- বইয়ের নামঃ ইচ্ছে হলো যাই ছুটে যাই
- লেখকের নামঃ শামসুর রাহমান
- প্রকাশনাঃ শ্রাবণ প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র
খুকু আর তিনটি পাখি
ভোরের আলোয় গাছে
তিনটি পাখি নাচে।
তাদের নাচন দেখে
খুকু নাচতে শেখে।
খুকু নাচের ফাঁকে
তিন পাখিকে ডাকে।
তিনটি পাখি হেসে
খুকুর সাথে মেশে।
খুকু ক’দিন পরে
ব’সে পড়ার ঘরে
শুনলো শব্দ কী-যে
দেখলো রক্তে ভিজে
গেছে গাছের তলা-
ছেঁড়া পাখির গলা।
তিনটি পাখি নেচে
উঠবে না আর ডালে।
নেই তো ওরা বেঁচে
পানি খুকুর গালে।
খোকা খুকী মনে রেখো
সাঁঝের বেলা নীল আকাশে
ফুলের মতো ফুটলে আলো,
খেলা ছেড়ে খোকা খুকীর
তারার নাচন লাগে ভালো।
পড়ার বইটি ছবিভরা
হলেই ঠোঁটে ফোটে হাসি।
আমরা যারা বুড়োবুড়ি,
তাদের খেলা ভালোবাসি।
এই যে ওরা বইয়ের পাতায়
ছবির সাথে শব্দ দেখে,
নানা শব্দ শিখে ওরা
আরো মজার গল্প শেখে।
খোকা, খুকী মনে রেখো-
শুধুই তারা দেখবে না।
মাটির দিকে চক্ষু মেলে
অনেক কিছুই যায় চেনা।
চাঁদ মামাকে
চাঁদ মামাকে ডেকে খুকী
বলে কিছু চাও কি?
চেয়ে হীরার হারটি সত্যি
হাতে পেয়ে যাও কি?
এই তো দ্যাখো চাঁদের কাছে
আছে মালা ফুলের।
সেই মালাটা মেঘের মাথার
ঢেউ-খেলানো চুলের।
চাঁদ মামাটা দুষ্টু ভারি
মেঘে থাকে লুকিয়ে।
অন্ধকারের দেনা কিছু
দেয় সত্যি চুকিয়ে।
বাদ্যি বাজায় সুরের রাজা
গালটি বেজায় ফুলিয়ে।
সুরের টানে তারার আসর
নাচে মাথা দুলিয়ে।
আমরা ঘুমে দেখছি কত
স্বপ্ন মজার রঙের।
সেসব রঙে জীবন বটে
হয়তো নানা ঢঙের!
চাঁদের দেশে কিছুক্ষণ
শোন্ দীপিতা আমরা দু’জন
উড়ে উড়ে চাঁদের দেশে যাবো।
রাতের বেলা সেই মুলুকে
পৌঁছে গেলে তারার মালা পাবো।
সেই মালাটা তোকে আমি
পরিয়ে দেবো হাওয়ায় ভেসে ভেসে।
তক্ষুণি তোর গলা জানি
তারার মতোই উঠবে বটে হেসে।
শোন্ দীপিতা, আমরা দু’জন
তোর সে গলার মায়াজালে
যাবো ভেসে এক নিমেষে
পরীর দেশে, নাচবো ওদের তালে।
শোন্ দীপিতা, তোর সে হারের
দোলায় দুলে উঠবে নদীনালা।
চোখের পাতা কেঁপে ওঠার
সাথেই শুরু বাড়ি ফেরার পালা।
চোখ-জুড়ানো দ্বীপে এখন
চোখ-জুড়ানো দ্বীপে নানা
ঘর-বাড়িতে মানুষ থাকে।
দ্বীপে আছে গাছ গাছালি,
