এক জন চটপট তীরে উঠে পড়ল। তার সঙ্গীটিও সেই চেষ্টা করল বটে, কিন্তু তার চেষ্টা সফল হল না।
বিদ্যুৎবেগে আনাকোন্ডা লোকটির পা কামড়ে ধরল। পরক্ষণেই ফঁসের দড়ির মতো দুটো মারাত্মক কুণ্ডলীর বন্ধনে বন্দি হল হতভাগ্যের দেহ… একটা কাতর আর্তনাদ শুধু… তারপর সব শেষ….
নৌকোর উপর বসে গুলি চালাতে নিষেধ করে সার্জেন্ট পাবলো। কারণ সাপটাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে নাগপাশে আবদ্ধ জিরোর গায়েও গুলি লাগার সম্ভাবনা। কিন্তু যখন দেখা গেল, হতভাগ্যের মৃত্যু হয়েছে, পাবলো তখন গুলি চালানোর আদেশ দিল। শ্বেতাঙ্গ সৈনিকদের চার-চারটে রাইফেল অগ্নি উর করে গর্জে উঠল। ইয়াম্বো মাঝিবা বৈঠা ফেলে তুলে নিল বর্শা…
রাইফেলের গুলিতে জর্জরিত সর্পদানবের দেহে বিধে যায় দুদুটো বর্শা… বিকট হাঁ করে শিকারিদের আক্রমণ করার উপক্রম করল আনাকোন্ডা। সঙ্গে সঙ্গে আবার গর্জে উঠল সব কটা রাইফেল… এইবার মর্মস্থানে আঘাত পড়েছে বোঝা গেল। দারুণ যাতনায় পাক খায় আনাকোন্ডা। নদীর বুকে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলে তার সুদীর্ঘ লাঙ্গুল নিষ্ফল আক্রোশে আছড়ে পড়ছে বারংবার…
ধীরে ধীরে থেমে গেল দানবের অন্তিম আস্ফালন। জিভারোরা তাদের সঙ্গীর মৃতদেহটা উদ্ধার করল সৎকারের জন্যে। আনাকোন্ডার মারাত্মক আলিঙ্গনের কঠিন পেষণে হতভাগ্যের অস্থি-পঞ্জর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
নিহত সাপটার মাথার একটু পিছনে একটা শক্ত দড়ি বেঁধে নৌকোর পাশে সেটাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হল। এক নম্বর ক্যানো নৌকোটা পথ দেখিয়ে এগিয়ে চলল আর তার পিছনে চলল দুই নম্বর নৌকো। দ্বিতীয় নৌকোটা দৈর্ঘ্যে আঠারো ফিট। আনাকোন্ডার মাথাটা বাঁধা হয়েছে এই নৌকোর সামনে, আর পিছনে নৌকো ছাড়িয়ে আর প্রায় ছয় ফিট আন্দাজ ভাসছে তার লেজের দিকটা!
সত্যিকারের এক সর্পদানব!
দুঃখের বিষয়, সাপটার শারীরিক স্থূলত্বের ও দৈর্ঘ্যের সঠিক মাপ নেওয়া শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
কারণ কী?
কারণ হচ্ছে- পিরানহা!
দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন নদীতে ঘুরে বেড়ায় এই পিরানহা নামক মাছের ঝাঁক।
অনেক পর্যটক ও শিকারি শরীরে ক্ষত থাকলে পিরানহার ভয়ে জলে নামতে সাহস করেন না। কারণ রক্তের ধারা জলে পড়লেই পিরানহা মাছ দল বেঁধে সেখানে ছুটে আসে এবং খুরের মতো ধারালো দাঁতের আঘাতে শিকারের দেহ ছিন্নভিন্ন করে বীভৎস ভোজসভা বসিয়ে দেয়।
অবশ্য শরীরে ক্ষত না থাকলে অধিকাংশ সময়ে নিরাপদে নদী পার হওয়া যায়, কিন্তু জলে রক্ত পড়লেই মুশকিল। বর্শা ও রাইফেলের গুলি আনাকোন্ডার দেহে অনেকগুলো রক্তাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। সেই রক্তের নিশানা ধরে ছুটে এল এক ঝাক পিরানহা মাছ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আনাকোন্ডার প্রকাণ্ড শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলল খুদে রাক্ষসের দল!