ঝুটের জোরে
কট্ কটা কট্ কট্
কট্ কটা কট্ কট্ বুলি ওদের
কট্ কটা কট্ কট্-
আমরা ছিলাম সবার সেরা
কট্ কটা কট্ কট্।
মোদের ছিল সেরা শাসন
ফট্ ফটা ফট্ ফট্।
এক ঘাটে সব খেত পানি
ফট্ ফটা ফট্ ফট্।
দুধের নহর বইত সদা
ঝট্ পটা পট্ পট্।
হ’ত সবাই মস্ত ধনী
ঝট্ পটা পট্ পট্।
তবু মোদের হয়নি কদর
লট লটা লট্ লট্।
হয়ে গেল ওলটপালট
লট্ লটা লট্ লট্।
আমরা ওদের হটিয়ে দেব
হট্ হটা হট্ হট্।
ঝুটের জোরে ভাগিয়ে দেব
হট্ হটা হট্ হট্।
নেতা
কালো টাকার পাহাড় গড়া
মহাপ্রভুর ধামা ধরা
টাকার জোরে ভোট বাগানো
মিথ্যে কথায় লোক খ্যাপানো
মঞ্চে উঠে বকবকানো
যখন-তখন লোক-ঠকানো-
এইতো আমার কেতা,
মস্ত আমি নেতা।
যা ইচ্ছে তা-ই বলতে পারি
ডান দিকে ভাই চলতে পারি
দিনকে রাত করতে পারি
উলটোরথে চড়তে পারি
নিজের পকেট ভরতে পারি
ছায়ার সাথে লড়তে পারি-
আমি স্বাধীনচেতা
মস্ত আমি নেতা।
আমার পুকুর, আমার খামার,
ঘাতক দালাল মিতা আমার
ধর্ম আমার বিরাট পুঁজি
আলো ছেড়ে আঁধার খুঁজি
আগামী এই নতুন সনে
যে-ক’রেই হোক ইলেকশনে
চাই যে আমার জেতা
মস্ত আমি নেতা।
পটকাবাজি
যাদের ঘরে মুখে দেবার
দু’মুঠো নেই অন্ন,
যাদের কাছে নেইকো কাপড়
শরীর ঢাকার জন্য,
তারা এখন জোরসে ফাটায়
ইয়া বড় পটকা।
বেতারে এই খবর শুনে
মনে লাগে খটকা।
খেলছে ব’সে পাশা খেলা
পোড়া বাজির ভস্মে,
রাতবিরেতে উড়ে বেড়ায়
ছায়ায় গড়া অশ্বে।
বউ-বাচ্চা সব উপোস করে,
নেই যে কোনো চিন্তা,-
পটকা ফাটার আনন্দেতে
নাচে তা ধিন ধিন তা।
আমরা যারা পড়শি তারা
বলছি এ কী কাণ্ড!
নিজের পায়ে মারছ কুড়াল,
মুখে বিষের ভাণ্ড।
করো পাড়ায় আগুন নিয়ে
খেলাটা ভাই বন্ধ,
সব পড়শির প্রাণে বাজুক
মিলনমেলার ছন্দ।
পথে যেতে
পথে যেতে হঠাৎ দেখি
পথের ধারে লোক ছুটেছে।
লম্বা খাটো লোকেরা আজ
সেই দিকেতেই জোর ছুটেছে।
সেখানে আজ ক’টি বাঁদর
নেচেকুঁদে খেল দেখাবে।
ভেংচি কেটে, লেজ নাড়িয়ে
ভিড়কে আজব বোল শেখাবে।
একটি বাঁদর বাঁদরামিতে
বিশ্বরেকর্ড চুর করেছে।
মিছে বুলির ঝুলি ঝেড়ে
গলায় মণিহার পরেছে।
ফুটবল
চামড়া দিয়ে তৈরি জিনিশ
ফুটবলটা গোলই বটে।
ছোট্র জিনিশ, সুনাম তার
দুনিয়া জুড়ে রটে।
দুনিয়া নিজে বলের মতো
দেখতে গোলাকার।
চাঁদের রংটি শাদা, মুখটি
বলের মতোই তার।
এক বল নিয়ে দুটি দলের
বাইশ জনার খেলা।
সবাই জানে খেলার মাঠে
হাজার লোকের মেলা।
জালের ভেতর বল ঢুকলেই
সবাই চ্যাঁচায় ‘গোল’।
সমর্থকের খুশির চোটে
বাজতে থাকে ঢোল।
