রুবাইয়াৎ – ০১
১
বিজন বনে জীর্ণ ঘরে একখানা বই কবিতার
সান্কি ভরা পান্তা দিও কলসি ভরা মদের খার
আমার সাথে গাইবে যদি পল্লীগীতি সন্ধ্যা পর-
সেটাই আমার স্বর্গ হবে নিজের গড়া জীর্ণ দ্বার।
২
যখন তুমি ঘুঙ্গুর পায়ে নাচবে সবার মাঝ
ঘুরবে মাঠে দেখবে সবাই তোমার যতো সাজ
টুকটুকে সেই চরণ যখন ছুঁবে আমার ঘাট
হঠাৎ করেই উল্টে দিও তোমার হাতের তাজ।
৩
আমার কাছে জানবে তুমি দুনিয়ার তত্ত্ব জ্ঞান
স্রোতের মাঝে আছি আমি শেওলা সম বিদ্যমান
জানি না তো কোথায় যাবো বাতাস বয় কোন দিকে
জানি না তো স্রোতের গতি কোন বা পথে বহমান।
৪
এক লহমা সময় আছে ধ্বংস হতে তোমার হাতে
এরই মাঝে ভোগ করে নাও দুনিয়াদারী একসাথে–
সন্ধ্যা দেখো আসছে তেড়ে দম নেবার সময় নাই
সকাল বেলা ধরতে হবে খেয়া তরী সবার সাথে।
৫
দরজা চিনি খুলতে নারি সে কথা কেউ জানো না
কোথা আছে আমার সাথী তাকে আমি দেখছি না
তোমার আমার গোপন কথা আছে আমার এ ঘটে
তুমি আমি কোথায় থাকি সে কথা কেউ জানে না।
৬
খোদা যদি মত নিত মোর জন্ম মৃত্যুর ব্যাপারে
সাথে সাথেই বিদায় দিতাম জন্মদিনের আসরে
যদিও আমার আছে কিছু না-জানা সব পাপাদি
তাইতো আমি জানছি আজি জন্ম আমার রিক্তরে।
৭
আমায় যিনি গড়েন তিনি পুতুল গড়ায় সিদ্ধ
আপন মনে গড়ে তিনি যদিও বেজায় বৃদ্ধ
নষ্ট সৃষ্টি ফেলেন ভেঙে ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’
নিজের মনে গড়েন যিনি নন তো তিনি বদ্ধ।
৮
আমার কাছে শোন এখন এই দুনিয়ার তথ্যজ্ঞান
সণ্ড নামে এক ষাঁড়ের ঘাড়ে জগবন্ধু করেন ধ্যান
ছুটছে দেখো আকাশ পথে সপ্তঋষি আর জুপিটার
কিন্তু দেখো ফাঁক কতো আমার বাড়ি বা গোরস্থান।
৯
আমার সাথী বলেন হেঁকে শিরদাঁড়াটি খাড়ে করে-
আমার মাটি বেজায় খাঁটি ঘরে আমি যাবো ফিরে
যিনি গড়েন ভুলের বসে তাকে আরো শুধতে হবে
মনে মত হয়নি বলে ভাঙবে কেন যারে তারে?
১০
মড়া এবং জ্যান্ত নিয়ে বুড়া আজ খেলছে যেন
ভাল মন্দ না জেনেই সে তাড়া হুড়া করছে কেন
হঠাৎ করে চমকে উঠি উঁকি মারি আমি চারদিকে–
বুঝিনা তো পট পটুয়া ভণ্ড খেলা খেলছে কেন!
