তোমার মুখটা দেখতে ইচ্ছা করলো। বুলার জন্যে তার মায়া হয়, হাজার হলেও মেয়েমানুষ, এভাবে কথা না বললেই পারতো। কিন্তু তাকে চুমুও খায়না। মেরামত করার চেষ্টা করে এইভাবে, তোমার গালের রঙ এতো সুন্দর।
চোখ বন্ধ করে বুলা হাসে, তারপর?
জাহাঙ্গীর একটানা কথা বলে। মেয়েটির সঙ্গে সে দু’একবার চাইনিজও খেয়েছে। কিন্তু মেয়েদের মন বুঝে চলা তার স্বভাবে নেই। সে ছিলো কলেজের এ্যাথলেটিক সেক্রেটারি, কতো ছেলে কতো মেয়ের সঙ্গে তার মেলামেশা করতে হয়। একটি মেয়েকে নিয়ে হিপ-হিপ তাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। অথচ দ্যাখো মেয়েটোর সঙ্গে এমন কিছু মাখামাখি হয়নি। তার বড়ো ভাই ছিলো জাহাঙ্গীরের বন্ধু, একদিন এসে বলে, দ্যাখ তো আমার বোনটা ভর্তি হতে পাচ্ছে না, দেরি করে ফেলেছে, দে না তোদের কলেজে ম্যানেজ করে। তা সে হলো কলেজের এ্যাথলেটিক সেক্রেটারি, প্রিন্সিপ্যালকে গিয়ে বলে সার, খেলাধুলা করে, এই মেয়েটাকে চাই। নাজমা তো অবাক। জাহাঙ্গীরকে ডেকে ‘আমি খেলাধুলা করি আপনাকে কে বললো?’ জাহাঙ্গীর বলে, নাজমা
সেদিন না বললে পারভীন? বুলা হঠাৎ বাধা দিলে জাহাঙ্গীর দমে যায়।
পারভীন? ও এর কথা বলছি?
বলোনি? বলোছো। আগে তোমার হিপ-হিপের কথা বলো। আমার ঘুম পাচ্ছে।
এইসব গল্প শুনতে তার ঘুম পায়? জাহাঙ্গীর একটু থেমে ফের শুরু করে। তারপর অনেকদিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না। মাস তিনেক আগে জাহাঙ্গীর খুব স্পীডে ভেসপা চালিয়ে রামপুরা যাচ্ছে, মালীবাগে পুলিশ বক্সের ভেতর থেকে একদল মহিলা-পুলিশ ট্রাকে ওঠার জন্যে বেরিয়ে আসছে। এদের একজন হঠাৎ তার দিকে বাঁশি বাজিয়ে হাত তোলে। ভেসপার ব্রেক কষতেই সামনে এসে বলে, এতো ওভারটেক করতে চান কেন? দেখি লাইসেন্স। দেখি। মহিলা-পুলিশের ধৃষ্টতা দেখে জাহাঙ্গীরের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। কি সাহস। চোখমুখ লাল করে জাহাঙ্গীর তার দিকে তাকালে পুলিশ ফিক করে হেসে ফেলে। আরে এ তো শালার সেই হিপ-হপ হ্বরে।—কি জাহাঙ্গীর, কোথায় যাবে?— বুলা একটু সংশোধন করার জন্যে উসখুশ করে। কারণ এর আগে গল্পটা বলার সময় সংলাপে মেয়েটি জাহাঙ্গীরকে জাহাঙ্গীর ভাই বলে সম্বোধন করেছিলো এবং তাকে আপনি করে বলেছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীরের বাক্যবেগে বাধা দেওয়া যায় না। তার বাক্যধারা তুমুল প্রবাহিত হয়, আমি জিগাই তুমি?—আমি তো পুলিশে ভর্তি হইছি। খুব ভালো। তুমি কৈ যাও? জানো তোমারে আমি এক্ষুণি এ্যারেস্ট করতে পারি।–তা তো পারোই, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে এ্যালিগেশন কি? —চলল, তোমার সঙ্গে যাবো, যাইতে-যাইতে বলবো। — তারপর সে করেলা কি আমার পেছনে উইঠা আমারে জাপটাইয়া ধরলো। বুলা এখানেও তাকে একবার থামাতে পারতো। পরশুদিন বলার সময় এই পর্যন্ত ছিলো, চলেন, আপনার সঙ্গে যাবো। কিন্তু জাহাঙ্গীর তাকে নেয়নি, না, আজ একটু কাজ আছে, আরেকদিন আসবো। জাহাঙ্গীর তাকে রেখেই স্পিডে মোটর সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন জাহাঙ্গীরকে থামানো অসম্ভব।
