তারার দোলনায় দীপিতা
দীপিতা রোজ সাঁঝের বেলা
চাঁদ মামাকে ডাকে,
চাঁদ মামা তো অনেক দূরে
নীল আকাশে থাকে।
দীপিতা ওই চাঁদকে দেখে
তা ধিন নেচে ওঠে,
নাচন দেখে চাঁদের ঠোঁটে
মধুর হাসি ফোটে।
নাচের ছন্দে তারাগুলো
দোলনা হয়ে যায়।
দীপিতা ওই দোলনাটিতে
রোজানা দোল খায়।
দীপিতা রোজ ঘুমের আগে
গল্প শুনতে চায়
পরীর দেশের গল্প শুনে
ঘুমের বাড়ি যায়।
ঘুমের বাড়ি নিঝুম বড়,
পরী হাওয়ায় ভাসে,
পরীর পাখায় স্বপ্নগুলো
রঙ ঝরিয়ে হাসে।
তারার মালা
জানি না এই ছোট্র মেয়ে চুপটি ব’সে
আকাশ থেকে কত্ত কিছু শিখছে।
আবার ঝুঁকে কলম দিয়ে শব্দ ঝেড়ে
নক্শা এঁকে কী যেন সব লিখছে।
ছোট্র মেয়ে দীপিতা ওর তুলির কাছে
কী-যেন আজ নতুন কিছু চাইছে,
গাছের পাতার নাচন দেখে দীপিতা খুব
মধুর সুরে মজার গান গাইছে।
দীপিতা এই সাঁঝের বেলা তারার ফুলে
চোখ-জুড়ানো একটি মালা গাঁথছে,
সেই মালাটি পাওয়ার আশায়
সবাই দীপুর কাছে দু’হাত পাতছে।
দীপু তারার মালা থেকে ফুল খুলে আজ
সব শিশুকে হাসি মুখে দিচ্ছে,
ছোট্র, মিষ্টি শিশুরা সব তারার ফুলের
মন-মাতানো অচেনা ঘ্রাণ নিচ্ছে।
দিদাভায়ের ঝুলি
আয় নয়না আয় দীপিতা
তোদের দিদাভায়ের কাছে,
দিদাভায়ের ঝুলির ভেতর
অনেক মজার গল্প আছে।
দিদা তোদের যাবে নিয়ে
সোনার রাঙা বেলাশেষে,
সাত আকাশের ওপারে এক
ডানাঅলা পরীর দেশে।
পরীর দেশে গহীন রাতে
নানা রঙের বসে মেলা,
সেই মেলাতে তোদের মতো
মিষ্টি মেয়ে করে খেলা।
কিন্তু সে দেশ হোক না যতই
মজার খেলার রঙে ভরা,
নেই সেখানে ফুলের আসর,
নেই’ক নদীর ঘাটে ঘড়া।
শোন নয়না, শোন দীপিতা
দেশ আমাদের মায়ের মতো,
তার মাটিতে আমরা সবাই
নিত্য করি মাথা নত
দীপিতা আর মেঘ
দীপিতা রোজ দূর আকাশে
দেখে কত্ত মজার খেলা।
দেখে ওই তো যাচ্ছে ভেসে
আপন মনে মেঘের ভেলা।
কখনও ফের মেঘের কোলে
উঠছে দুলে ছোট্র মেয়ে
রাঙাপাখার পাখি হেসে
দেখছে তাকে চেয়ে চেয়ে।
ওই যে মেঘে যাচ্ছে মেয়ে,
বলতো তোরা যাচ্ছে কে রে?
ডাকছে তাকে ভালবেসে
দীপিতা হাত নেড়ে নেড়ে।
দীপিতা মেঘ-পরীর কাছে
বলছে, ‘ওকে যাও না রেখে।
খেলার সাথী হবে আমার,
করবো আদর কাছে ডেকে’।
মেঘ-পরীরা যায় ভেসে যায়,
মেঘলা পুরীর মেয়ে ভাসে।
দীপিতা মন খারাপ করে-
কোলের মাটির পুতুল হাসে।
দীপিতা তুই যাবি কি আজ
দীপিতা তুই যাবি কি আজ ময়নামতীর মাঠে?
আমার সংগে যাবি এখন পদ্মবতীর ঘাটে?
চাস যদি তুই আনতে পারি পক্ষীরাজের মামা,
আনতে পারি পাষাণপুরীর পরী রানীর জামা।
দীপিতা তুই চাস কি খেতে স্বপ্নমাখা ফল?