গাছের ডালে পাখি ডাকে।
শান্ত, মধুর বিকেল বেলা
নেচে ওঠে বধূর গানে।
ছুটে আসে বাচ্চা, যুবা
ভেসে-আসা সুরের টানে
নানা দ্বীপে ছিল সবাই
হেসে, খেলে মুক্ত মনে।
পরস্পরের সুখে দুঃখে
আসতো ছুটে সর্ব-ক্ষণে।
হঠাৎ রাতে ঘুমের ঘোরে
থাকা সবাই ওঠে কেঁপে।
ভাঙা বাড়ি মরণ হয়ে
লক্ষ জনকে ধরে চেপে।
নানা দিকে হাজার ঘরে
ছিল লক্ষ জনের ঠাঁই
হায়রে সবই গেলো মুছে,
কোথাও কোনও চিহ্ন নাই।
জয়ের পথে খোকা
এই যে খোকা গাছের নিচে
খেলছো তুমি মজার খেলা-
এদিকে যে আকাশ থেকে
হুট করে ভাই পালায় বেলা।
জানি তুমি ভয় করো না
থাকতে পারো সত্যি একা,
ভড়কে তুমি যাবে নাকো
হুতোম হঠাৎ দিলে দেখা।
যদি তোমার দেরি দেখে
মায়ের বুকে কাঁপন জাগে,
চমকে তুমি যাবে ছুটে
মায়ের কাছে সবার আগে।
তখন তোমার জয়ের পথে
ব্যর্থ সবাই বাঁধা দিতে;
পারবে তুমি ছুটে গিয়ে
মায়ের বুকে আদর নিতে।
দীপিতার পুতুলের বিয়ে
ছোট্র আমার দীপিতার আজ
পুতুল মেয়ের বিয়ে।
বিয়েতে আসবে বাজনা বাজিয়ে
কবুতর আর টিয়ে।
পুতুল মেয়েকে সাজিয়ে দীপিতা
পোলাও রান্না করে।
বরযাত্রীরা কোরমা, কবাব
খাবে ঠিক পেট ভরে।
রান্না বান্না শেষ হয়ে যায়,
এলো যে সাঁঝের বেলা।
দীপিতা জপছে মনে মনে শুধু-
বিয়ে নয় ছেলে খেলা।
দীপিতার এই মনোভাব দেখে
ছোটে বান্ধবী তার,
ছুটে গিয়ে কাছে বাড়ি থেকে আনে
বরকে পরিয়ে হার।
ছোট্র আমার দীপিতার মুখে
ফুটে ওঠে রাঙা হাসি।
ছোটদের সেই খেলার আসরে
বাজলো বিয়ের বাঁশি।
বানের পানি চতুর্দিকে
হঠাৎ এ কি চতুর্দিকে
উঠলো পানি বেজায় ক্ষেপে,
সকল দিকে পানির গুঁতোয়
ঘর বাড়ি সব উঠছে কেঁপে।
প্রকৃতি হায় কী যে মজা
পাচ্ছে এমন খেলা খেলে?
গাঁয়ে কিংবা শহর জুড়ে
নানান দিকে থাবা মেলে?
বানের পানি চতুর্দিকে
ক্ষুধায় কাঁপে যুবা, বুড়ো,
কাঁদছে শিশু ভাতের জন্যে
ডুবছে জলে ঘরের চূড়ো।
এসো আজকে আমরা সবাই
দাঁড়াই দুখী, সবার পাশে,
কোথাও যেন কাউকে বদলে
যেতে না হয় শীর্ণ লাশে!
বৃষ্টি দিনে
জানলা থেকে হঠাৎ দেখি
আকাশটাকে ধরলো ঘিরে
দোয়াত থেকে উল্টে-পড়া
বড্ড কালো রঙ।
ছিলাম বসে ঘরের কোণে,
সামনে ছিল ক্যারাম বোর্ড।
ছিলাম সবাই খেলায় মেতে,
হঠাৎ একি ডঙ!
