- বইয়ের নামঃ গোছানো বাগান
- লেখকের নামঃ শামসুর রাহমান
- বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র
আমার পাড়া
এইতো আমি বসেই আছি
রাতের বেলা নিজের ঘরে
হঠাৎ মনে হল যেন
শুয়ে আছি একলা চরে।
হচ্ছে কী-যে এখন আমার,
স্বপ্ন দেখি এমন কিছু-
চলতে চলতে চোখে পড়ে,
সর্প যে নেয় আমার পিছু।
আমার পাড়ার সবাই খুবই
ভদ্র এবং শান্তিময়।
এমন মানুষ যায় না দেখা
তাদের গুণের হবেই জয়।
একটা পাখি
বহু দূরের পথ পেরিয়ে, বন পেরিয়ে
এই শহরে আসবে উড়ে
একটা পাখি ভালো।
তার দু চোখে মায়াপুরীর ছায়া আছে,
দূর পাতালের স্বপ্ন আছে,
আছে তারার আলো।
সেই পাখিটা এই শহরে আসবে ব’লে
পথের ধারে ভিড় জমেছে,
সবাই তাকায় দূরে।
চোখগুলো সব আকাশ পারে বেড়ায় ছুটে-
মস্ত রঙিন পাখা নেড়ে
আসবে পাখি উড়ে।
রাঙা ঠোঁটের সেই পাখিটা ঝড়ে-কাঁপা
আকাশ ছেড়ে নামবে পথে,
সবাই নেবে পিছু।
সেই পাখিটা স্বর্গপথের নানান গানে
শহরটাকে করবে মধুর,
বলবে খবর কিছু।
কিন্তু কোথায় সেই পাখিটা? এই শহরে
বাজলো না তার পাখা দুটি;
আকাশ করে ধুধু।
শহরবাসী ক্লান্ত হয়ে ফিরলো ঘরে,
সবাই ঘুমে সেই পাখিটার
স্বপ্ন দ্যাখে শুধু।
কেউটেরা সব
যাসনে খোকা, যাসনে খুকি
আলবদরের ঘরে।
(ওরা) খুন করেছে অনেক মানুষ
এই তো একাত্তরে।
খুনের নেশা যায়নি ওদের
স্বাধীন বাংলাদেশে।
আজো ওরা লোকের গলায়
চালায় ছুরি হেসে।
কেউটে ওরা, যখন-তখন
ফোঁসে ফণা নেড়ে।
একাত্তরের কথা বললে
মারতে আসে তেড়ে।
এমন সবুজ বাংলাদেশে
আর নয়রে খুনের দাগ।
(ওরে) আলবদরের কেউটেরা সব
ভাগরে তোরা ভাগ।
কেমনতরো লোক
লোকটা যেন দেখতে কেমন,
আমি কি ছাই ডরাই?
যখন-তখন লুফে বেড়ায়
লোহার মস্ত কড়াই।
হোক সে যতই বীর বাহাদুর
কেয়ার কবি থোড়াই।
কখন কোথায় ঘুমায় সে যে,
কখন ঘোরে বাউল সেজে,
বলতে পারা সহজ নয়।
যখন হঠাৎ মরজি হয়,
নেচে বেড়ায় তেপান্তরে,
কিংবা বসে বালুচরে।
তার খেলার সঙ্গী চখা,
ময়না, শালিক, চড়াই।
কাজ করে সে হরেক রকম,
একটু বেশি, একটু-বা কম।
রাঙা মেঘে উড়ে বেড়ায়,
খানিক জিরোয় তারার ডেরায়।
লোকটা তবু একরত্তি
করে নাকো বড়াই।
আসলে এই লোকটা, শোনো,
ভয়ের পাত্র নয় সে কোনো,
নিজের সাথেই সকালসন্ধ্যা
করছে শুধু লড়াই।
খোকন লিখবে ছড়া
খোকন সোনা একটা পাখি খুঁজতে গিয়ে
পেয়ে গেল আটটা,
পালকিগুলো ময়ূরপঙ্খি নাও হয়েছে-
নয়কো মোটে ঠাট্রা।
খোকন সোনা সকালবেলা দু’হাতে রোজ
তবলা বাজায় জোরসে।
পাড়ার সবাই তাক ধিনা ধিন তবলা শুনে
চোখে দ্যাখে সর্ষে।
খোকন এখন ঘুড়ি ওড়ায় আকাশ জুড়ে,
হাজার ঘুড়ি ভোকাট্রা।
নানার রঙের পাখির মতো ঘুড়ির মেলায়
ভ’রে গেল মাঠটা।
জ্যোৎস্নারাতে খোকন সোনা দোলনা দোলে,
ঘোড়ারা ঘাস খাচ্ছে।
লাল পরী আর সবুজ পরী আকাশ ছেড়ে
ফুটপাতে আজ নাচছে।
পরীর নাচন দেখবে যদি তাড়াতাড়ি
এই পাড়াতে আসবে।
খোকন সোনা লিখবে কত মজার ছড়া,
তোমরা শুনে হাসবে।
গাছে কুঠার মারচে কারা?