তাহলে আয় আমার সংগে খোশ বাগানে চল।
আয় না দু’জন আজকে রাতে তারার দেশে যাই,
তারার কাছে হাতটি পেতে আলোর শোভা চাই।
দীপিতা শোন রাখিস না আর মুখটি করে ভারি
আজকে তোকে যাবোই নিয়ে সবুজ পরীর বাড়ি।
দীপিতার খেলা আর পড়া
দীপিতা এক ছোট্র মেয়ে
আমার কাছে থাকে।
পাখির সুরে সুর মিলিয়ে
‘দাদ্দু’ আমায় ডাকে।
দীপিতা ওর খেলাঘরে
নিত্য করে খেলা,
সেই ঘরে সে বসায় রোজই
পুতুল রানীর মেলা।
খেলার মাঝে ডাকলে ওকে
লাগে না তার ভালো,
রাঙা মুখটি বিরক্তিতে
নিমেষে হয় কালো।
খেলায় খেলায় হামেশা তার
বেলাটা যায় উড়ে।
দীপিতা আর পুতুলগুলো
নাচে গানের সুরে।
পড়ার কথা বললে ওকে
দেয় সে জবাব হেসে-
“অ আ, ক খ সব পড়েছি
মেঘের কোলে ভেসে”।
দীপিতার পাখি
দীপিতা ওর কাঁধে রাখে
ছোট্র পাখি ময়না।
সেই পাখিটা নাচে, হাসে
কিন্তু কথা কয় না।
সেই পাখিটা কেমন যেন,
এমন পাখি হয় না।
রোদের ছটা শরীরে তার
এত্তটুকু সয় না।
দীপিতা তো দুপুর বেলা
ঘরে শুয়ে রয় না।
পাখিটাকে পরায় হেসে
ঝাঁঝাঁ রোদের গয়না।
দীপিতার বায়না
দীপিতা আজ বায়না ধরে
যেতে হবে মেলায়,
লাগে না আর ভালো মোটেই
ঘরে ব’সে খেলায়।
না নিলে ওই মেলায় তাকে
তাড়াতাড়ি আজকে,
লণ্ডভণ্ড করে দেবে
সারা বাড়ির সাজকে।
এসব শুনে ভয়ে সবাই
দীপিতাকে বললো-
‘লক্ষ্মীরে তুই রাগটি থামা’
বলেই মেলায় চললো।
দুই পাখির ঝাঁকে
শহর থেকে অনেক দূরে এক বাগানে
থাকতো সুখে নানা রঙের পক্ষী।
সবাই ওরা সেখানে খুব হেসে নেচে
দিন কাটাতো, ছিল ওরা লক্ষ্মী।
ওরা হাওয়ায় পাখনা মেলে দিনদুপুরে
নীল আকাশে খুশির ছন্দে ভাসতো
দলের সবাই মেঘের সাথে গল্প ক’রে
হর-হামেশা ফুর্তিতে খুব হাসতো।
সহসা সেই পাখির দলের একটি পাখি
নিলো খুঁজে আলাদা এক পক্ষ;
নতুন দলের সঙ্গে জুটে গেল ভুলে
আগের দলের সাথীদেরই সখ্য।
নয়া ঝাঁকের পাখিরা সব ছিল পটু
ঘোঁট পাকাতে এবং এবং ষড়যন্ত্রে।
দলত্যাগী সেই পাখি নতুন দলে জুটেই
দীক্ষা নিলো একটি নয়া মন্ত্রে!
নয়া ঝাঁকের পাখিগুলো হামলা করে
অন্য দলের শান্ত নীড়ের লক্ষ্যে।
হিংসার ঝড়ে নানা রঙের পাখি মরে,
আলো ফোটে ভালো পাখির বক্ষে।
নয়না এবং ‘টইটম্বুর’
নয়না, তোমার সমান বয়সী ‘টইটম্বুর’ আজ
তোমার মতোই পরেছে সে খুব জ্বলজ্বলে এক সাজ।
যখন সে হেসে নেচে নেচে ঠিক আসতো তোমার কাছে,
তুমিও তো তাকে নেচে নেচে ঠিক মেতে মজাদার নাচে।
কত যে দেখেছি সকালে বিকেলে তুমি তার হাত ধরে
নিমেষেই গেছ মেঘের মুলুকে এবং তেপান্তরে।
‘টইটম্বর’ এতটুকু দেরি করলেই তুমি খুব
মুখ ভার করে কষ্টের হ্রদে ঘন ঘন দিতে ডুব।
তোমার হাসির জন্যে জলদি ‘টইটম্বুর’ এনে
ধরেছি তোমার চোখের সামনে, নিয়েছ তুমি তা টেনে
নয়না, তোমার ‘টইটম্বুর’ এবং আমার তুমি
বেঁচে থাকো সুখে যতদিন থাকে আমার জন্মভূমি।