১১
হে মোর খোদা কৃপা কর মাটির তৈরি আমারে
নিজের ভুলে তাড়া খেয়ে ঘর করি আজ শহরে
সকল রকম পাপের কাছে আমরা সবাই বন্দিরে
যাবার কালে ক্ষমা করো আমি ক্ষমি তোমারে।
১২
আমার কাছে শোন আজি এই দুনিয়ার তত্ত্ব জ্ঞান
কিছু পাবো দুনিয়া হতে কিছু পাবো বেহেস্তে জান্
নগদ আছে হাতের কাছে বাকীর খাতা বহুদূর–
কালকে কোর্মা নাইবা খেলে আজকে ঘরে পান্তা হান।
১৩
এখন আমি সত্য কাটি এই জীবনের আসরে
ভীত আমি জীবন যখন আস্থা হারায় হাসরে
আশার আলো দেখি আমি মদমত্ত এই ভুবনে-
ঠাঁটা জীবন টুকরো হবে এই দুনিয়ার বাসরে।
১৪
আজকে যাঁরা করেন হিসাব তাদের কথা থাক
কালের জন্য লড়েন যাঁরা তাদের কথা হাঁক
আঁধার রাতে মিনার থেকে হাঁকেন মুয়াজ্জিন-
একূল ওকূল দুকূল গেলো রইল মাঝে ফাঁক।
১৫
আজকে আমি তোমায় বলি বেহেস্তে যে বিষম সাজ
জানি আমি দোজোখ সেথায় ধ্বংসলীলা মরণ তাজ
মধ্যরাতে খুঁজে দেখো তোমার আমার সবার দ্বার
সময় তো যাচ্ছে বয়ে খোঁজো তোমার আত্মা মাঝ।
১৬
বিনয় করে বলি আমি জ্ঞানী গুণী আর বিজ্ঞ-জনে
তোমরা সবাই কোথায় আজ কোন সে বিজনে
কিন্তু সবাই জেনে রাখো বাঁধা আছো সব হাজতে
যেখান থেকে পাবে না কেউ দেখতে তোমার স্বজনে।
১৭
আমার কাছে শোন আজি এই জগতের কেচ্ছা তায়-
বাঘ ভাল্লুক জা বাস করে তুর্কি রাজার আস্তানায়
বীর বাহরাম যে শিকার করতো বন্য গাধা বলবান
সেই শিকারী ঘুমায় আজি মাটির তলার বিছানায়।
১৮
রাজ বাড়ির মিনার কোথা যেথা হতে স্বর্গ ধায়-
রাজা যেথায় ছালাম নিত স্যাঙ্গাতেরই ইসারায়
সেথায় দেখো ঘুঘু বসে ভর দুপুরের করছে রব
নির্জনে তাই কুহ রবে ডাকছে ঘুঘু সে কোঠায়।
১৯
আমার গণা সবার মতো দেখো তারই ফদ্দ
নতুন বছর দেখছ আবার নতুন মুখের হদ্দ;
তাই যদি হয় বছর ঘুরে দেখছি আমি সত্য
রইছে হেথা কালের মড়া আগাম দিনের মদ্দ।
২০
ভোরের ডাকে খোয়াব ভাঙ্গো জেগে ওঠ এ বেলা
মুয়াজ্জিনের ডাক এসেছে করিস না তা অবহেলা
জেগে ওঠ্ ভরিয়ে ফেল সকাল বেলা তোর ঘটি
শোর উঠেছে কাজে যাবার করিস না হেলা ফেলা।
২১
আজ আমি রাতের শেষে করেছি এক মস্ত কাজ
নতুন করে সাদি করতে নিয়েছি এক বিরাট সাজ
পুরোনো সকল যুক্তি তর্ক ফেলে দিয়ে তাই আমি–
খুঁজছি সখা শান্তি আমি ফুটে ওঠা গুলের মাঝ।
২২
তওবা করি রোজ রাতে যাবো না আর পানশালা
জানি না তওবা রাতে ছিলো আমার কোন পালা
মধুর মাসে কাছে ডাকে মদ মদিরা আর সুন্দরী-
দিব্য ভাঙ্গি তওবা ভুলি যাই ছুটে যাই মদশালা।
২৩
সে সব ‘মতে’ তর্ক নাই বিভেদ নাই কোনোখানে
বিভাজনে সে-‘মত’ আজ ভেঙে হলো সত্তুরখানে
একেক শক্তি মম শক্তি ভেঙে করো আজি শতখান
সোনার কাঠি তেমনি রবে তোমার আমার সবখানে।
২৪
ভোর হলো জেগে ওঠ ঊষার আলো দেখবে আয়
মুয়াজ্জিন কাঁদছে যেনো শুনছি আমি দেখবি আয়
সবার খানায় ডাকছে আজি করতে প্রেমের বেসাতি
কাজ কি আজি ডাকা ডাকি ঘুম কাতুরে বৈদ্যে তায়।
২৫
যে বাটিতে মদিরা খাবে আর যে ঠোঁটে চুমু খাবে
থাকবে নাকো সে সব আর যখন তুমি চলে যাবে
ভাবো তুমি নতুন করে আসা হেথা কোন কারণে
দেখবে তুমি কম পাওনি হেথা-সেথা যাহা পাবে।
২৬
বলতে পার ক্ষুব্ধ বালক করবে কি এমন কাণ্ড-
ভাংবে কি সে মদের ঘটি যেখান থেকে পায় পণ্ড
আপন হাতে গড়া মূর্তি করবে কি সে নিজে নষ্ট
ঝরলে গোলাব কলি থেকে ভাংবে কি তার ভাণ্ড?
