ট্রেন
ঝক্ ঝকাঝক্ ট্রেন চলেছে
রাতদুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই?
একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়,
মাঠ পেরুলেই বন্।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝনঝনা ঝন্ঝন্।
দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি
দিন কেটে যায় বেশ।
ইশকুলে তো হয় না যেতে,
হয় না খেতে বেত।
মজা ক’রে দেখছে শুধু
পাহাড়, নদী, ক্ষেত।
সন্ধ্যা হ’লেই হয় না খেতে
ধারাপাতের গুঁতো।
হাত থেকে কেউ নেয় না কেড়ে,
ঘুড়ি লাটাই, সুতো।
ঝক্ ঝকাঝক্ ঐ চলেছে
মজার গাড়ি ট্রেন।
খুব মজা হয় এখন যদি
কেউ টেনে দেয় চেন।
থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
একটু কেশে খক্ ।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
ঝক্ ঝকাঝক্ ঝক্।
পশুশ্রম
এই নিয়েছে ঐ নিলো যাঃ
কান নিয়েছে চিলে।
চিলের পিছে ঘুরছি মরে
আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে
কাটছি সাঁতার বিলে।
আকাশ থেকে চিলটাকে আজ
ফেলবো পেড়ে ঢিলে।
দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা,
কানটা গেল উড়ে।
কান না পেলে চার দেয়ালে
মরব মাথা খুঁড়ে।
কান গেলে আর মুখের পাড়ায়
থাকলো কী-হে বলো?
কানের শোকে আজকে সবাই
মিটিং করি চলো।
যাচ্ছে, গেলো সবই গেলো,
জাত মেরেছে চিলে।
পাজি চিলের ভূত ছাড়াবো
লাথি, জুতো, কিলে।
সুধী সমাজ! শুনুন বলি,
এই রেখেছি বাজি,
যে-জন সাধের কান নিয়েছে
জান নেব তার আজই।
মিটিং হলো সিটিং হলো,
কান মেলে না তবু।
ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই
মেলান যদি প্রভু।
ছুটতে দেখে ছোট্র ছেলে
বললো “কেন মিছে
কানের খোঁজে মরছো ঘুরে
সোনার চিলের পিছে?”
“নেইকো খালে নেইকো বিলে
নেইকো মাঠে গাছে;
কান যেখানে ছিল আগে
সেখানটাতেই আছে”।
ঠিক বলেছে, চিল তবে কি
নয়কো কানের যম?
বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি,
পণ্ড হলো শ্রম।
পারবে কি?
আকাশটাকে পালটে দিতে পারবে কি ভাই তুমি?
পারবে কি আজ করতে তাকে নীল্চে কোনো ভূমি?
নয়কো মোটে ঠাট্রা কোনো শোনো আমার নিতে,
করতে পারো নদীটাকে বোনের চুলের ফিতে?
ঐ যে সুদূর আকাশ পারে চাঁদ আছে না শাদা-
মুক্তো তাকে না বানালে খেতাব পাবে গাধা।
পারবে তুমি মেঘগুলোকে বানিয়ে দিতে ভেড়া?
গড়তে পারো মরুর বুকে রঙিন ফুলের বেড়া?
দেখছো তো ঐ নানান গাছের নানা ঢঙের শাখা,
ওদের তুমি করতে পারো ফেরেশতাদের পাখা?
যখন-তখন এক নিমেষে পারবে কি ভাই কেউ
ঘরের ভেতর বইয়ে দিতে দুধ-সাগরের ঢেউ?
তোমরা যদি না পারো কেউ, স’রে দাঁড়াও বোকা,
হেলায় সবই করবে জেনো পাঁচ বছরের খোকা।
ফেরি-অলা
লোকটা ভারি মজার জানি,
হীরের ঝিলিক চোখে।
আজব দেশে ফেরি-অলা,
নাম রেখেছে লোকে।
নেইকো চুড়ি, চুলের ফিতে,
নেইকো খেল্না কিছু।
খালি হাতে ঘুরছে সদা,
লোক নিয়েছে পিছু।
কোন্ খেয়ালে দেখায় শুধু
শূন্য হাতের খেলা!