এই জগতের অনেক কিছুই
এক ধরনের খেলা।
বেঁচে থাকার লড়াই, মরা,
ছড়া লেখাও খেলা।
ফুটবলে ভাই ছড়ার মতো
মজার ছন্দ আছে।
বলটা দেখি পায়ে-পায়ে
এবং মাথায় নাচে।
বন্ধু ওরা
একটি সবুজ টিয়ে পাখি
বসল এসে গাছে।
তাকে দেখে খোকন বলে,
‘বন্ধু এসো কাছে’।
দেয়াল বেয়ে উঠছে দুটি
সোনা রঙের লতা,
বন্ধু জেনে ওদের সাথে
খোকন বলে কথা।
রঙিন কত প্রজাপতি
আসে কাছে উড়ে;
চায় না খোকন রাখতে ওদের
দৃষ্টি থেকে দূরে।
ঐ যে ঘাসে ঘুরে বেড়ায়,
গুব্রে পোকাগুলো,
ওদের খোকন বন্ধু ভেবে
আদর ক’রে ছুঁলো।
খোকন বলে, ‘আমরা সবাই
মিলে মিশে আছি।
থাকলে ওরা নিরাপদে,
তবেই আমরা বাঁচি’।
বানের জুলুম
ঘরের ভেতর কোমর পানি,
থাকব কোথায় আজ?
বানের এমন জুলুম দেখে
মাথায় পড়ে বাজ।
ঠাঁই পেয়েছি দালানকোঠায়
বউ-বাচ্চা নিয়ে।
মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবক
যাচ্ছে রিলিফ দিয়ে।
রৌদ্র পোড়ায়, বৃষ্টি ভেজায়,
পেটে আগুন জ্বলে।
এরই মাঝে হঠাৎ ভীষণ
রোগের খেলা চলে।
ঘর-হারানো মা ব’সে রয়,
কোলে রুগ্ণ ছেলে।
বাঁচবে ছেলে একটু খাবার,
একটু ওষুধ পেলে।
বাড়ছে পানি চতুর্দিকে,
বাঁধও যাচ্ছে ফেটে।
হাত মেলালে সবাই শেষে
বিপদ যাবে কেটে।
বানের পানি
ডানে পানি, বামে পানি,
পানি পশ্চিমে আর পুবে।
তা হলে কি পানির তলে
সারা দেশটা যাবে ডুবে?
পানির তোড়ে ঘর ডুবেছে,
হালের গরু, মুরগিছানা,
ক্ষেতের ফসল সব ডুবেছে,
উধাও চাষির শস্যদানা।
বানের জলে ভেসে গেছে
বাঁশের বাঁশি, পাখির বাসা।
কারও মুখে নেইকো হাসি,
বানের পানি সর্বনাশা।
নদীর পানি সাপের মতো
উঠছে ফুঁসে রেগে মেগে।
এই বিপদে অনেক মানুষ
ঘরের চালে আছে জেগে।
বন্যা যাদের ঘর কেড়েছে,
তাদের জন্যে চাইতো খাবার,
কাপড়, ওষুধ, টাকাকড়ি-
বাঁধবে ওরা ঘর আবার।
বৃষ্টি পড়ে
ভোরবেলাতেই শহর থেকে
পালিয়ে গেল আলো।
আকাশজোড়া মেঘের জামার
রংটি বেজায় কালো
বৃষ্টি পড়ে টিনের চালে,
পড়ে পাকা ছাদে।
বৃষ্টি পড়ে উঠোন জুড়ে,
আকাশ যেন কাঁদে।
পাড়ায়-পাড়ায় ঝমঝমিয়ে
বৃষ্টি শুধু নামে,
কেউ জানে না, সত্যি বলি-
বৃষ্টি কখন থামে।
আষাঢ় শ্রাবণ দুটো মাসেই
কদম ফুলের মেলা,
বৃষ্টি দেখে ছেলেমেয়ের
কাটে মধুর বেলা।
গলির মোড়ে বইছে নদী,
একটু নজর দাও।
ইচ্ছে হ’লে দিতে পার
ভাসিয়ে ছোট্র নাও।
বৃষ্টি যখন ফুলের মতো
ঝরে মাটির বুকে,
তখন সবাই মনে-মনে
দুলতে থাকে সুখে।
বর্ষা যখন রেগে মেগে
ডোবার সবার বাড়ি,
তখন আমরা কষ্টে বলি-
যাক সে তাড়াতাড়ি।