২৭
হঠাৎ করেই কান্না শুনি লতিয়ে ওঠা সে গুলবাগে
অন্তরাত্মা বলেন হেসে গুলবদনি যে ডাকছে বাগে
আমার প্রীয়া দেখছে বুঝি জীবনের সোনার কাঠি
সে কাঠিতে ঢুকব আমি অনল তলার হৃদয় বাগে।
২৮
নবী তোমার প্রেমে আজকে দেখি বেজায় খাদ
তুর্কীরাজা মদ মদ করে বুনছে তাঁর মরণ ফাঁদ
বুলবুলি আজ গোলাপ বাগে গাইছে মিষ্টি গান-
গলা ফাটিয়ে মাগছে লাল মদিরার তিক্ত স্বাদ।
২৯
সকাল বেলা নাচছে দেখো হাজার গোলাপ ফুল
কোথায় গেলে পাবো আমি কালকের সবুজ গুল
মধুর মাসে সকল দিকে দেখবে আজি নতুন সুর
জ্ঞান গরিমা শক্তির পদে দিবে নাকি বিদায় ধুল।
৩০
দেখছ তুমি! গোলাপ বালা ঘাড় দুলিয়ে বলছে হেসে-
দুনিয়াটা দেখো পড়ছে নুয়ে আমার টানে অবশেষে
ত্বরিত গতি ভাংছে আজি সোনার অঙ্গ সেই সাথে
শুকিয়ে যাবে এই বাগিচা হেসে হেসে অবশেষে।
৩১
সবুজ ঘাসে সাজছে দেখো দুনিয়া ভুবন ভর
নদীর বাঁকে উড়ছে যেনো পাখির ছানা ঊষার পর
সাবধান! আস্তে করে পথ পাড়ি দাও এই বেলা
জানো তুমি ঘুমায় সেথা আমার সাথী সাঁঝের পর।
৩২
আমাদের এই আকাশ যেন উল্টে থাকা গামলা খানা
যার আধারে খাচ্ছি খাবি মরছি-বাঁচছি সবার জানা
শোনো আজি আমার কাছে ভাগ্য বাঁধা তাহার কাছে-
তোমার আমার মরা-বাঁচা জানবে সবই ঘানি টানা।
৩৩
স্বর্গ প্রীতি নরক ভীতি যতোই কিছু দেখছ আজ
একটি কথা সত্য হেথা জীবন সদাই করছে সাজ
একটা কথা সত্য হলেও অন্য সকল মিথ্যা ভান-
জন্ম নিলে মরতে হবে ফুটলে ফুল শুক্বে সাজ।
৩৪
চলো প্রিয়া ছল করে আজ ভাগ্যদেবীর সাথ
হজম করবো সকল দুঃখ সকলে এক সাথ
করবো না আর বন্ধ তাই সে জানালার খাত
নতুন করে গড়বো আমার দুনিয়া এক সাথ।
৩৫
আমরা সবাই লাটিম সম ঘুরছি হেথা বিলক্ষণ
আশার আলো হাতে নিয়ে চলছি আজি সারাক্ষণ
ঘুরছে রবি ছড়িয়ে আলো করছে আবার সাজ
জানি আমি তিনি রাজা ভাঙ্গা গড়া করে সারাক্ষণ।
৩৬
তলিয়ে গিয়ে ভেসে উঠে হয়েছ আজ এক অলুক্ষণে
নামটি তোমার হারিয়ে গেলো কীর্তিমানের ফর্দ থনে
নখগুলি যে আজ প্যাঁচ খেয়ে হয়েছে এক মরণ ফাঁস
লেজ নয় তো দাড়ির বোঝা ফাঁস যেনো বিদায় দিনে।
৩৭
ঘুমের ঘোরে শুনতে পেলাম বলছে যেন কেউ-
গোলাপগুলি হতে পারে সকাল বেলার ফেউ
জেগেই দেখি সাড়া দিতে হাঁকছে যেনো কেউ