এই শহরের একটু কাছে
ছায়াঘেরা জায়গা আছে,
সেখানে সব গাছের বুকে
নেচে বেড়ায় বেজায় সুখে
ছোট্র কিছু ময়না
ঝগড়া ওদের হয় না।
ময়নাগুলো কিসের ঘোরে
রোজই দূরে শূন্যে ওড়ে
ওদের পাখা বাঁশির মত
সুরের কলি ঝরায় কত
হিংসা ওরা করে না,
কারো সাথেই লড়ে না।
হঠাৎ শান্তি গেলো ডুবে
পশ্চিমে আর ফর্সা পুবে
গাছে কুঠার মারছে কারা?
ময়না সবাই গৃহহারা।
কোথায় যাবে ময়না?
সুখ যে ওদের সয় না।
গোছানো এক বাগান বটে
দেশতো আমার সবুজ দিয়ে
সাজানো এক বাগান বটে,
কিন্তু কিছু খারাপ লোকের
কাণ্ডে দেশের দুর্নাম ঘটে।
আমরা জানি কিছু লোকের
ভণ্ডামিতে হচ্ছে ক্ষতি,
তাদের জন্যে একটুকুতে
চলে দেশের বাজে গতি।
অন্ধকারে দেশ ডুবে যায়,
আলো পাওয়া কষ্ট খুবি,
দুষ্টু কিছু লোকের ফাঁদে
পড়ে আমরা ডোবায় ডুবি।
চাঁদমামাকে বল বানিয়ে
একটি জাদুকর আনিয়ে
চাঁদমামাকে বল বানিয়ে
খেলবে খোকা জ্যোৎস্নারাতে
ডানাঅলা পরীর সাথে।
লাল নীল আর সবুজ পরীর
জ্যোৎস্না দিয়ে তৈরি শরীর?
পরীর গায়ে মেঘের শাড়ি?
মেঘমুলুকে পরীর বাড়ি?
খেলার সাথি খুঁজছে খোকা
আর সে যে বড্ড বোকা!
কাছেই আছেন দাদু ভায়া,
নয় মোটে তার ভারী পায়া।
জ্ঞানে তিনি বিশাল বট,
আছে পায়ে তুখোড় শট।
পেলের মতো ডজ মেরে ভাই
সবার আগে তাঁর ছোটা চাই।
চাঁদমামাকে একটি শটে
পাঠিয়ে দেবেন আকাশ-পটে।
বলবে সবাই বাজিয়ে ঢোল-
গোল হয়েছে, গোল, গোল।
ছোট্র মেয়ে দীপিতা
ছোট্র মেয়ে দীপিতা রোজ
ঘুমায় বেশি, জেগে থাকে অল্প।
হাত-পা নাচায়, ও আঁ করে,
চায় না শুনতে ছড়া কিংবা গল্প।
চাঁদের টুকরো দীপিতা চায়
মায়ের কোলে অস্টপ্রহর থাকতে।
খায় না কোনো শক্ত খাবার,
পারে একটু ডিমের কুসুম চাখতে।
দীপিতা তার দাদাভাইকে
দেখে ভাবে, কেমনতরো লোকটা?
ছোট্র মেয়ে জানে না তো
দাদুর এমন ছড়া লেখার ঝোঁকটা।
নয়না ওর মিষ্টি আপু,
প্রথম শ্রেণীর শান্ত ভালো ছাত্রী।
বইয়ের বোঝা টেনে টেনে,
লেখাপড়ায় দিন হয়ে যায় রাত্রি।
দীপিতা রোজ থাকে মজায়,
হয় না ওকে নিত্য অঙ্ক কষতে।
ছাত-পা নাচায়, হাসে কাঁদে,
টিভি ছেড়ে হয় না পড়তে বসতে।
ছোট্র মেয়ে দীপিতা রোজ
আদর কুড়ায় ছোট বড় সবার।
ঘুমায় যখন মায়ের পাশে,
স্বপ্ন দ্যাখে নীল পরীদের সভাব।