সিগ্রেটে লম্বা টান দিয়ে, সিগ্রেটটা বাচ্চুর হাতে হাতে দিয়ে থোকা খানিক গ্যাট হয়ে বসে থাকে। তারপর বলে, রংবাজি আমরা আর করতে পারমু না। আইজকাইল পিচ্চি পোলাপানরা সব রংবাজ। অগ লগে চান্স পামু না। আমাগো রংবাজির দিন চইলা গেছে। আইজকাইল রংবাজি করতে অইলে চেহারা ফিলিমইস্টারের লাহান অওন লাগে। ভালা ড্রেস পরন লাগে। বয়স কম অওন লাগে। বড় লোকের পোলা অওন লাগে। কোনওটাই আমাগো নাই।
মনজু বলল, সাহস তো আছে।
এ কথায় খোকা রেগে যায়। খালি সাহস দিয়া অয়না রে। আর কী সাহস আছে আমাগো। মহল্লার পিচ্চি রংবাজরা একবার যে আমাগো পিডাইছিল মনে নাই।
সিগ্রেট তখন মজনুর হাতে চলে গেছে। এক হাতে তলপেট চুলকাচ্ছে মজনু অন্য হাতে সিগ্রেট।
.
খোকা বলল, শেষ টানটা দিচ। বাচ্চু বলল, আমাগো কিছু অইব না। এমনেই দিন যাইব। ঠিক তখুনি একটা এ্যাম্বুলেন্স
এসে থামে খোকাদের সামনে।
পেছনের দরোজাটা খুলে যায় এ্যাম্বুলেন্সের। ভেতরে স্ট্রেচারে শুয়েছিল একটা লোক। সঙ্গে বোধহয় তার দুই ছেলে আর স্ত্রী। লোকটাকে নামানোর আগে ওই তিনজন নামে। চেহারা উদভ্রান্তের মতো তাদের।
লোকটাকে হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যেতেই খোকা আবার সিগ্রেট ধরায়। বাচ্চুকে বলে, আবে বাচ্চু আর তিনখান সিগ্রেট বানা। স্টারের প্যাকেট থেকে তিনটি সিগ্রেট বের করে বাচ্চু আবার কাজে লেগে যায়।
মজনু বলল, হালায় কত মানুষ আহে হাসপাতালে!
বাচ্চু দুহাতে পাকিয়ে পাকিয়ে সিগ্রেটের সুকা বের করতে করতে বলল, অসুখ অইলে আইব না।
খোকা গম্ভীর গলায় বলল, আমাগোও তো অসুখ। তাইলে আমাগো কেউ হাসপাতালে নেয় না কেন?
এই যে হাসপাতালের সামনে আমরা বইয়া রইছি, কোনও ডাক্তার আমাগো দেখে না। চোখের সামনে এতডি রুগী বইয়া রইছে দেহে না হালারা?
মজনু খিক করে হেসে বাচ্চুর দিকে তাকায়। আবে বাচ্চু খোকার তো অইয়া গেছে। বাচ্চু কোনও কথা বলে না।
খোকা বলল, কী অইছে? আবে মইজনা কী অইছে আমার।
বাচ্চু ম্ভীর গলায় বলল, মাল দিচ খোকা। চান্সে বেবাকটি একলাই মাইরা দিচ না।
মজনু বলল, আমার খাউজানিডার একটু চিকিৎসা অইলে বাইচা যাইতাম।
সিগ্রেটে লম্বা আরেকটা টান দিয়ে খোকা বলল, খাউজানি তর একলা নি। আমাগো বেবাকতেরই তো। তারপর সিগ্রেটটা বাচ্চুর হাতে দেয়। মজনু বলল, হ, চিকিৎসাটা বেবাকতেরই দরকার।
বাচ্চু বলল, কিয়ের চিকিৎসা?
খাউজানির।
খোকা এবার বেশ জোরে চেঁচিয়ে ওঠে। আমাগো অসুখ খালি খাউজানি নি। শইল্লের পুরা রক্ত বরবাদ অইয়া গেছে। আত্মা বরবাদ অইয়া গেছে। মন চরিত্র বেবাক বরবাদ অইয়া গেছে। বেবাক কিছুরই চিকিৎসা দরকার আমাগো। সিগ্রেটটা মজনুর হাতে দিয়ে বাচ্চু বলল, রতনা হালায় তো ভালা অইয়া যাইব। ওয়াস দিয়া বেবাক পরিষ্কার কইরা হালাইছে ডাক্তাররা। খোকা বলল, খালি পেটখান পরিষ্কার অইব রতনার। স্লিপিং ট্যাবলেট খাইছিল হেইডা পরিষ্কার অইব। ওইডা তো আর আমাগো অসুখ না। রক্ত, আত্মা, মন, চরিত্র বেবাক যদি ওয়াস দেওন যাইত তাইলে আমরা ভালা অইয়া যাইতাম। জীবনডা অন্যরকম অইয়া যাইত আমাগো।
বাচ্চু বলল, আমাগো লাহান অসুখ দেশের বেবাক মাইনষেরই। পুরা জাতির। চিন্তা করণ যায় এই অসুখ লইয়া চইলাফিরা বেড়াইতাছে মাইনষে! রংবাজি করে, প্রেম করে, মাল কামায়, পলিটিক্স করে। কোনও ডাক্তার আমাগো চোখে দেহে না। পুরা জাতিটা হাসপাতালের সামনে বইয়া রইছে। কোনও চিকিৎসা অয় না।
শুনে খোকা আর মজনু ভাবে, গাঁজায় নেশাটা বাচ্চুকে খুব ধরেছে। ওরা খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকে। কেউ দেখে না হাসির আড়ালে ওদের চোখে ছিল, বুকে ছিল শতাব্দীর ক্রন্দন।