জন্ম নিলে মরতে হবে অমর তো রবেনা কেউ।
৩৮
যুবক কালে দেখেছি আর শুনেছি আমি সারাক্ষণ
জ্ঞানী গুণী আর বিজ্ঞ জনে বাহাস করে সারাক্ষণ
পায়না কোনো কূল কিনারা খোঁজে দিকবিদিক
আমিও আছি ঘোরের মাঝে করছি পার দিনক্ষণ।
৩৯
তাদের সাথে বুনেছি আমি গুণের চারা এই বাটে-
নিজের হাতে করেছি আমি চারার সেবা সেই মাঠে
দেখো সবাই সোনার ফসল ছড়িয়ে আছে ভোর বেলা
আমার আসা পানির ঠাঁটে যাবো আমি বায়ুর খাটে।
৪০
দুনিয়াটা আবার যদি গড়া যেতো নতুন করে
বন্ধ করা যেতো আবার ভাগ্য-লিখন সবার তরে
ভাগ্যদেবী লিখত তখন নতুন খাতা নতুন ভাবে–
লিখতো মোদের নাম কিংবা কাটত নিজের তরে।
[মূল ইংরেজী অনুবাদক – Edward Fitzgerald
বাংলা অনুবাদক – মোহাম্মদ আতাউর রহমান]
রুবাইয়াৎ – ০২
১
খাজার কাছে আমার আছে একটি মাত্র আর্জি
ছাড়ো আদেশ করো দোয়া যদি বা হয় মর্জি-
আমার চলা সাদামাটা তোমার হাঁটা বাঁকা
লাগাও চশমা ধোঁয়া চোখে মুক্তি দিতে আর্জি।
২
আমার আগুন দেয়না ধোঁয়া মেঘ করে না এ বাটে
আমার পেশায় মজুদ আছে মুনাফা নাই এ ঘাটে
ভাবেন যিনি মদ পিয়াসী জানেন তিনি আমারে
সত্য করে বলতে গেলে পানশালা নাই এ বাটে।
৩
পুরানো সে মদের দোকান আজকে আমার ঠিকানা
বাঁধা আছে সেথায় আমার মন-মন-আত্মা সবখানা
সুখের আশা বিদায় দিয়ে ভয় ভীতিকে বন্দীর রেখে-
যাচ্ছে ভেলা আকাশ পাতাল উজান বেয়ে অজানা।
৪
তোমার কাছে খবর নাই মুক্তি আছে কোন কাননে
তোমার জানা নাই মুক্তা ছাপা কে দেয় কোন বিজনে
পরের মুখে শুনবে এথায় প্রেমের কথা গল্পো ছলে
কল্পো কথা সকল সময় পাবে যে তুমি অন্ধ জনে।
৫
আমি জানি সেথায় আছে দারুণ এক রহস্য বাঁকা
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ গল্পো সেটা বন্ধ থাক
আমার বিশ্ব ধোঁয়ায় ভরা খুলতে নারি তাহার ঢাক
কোথায় আমার চন্দ্রকুঠির সে কথাটা গোপন থাক।
৬
কোরান মজিদ করছে নাজিল মস্ত একটা ফরমান
রজব এবং শাবান মাসে নিষেধ আছে মদ্য পান
আল্লা রাছুল বলেন হেঁকে দুটি মাস মোদের দান
সিয়ামেরই রমজান মাসে করবে শুধুই মদ্যপান!
৭
শুক্রবার যে জুমার নামাজ মুসলমানদের তর
ঘটি ভরে পান করো মদ ক্ষণিক যখন অবসর
করবে যদি মদ্য পান এক পেয়ালা অন্য বার
করবে পান দুই পেয়ালা আজ যখন শুক্রবার!