আমারে কয় তোমার বিরুদ্ধে এ্যাবস্কণ্ডিং হওয়ার এ্যালিগেশন। তোমাকে আমি সব জায়গায় খুঁজি।–কেন? কেন আবার কি? তোমাকে চাই। আবার কি আলো জ্বালাবে? বুলার মুখটা দ্যাখা যেতো। কিন্তু সুইচে হাত দেয়ার আগেই বুলার মিহি স্বরের নিশ্বাস শোনা যায়। আরে, এ তো ঘুমিয়ে পড়েছে তার পাতলা ফর্সা রোগা হাতটা জাহাঙ্গীরের ঘোড়ের ওপর আলগোছে রাখা। হাতটা ধরে জাহাঙ্গীর পাশে রেখে দেয়, নিজেও শোয় একটু দূরে সরে। এই মেয়েটা স্বামীর প্রেমের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে কি তার কোনো মনোযোগ নেই। জাহাঙ্গীরকে সে কি কোনো পাত্তাই দেয় না। তার ধারণা কি এই যে জাহাঙ্গীর সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে?–কেন, জাহাঙ্গীর কি মিথ্যাবাদী? চাপাবাজ? কেন, এরকম ভাববে কেন? জাহাঙ্গীর কি প্রেম করতে পারতো না? কিংবা কোনো মেয়েই তার প্রেমে পড়বে না? জাহাঙ্গীর উঠে বাথরুমে যায়। ফের এসে খাটের ধারে বসে থাকে। মনে হয় একা একা শুয়ে থাকাটা অনেক আরামের। এইটুকু সেমি-ডবল খাট, সেখানে দুজন ঘুমানো? বিশি।–কাল ভোরবেলা বেরিয়ে যাবে, সারাদিন, এমন কি রাত্রি পর্যন্ত অফিসের কাজ করবে। কতো কাজ বাকি পড়ে আছে। বায়তুল মোকাররম-গুলিস্তান এলাকার বড়ো দোকানদাররা দেশি ফার্মের ওষুধ রাখতে চায় না। তাদের কনভিন্স করা দরকার। ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিন দিন তার ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছে, অর্ডার আসেনা কেন? কবীর অর্ডার আনে, বেলাল অর্ডার আনে, তুমি করো কি? কবীর কি বেলাল তো তার মতো এরকম এলিয়ে পড়েনি। সকাল নেই বিকাল নেই রাত নেই—বৌয়ের সঙ্গে ম্যাদামার্কা ছেলেদের মতো দিনরাত কেবল ফুসুর ফাসুর করবে তোতা অর্ডার আনবে ওর কোন বাবা?— তাও যদি মেয়েটা ওকে বিশ্বাস করত। তা বুলা ওকে বিশ্বাস না করলে সে কি করত পারে? দোষ তো শালার মহিলা পুলিশের। হিপ-হিপ-হ্বরে যদি সত্যি-সত্যি ওকে ডেকে একটু কথা বলতো তা হলে বুলা কি অবিশ্বাস করে এতো সহজে পার পায়। হিপ-হিপ-হুররে কি তার সঙ্গে পড়তো না? তার কি এই মেয়েটিকে হিপ-হিপহুররে উপাদি দেয়নি? তবে? —অবশ্য কলেজে পড়তে কোনো মেয়ের সঙ্গেই জাহাঙ্গীরের কথাবার্তা হয়নি।, হিপ-হিপের সঙ্গেও হয়নি। তো, পুলিসে পরিণত হওয়ার পর কথা বললে মেয়েটার কি এমন ক্ষতি হতো?