুর কাজের লোকই না হয় ছেলেমেয়েকে দেখবে। ফোন করে, দিলেই হয়?
তিলক আশ্চর্য হয়, তার বউ হাত গলে বেরিয়ে গিয়ে কেন বারবার প্রথম হবে? তিলককে জিততে দেবে না? এখন যে খেলার চালটা তার বউ চালছে, তাতে অবশ্য তিলক খুশি। স্বামীর পূর্ব প্রেমিকার সঙ্গে ভদ্রতা করে বউ উদার হতে চায়। তো হোক হা। চায়ের কাপ শেষ করে তিলক হাসি মুখে উঠে দাঁড়ায়। এই মুহূর্তে তিলকও খুব উদার হয়ে যায়। বউকে বলে, দাও বাজারের ব্যাগটা।
তিলকের বউয়ের চোখে তখন ছুরির ধার। তিলক বউকে এবার গ্রাহ্য না করে সাহসী হয়ে যায়। লাহিড়ী, লাহিড়ীর বউ দুজনেই বাধা দিয়ে বলে, এই না খিচুড়ির মেনু হল? তবে আবার বাজার কেন?
তিলক বলে, শুধু খিচুড়ি খাওয়ালে আমার বউয়ের প্রেসটিজ থাকবে? সেই সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা যদি না হয়? এই বর্ষার বাজারে যা ইলিশ উঠছে না?
তিলকের বউ তাড়াতাড়ি বলৈ, টিফিন ক্যারিয়ারটা দিয়ে দিই? আসবার পথে অন্নপূর্ণা হোটেল থেকে কিছু কষা মাংসও নিয়ে এসো।
তিলক এবার বিপদে পড়ে যায়। ও মনে মনে গজরায়, মাসের শেষ। পকেট ফাঁকা। হোক গে প্রেমিকা…। তিলক ভালই জানে বউ ঝুটঝামেলা পছন্দ করে না। বাড়িতে মাংস রান্নার ঝামেলা তুললে ও সুড়সুড় করে লেজ গুটিয়ে পালাবে। তিলক বলে, রেস্তারাঁর মাংস খাওয়াবে? তার চেয়ে বাড়িতেই তুমি মাংসটা…। তোমার হাতের কষা মাংস তো চমৎকার।
তিলকের বউ কিন্তু খুশি হয়। হেসে বলে, থাক এদের সামনে আর স্ত্রৈণভাব দেখাতে হবে না। অন্নপূর্ণার কষা মাংস তো তোমার খুব প্রিয়। বন্ধু আর বন্ধু-পত্নীকে তোমার প্রিয় রেস্তরাঁর কষা মাংসের টেস্টটা করানোর সুযোগ যখন পেয়েইছো…।
লাহিড়ী, লাহিড়ী বউ আর একবার বাধা দেয়। তিলকের বউ ততক্ষণে স্বামীর হাতে টিফিন ক্যারিয়ার আর বাজারের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়েছে। জোর করে সরু এক ফালি হাসি টেনে বেরিয়ে যায় তিলক। ভাবে, এক মাঘে শীত যায় না। ও দুপুরে এর শোধ তুলবে। বউকে সে চেনে।
তাসের আড্ডায় ওরা তিনজন দারুণ জমাবে। তিলকের বউ তাস চেনে না। খেলতে জানে না। লাহিড়ীর বউ তাসে ওস্তাদ। তিলক তাস খেলতে খেলতে লাহিড়ীর বউয়ের চোখে চোখ ফেলতে ফেলতে মাংসের খরচের টাকাটা তুলে নেবে।
বাজার নামিয়ে তিলক বলে, কই গো শুনছ? নাও তুমি তোমার অতিথিদের ইলিশ মাছ ভাজা খাইয়ে শখ মেটাও। আমরা তাসে বসি।
তিলকের বউ বলে, ওমা সেকি! ওর সঙ্গে দুটো সুখ-দুঃখের কথা কইব না? সেজন্যই তো আটকালুম। এসো, এসো, ভাই…। লাহিড়ীর বউয়ের হাত ধরে তিলকের বউ প্রায় টেনেই নিয়ে যায় রান্নাঘরে। মোড়ায় বসতে দেয়।
তিলক চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। তিলকের মনে হয়, সংসারের এই ম্যারাথন রেসে তিলক আর তার বউ যেন অনবরত ছুটছে। তিলক যতই আগে ছুটতে চাইছে, ততই সে পিছিয়ে পড়ছে। এভাবে তাকে হারিয়ে দিয়ে তিলকের বউ বিজয়িনীর হাসি নিয়ে যেন তিলককে বলছে, বোকা, বোকা, বোকা…।
তিলক ভাঙা মন নিয়ে তাসের আসরে বসে। কিন্তু এখানেও সে হেরে যায়। বিবিহীন তাসের আসরে ওর যেন সব গোলমাল হতে থাকে। রান্নাঘর থেকে তখন ভেসে আসে, তিলকের বউয়ের অজস্র কথা আর হাসির টুকরো। লাহিড়ীর বউয়ের রিনরিনে গলা।…