তারই টানে জুটছে সবাই,
ছুটছে সারাবেলা।
পয়সা ছাড়াই বিলায় কী-যে,
হয় না কিছুই দেরী।
নয়কো মোতি, নয়কো পুঁতি
স্বপ্ন করে ফেরি।
বক মামা
বক মামা, বক মামা
মাছ এনে দাও।
তার বদলে একটি কানা-
কড়ি নিয়ে যাও।
কড়ি দিয়ে তেলে ভাজা
চরে ব’সে খাও।
ঘরে এলে তোমায় আমি
খেতে দেবো কী?
খেতে দেবো চালের কাঁকর,
দেবো ভেজাল ঘি।
বক্তা
একজন আছে লোক
চৌকস বলিয়ে।
তিলকে সে করে তাল
বিদ্যেটা ফলিয়ে।
কী যে বলে রাত দিন
দেখেনাকো তলিয়ে।
বুদ্ধিমান
অমুক পাড়ার তমুক কাজী
গায়ে চাদর চাপিয়ে
গোমড়া মুখে হাঁটেন সদা
সারা পাড়া কাঁপিয়ে।
মগজখানার ওজন ভারী,
দেখতে পারো মাপিয়ে।
মেপে তবু কূল পাবে না,
পড়বে শুধু হাঁপিয়ে।
বিষ্টি এলে তড়াক ক’রে
পথে ওঠেন লাফিয়ে,
গা বাঁচাতে নদীর জলে
পড়েন তিনি ঝাঁপিয়ে।
মামার বাড়ি
যাসনে খোকন যাসনে,
মামার বাড়ি যাসনে।
চাসনে রে তুই চাসনে
খৈ-চিড়ে দৈ চাসনে।
মামার বাড়ি নেইকো মজা,
নেইকো পিঠে, নেইকো গজা।
এই তো নেচে ভোঁদড় বলে,
‘মামার বাড়ি জলের তলে’।
কাক করে কা কা,
মামার বাড়ি খাঁ খাঁ।
কেউ বসে না পুকুর ঘাটে,
ক’মাস থেকে গাঁয়ের হাটে
জন মানুষের বাস নেই।
যাসনে খোকন যাসনে,
মামার বাড়ি যাসনে।
চাসনে খোকন চাসনে,
খৈ-চিড়ে দৈ চাসনে।
দৈ পাবে কই? দুধ নেই।
খৈ পাবে কই? ধান নেই।
কাক করে কা কা,
মামার বারি খাঁ খাঁ।
কেউ বসে না বাসন পেতে,
ক’মাস থেকে মামার ক্ষেতে
বিন্নী ধানের চাষ নেই।
যাসনে খোকন যাসনে
মামার বাড়ি যাসনে।
যদি আমি
মা মণিটার চোখ এড়িয়ে
গলির মোড়ের পুল পেরিয়ে
রোদের সাথে বুক মিলিয়ে
পাখ্না-ভরা রঙ বিলিয়ে
এখান থেকে অনেক দূরে
যদি আমি যেতাম উড়ে
প্রজাপতির মতো,
কেমন মজা হতো?
পাড়ার সবাই গোল থামালে,
বাবা বইয়ে চোখ নামালে
দুপটি করে ঘোর আঁধারে
যেতাম যদি বনবাদাড়ে
রাতটা হলে বেজায় কালো,
যদি আমি দিতাম আলো
জোনাক পোকার মতো,
কেমন মজা হতো?
রাতদুপুরে ঘুম পালালে,
তারার রাণী দীপ জ্বালালে,
দরজা খুলে এক নিমেষে
যেতাম ছুটে দেশ-বিদেশে,
যেতাম যদি ঘোড়ায় চড়ে
টগ্বগিয়ে তেপান্তরে
লাল কমলের মতো,
কেমন মজা হতো?
লোকটা ছিলো
লোকটা ছিল লিকলিকে খুব,
চুল ছিল তার ঝাঁকড়া।
দু’চোখে তার ভাসত শুধু
কুস্তিগীরের আখড়া।
পাড়াটাকে তুলত মাথায়
জোর বাজিয়ে নাকড়া।
বাজার ঘুরে দেখলো যখন
চাল ডাল সব আক্রা,
বুদ্ধি করে চললো খেতে
নীল সাগরের কাঁকড়া।
কাঁকড়া খেতে বিষম খেলো,
ছিঁড়লো যে তার টাকরা।