৮
যখন যেথায় দেখবে তুমি গোলাপ বাগের ঝাঁক
জানবে সেথায় বইছে সদাই রক্ত গঙ্গার বাঁক
যেথায় পাবে থোকা থোকা গোলাপ কুঁড়ির তাক
জানবে সেথায় তিল বদনী ডাকায় তাহার নাক
৯
আমার ঘটে দেখছে যে মন্দ সে তো তরল চুনি
মদের ঘটি দেহ যে তাঁর মদ তো আত্মা শুনি
কেলাস মতো পেয়ালা যে হাসছে সফেদ পানি
লুকিয়ে আছে আজ রক্ত ঝরা হৃদয়খানি জানি।
১০
খৈয়ামের খ্যাতির পরে দুনিয়া রবে অনুক্ষণ
খ্যাতির সাথে নাম তার বিলীন হবে বিলক্ষণ
অকাল সময় দৃষ্টি মোদের থাকবে অন্যখান
জন্ম মৃত্যু কখন হবে সুতায় বাঁধা বিলক্ষণ।
১১
আশার পিছে ঘুরে ঘুরে জীবন হলো অচল
এথায় জীবন আছে আমার তিলের সমান সচল
ভাবনা এখন জীবন আমার হবেনা আবার সচল
যতোক্ষণ না ভাগ্য আমার দারুণ ভাবে সচল।
১২
দুনিয়াটা ব্যর্থ যে তাই খুঁজছি তোমায় সকল বাট
ধনী কিংবা দুঃস্থ জনে পায়না খুঁজে তোমার হাট
যদিও তুমি দোরের গোড়ায় শুনি না তোমার ডাক
আমরা সবাই অন্ধ তাই দেখি নাতো তোমার ঘাট।
১৩
জানবে তবে হারবে যেথা মদের হাটের খাজা
সেথায় আছে বদের হাঁড়ি ইতর জনের রাজা
রাতটি ভরে দেবে তোমায় ইতরামি আর সাজা
জানবে তবে চাইবে ক্ষমা পরের দিন সে খাজা।
১৪
তাকে যদি পেতে চাও ছাড়ো দারা-পুত্র-পরিজন
জেগে ওঠ ছুড়ে ফেলো জীবনের সকল প্রয়োজন
জীবন বন্ধন রোধে ঝেড়ে ফেলো সকল প্রিয়জন
জেগে ওঠ ঝেড়ে ফেলো আজ সকল আয়োজন।
১৫
জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞ জনে জীবন তোমার করবে দান
মূর্খ লোকের সঙ্গ ত্যাগ জানবে সেটা সত্য জ্ঞান
বিজ্ঞ জনের গরল দান এক নিমেষে করো পান
কিন্তু বোকার ওষুধ দান করো সদাই প্রত্যাখ্যান।
১৬
পাখির মতো উড়ে এসে বসে হেথা করি এক ধ্যান
দিনে দিনে ভাবি হবে মনের মতো কোনো এক যান
পাইনি যদিও কাউরে আমি যার আছে সকল জ্ঞান
তাইতো আজও তাকিয়ে আছি সেই যে পথের পান।
১৭
আশার আলো পাবো বলে চুমু দেই মদের ঘটে
গোপন পথের দিশা পাবো জানি যে তোমার তটে
আমার ঠোঁটে বিলীন হয়ে বলে সে যে চুপিসারে-
পান কর! যাবার পর ফেরে না কেউ নিজের তটে।
১৮
কি আছে কি নাই সেসব তো আমার জানা ভাই
জ্ঞান গরিমা বুদ্ধি সুদ্ধি উঁচু নিঁচুর মধ্যে তাহা পাই
জ্ঞান বুদ্ধি হাসি খুশী বিদায় দেন তখন তিনি ভাই
মদের ঘোরে ঘোরের তিনি উচ্চ-ভবে পৌঁছে সাঁই।
১৯
তোমার কোনো সরম নাই কি বলেছ পাপের কথা
দেওয়া পাপ নেওয়া পাপ সকল পাপ পাপে গাঁথা
জিতবে যেথা ছাড়বে সেথা সকল কভা জানবে সেথা
সঙ্গে কিছু নারবি নিতে নিয়ম কানুন জানবে হেথা।
২০
সকল কাজে করব যে খেদ কিন্তু নারি মদে ছেদ
সকল কাজে বিধান দেবো কিন্তু মদে আছে ভেদ
তেমন হলে হবো কি আজ খাঁটি একটি মুসলমান
ছাড়ব আমি মদের নেশা তাতে আছে বিষম খেদ।
[মূল ইংরেজী অনুবাদক – E. H. Winfield
বাংলা অনুবাদক – মোহাম্মদ আতাউর রহমান]