বিকল্প
কাফন ছাড়াই লাশগুলো সব
করছ দাফন কি?
ছেঁড়া কাঁথা কলার পাতা
মন্দ কাফন কী!
বিবেচনা
ঠগ বেছো না, ঠগ বেছো না,
এ-গাঁয়ে ভাই ঠগ বাছাটা বারণ।
এক নিমেষে উজাড় হওয়ার
ভয়টা হ’ল ঠগ না বাছার কারণ।
বেচাকেনা
বিকোচ্ছে তো অনেক কিছু
এই শহরে, দূরের গ্রামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
হাঁড়িকুড়ি, কলসি, ঘটি,
আলমারি আর চৌকি, চুলো
হর-হামেশা কিনছে সবাই
কিনছে তুলো, কিনছে কুলো।
মাছের ঝাঁকা, ফুলের ঝুড়ি,
দাঁড়ের পাখি, ফুলের চারা
এক নিমেষে হচ্ছে উধাও-
হচ্ছে খালি বাজার-পাড়া।
এই নিয়ে যাও পুতুল জোড়া,
কাঠের ঘোড়া তোমার নামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
ডজন চারেক কিনবে গুণী?
বিকোন তাঁরা ডানে-বামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
ভিয়েতনাম
দিন-দুপুরে ওমা!
ফেললে কারা বোমা?
মেকং নদীর দেশে
হুট করে ভাই এসে
গোল বাধাল কারা?
বর্গি নাকি তারা?
ফসল হল ধুলো,
পুড়ছে শহরগুলো-
কী যে তাদের নাম?
কোথায় ওদের ধাম?
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বাজপাখিদের মতো
উড়ছে বিমান শত
শহর এবং গ্রামে,
উড়ছে ভিয়েতনামে।
বাজপাখিরা জেনো
পণ করেছে যেন
ঝাপটা মেরে জোরে
তেড়ে এসে ওরে
ডানে কিংবা বাঁয়ে
তীক্ষ্ম নখের ঘায়ে
উপড়ে নেবে গ্রাম,
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বর্গি বটে তারা।
দিন-দুপুরে যারা
করছে রাহাজানি,
তাদের কাছে জানি
নেই মানুষের দাম।
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
জ্বলছে অবিরত
বারুদ জ্বলার মতো,
জ্বলছে ভিয়েতনাম।
মিনতি
ইঁদুর ইঁদুর ইঁদুর
পায়ে পড়ি,
তড়ি ঘড়ি
চাল খেয়ো না, ডাল খেয়ো না,
মাথায় দেব সিঁদুর।
রূপকথা
আজব দেশের ধন্য রাজা
দেশজোড়া তাঁর নাম।
বসলে বলেন ‘হাঁট রে তোরা’,
চললে বলেন, ‘থাম।
রাজ্যে ছিল সান্ত্রি-সিপাই
মন্ত্রী কয়েক জোড়া।
হাতিশালে হাতি ছিল
ঘোড়াশালে ঘোড়া।
গাছের ডালে শুক-সারিদের
গল্প ছিল কত,
গল্পে তাদের রাজার কথা
ফুটত খইয়ের মতো।
চাষির মাঠে ধান ফলে না,
ফসল গেল কই?
রাজা বলে খাওগে সবাই
রাঙাধানের খই।
রাঙাধানের খই পাব কই,
বলল দেশের প্রজা,
খই ফুরুল, দই ফুরুল,
নেইকো পিঠের মজা।
‘আর কটা দিন সবুর করো’
রাজা বলেন হেসে,
‘ফলবে মেওয়া, সোনা-দানায়
রাজ্যি যাবে ভেসে।
এই-না বলে স্বপ্নে রাজা
দেখেন সোনার ঘোড়া।
প্রজা দেখে রাজার মুকুট
কাগজ দিয়ে গড়া!
শব্দ
শব্দ সে তো জোছনা-নাওয়া নদীর
তীর,
শব্দ সে তো সন্ধেবেলার মেলার ভিড়।
শব্দ সে তো ভর-দুপুরে শঙ্খচিল,
শব্দ সে তো টলটলে ওই পদ্মা বিল।
শব্দ সে তো রাখালছেলের ডাগর চোখ,
শব্দ সে তো চলতি পথে হাটের লোক।
শব্দ সে তো খোকনসোনার চিকন ছিপ,
শব্দ সে তো লক্ষ্মী-মেয়ের লালচে
টিপ।
শব্দ সে তো আয়না-জোড়া নানির মুখ,
শব্দ সে তো নকশি পিঠে খাওয়ার সুখ।
শব্দ সে তো ভরা গাঙের মাঝির হাঁক,
শব্দ সে তো ধর্মঘটের ব্যস্ত ডাক।
শব্দ সে তো পিঠে-বাঁধা নতুন তূণ,
শব্দ সে তো বীর শহিদের তাজা খুন।
শব্দ সে তো দুঃখভরা পথের শেষ,
শব্দ সে তো রৌদ্রমাখা বাংলাদেশ।
সম্পর্ক
রাতারাতি লাল হয়ে যায়
কালোবাজারি
শুনলে পরে হবে ওরা
কয়েক হাজারই।
আইনে বলে, হ্যাঁ গো, কাজটা
ওদের সাজারই।
কিন্তু ওদের সাজা দিলে
রুই কাতলা সবাই মিলে
রেগেমেগে করবে মিটিং
করবে মুখ ব্যাজার-ই।
সেই যে যিনি
সেই যি যিনি বাংলাদেশে পদ্য লিখে
এনেছিলেন বান,
বলতে পার কাদের জন্যে তাঁর
সে-লেখা
প্রাণ-জুড়োনো গান?
বলতে পার কাদের তিনি? বিশেষ করে
কাদের তিনি আজ?
সত্যি বলি, এই কথাটা বলতে পারা
নয়কো সহজ কাজ।
ওই যে দ্যাখো আকাশ জুড়ে সূর্য
থাকেন
আদ্যিকালের বুড়ো-
বিশেষ করে কাদের জন্যে দিন-দুপুরে
ছড়ান আলোর গুঁড়ো?
লাটের বাড়ি, চাষির কুটির-যেখানে
যাও,
সূর্য ওঠে হেসে।
তখন জানি শুধায় না কেউ, তার
ঠিকানা
কোন সে অচিন দেশে?
এপার ওপার সবখানেতে একই রূপে
সূর্য বিলোন আলো।
তার সে আলোর রং ওপারে হলদে হলে
এপারে নয় কালো।
সেই যে যিনি ছিলেন কবি, তাঁর
কবিতার
পাই যে আজো রেশ।
সেই কবিকে ভূগোল দিয়ে যায় না
বাঁধা,
সবখানে তাঁর দেশ।
হাঘরে
দালান ভরা এই শহরে
এক যে ছিল হাঘরে।
সারি সারি বাড়ির দিকে
থাকত চেয়ে হাঁ করে।
থাকার মতো ঘর ছিল না
ঘুরত পথে আহা রে!
ভাবত ব’সে যায় না থাকা
বনে কিংবা পাহাড়ে?
এই শহরে সবাই বলে
‘এখান থেকে হটো রে’।
তাই বুঝি সে থাকতে গেল
গাছের ফাঁকা কোটরে।