আকাশ থেকে ঝরলো দেখি
চোখ ধাঁধানো অগ্নি।
সঙ্গে নামে বৃষ্টিধারা,
ওই অগ্নিরই ভগ্নী।
চতুর্দিকে বৃষ্টি নামে,
শহর নয়, নহর।
রিকশা ডোবে, মোটর ডোবে
ডোবে সারা শহর।
ইচ্ছে হলো যাই ছুটে যাই
বৃষ্টিঘেরা বাইরে-
সবাই মিলে বাদলা দিনের
মজার গান গাইরে।
রক্তরাঙা স্বাধীনতা
পড়ছে মনে অনেক আগের
একটি কথা
পেয়েছিলাম রক্তরাঙা
স্বাধীনতা।
নিজের দেশের মুক্তি আনার
জন্যে সবাই
শক্রর সাথে করেছিলাম
ভীষণ লড়াই।
অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো
ছাত্র, চাষী
আমরা সবাই দেশকে বড়
ভালবাসি।
তাই না কত বীর বাঙালি
প্রাণ হারালো
লুটেরা সব দুশমনকে
ঠিক তাড়ালো।
শহুরে এক ছোট্র ছেলে
শহুরে এক ছোট্র ছেলে
গেলো দূরে গাঁয়ে একা।
বহুদিন আর বেশকিছু মাস
তার সাথে আর হয়নি দেখা।
সেই ছেলেটি সত্যি ছিলো
আমার দুটি চোখের মণি।
তার সে গলার স্বরটি ছিলো
মিষ্টি গানের মধুর ধ্বনি।
সেই ছেলেটা পুত্র আমার
গেলো দূরে খেলার ছলে।
গেলো হঠাৎ আঁধারপুরে
হিংসুটে এক নদীর জলে।
শিশুর মেলা
নতুন গাছে ফুলের হাসি
দেখলে বড় লাগে ভালো।
অন্ধকারে জাগে খুশি
যদি দেখি চাঁদের আলো।
শিশুর মেলা পড়লে চোখে
সবার হৃদয় নেচে ওঠে।
খেলতে ওরা খেলার মাঠে
হাসি মুখে নিত্য জোটে।
শিশুর খেলা নষ্ট করে
যারা হিংসবশে কোনো,
তাদের ভালো, সত্যি বলি,
কখনো ঠিক হয় না জেনো।
তাই তো বলি ছোট্র আমার
ভাই-বোনেরা হাসিমুখে
থাকবে সদাই! তা’হলে ঠিক
সকল সময় থাকবে সুখে।
সবার পানি চাই
করিম বলো, কানু বলো
সবার পানি চাই।
পানি ছাড়া কারুর জানি
বাঁচার উপায় নাই।
মিঠাই বলো, মণ্ডা বলো-
মজার খাদ্য বটে।
কিন্তু যদি না পাই পানি
মস্ত বিপদ ঘটে।
বাঁচতে হ’লে রোজানা ভাই
সত্যি পানি চাই।
নইলে গলা শুকিয়ে ঠিক
হবে ভষ্ম ছাই।
কিন্তু পানি ফেঁপে ফুলে
বাড়তে যখন থাকে,
তখন প্রাণে ধাক্কা লাগে,
বিপদ আসে ঝাঁকে।
সেই ছেলেটা
আচ্ছা খোকা, আচ্ছা খুকী
তোমরা যারা আছো সুখী,
খাচ্ছো দাচ্ছো, খেলছো খেলা
মধুর আলোয় বিকেল বেলা-
যে-ছেলেটা অনেক আগে,
যখন শুধু পাখি জাগে,
ছোটো ঘরের জানলা ধরে
দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টি করে
তাকাতো দূর মেঘের দিকে
হাতের মুঠো থাকতো শিকে।
নাম কী তার, বলতে পারো?
সময় দিচ্ছি সেকেন্ড বারো,
পারলে নাতো? দিচ্ছি বলে
শোনো সবাই ভাল করে কানটি মলে,
সেই ছেলেটা জোড়াসাঁকোর রবি ঠাকুর
তার পদ্য জাগে সত্যি নানান সুর।
সেই ছেলেটা
হুট করে সেই গলি থেকে
ছুট দিলো এক দুষ্টু ছেলে,
সেই ছেলেটা মেতে ওঠে
খেলায় কোনো সঙ্গী পেলে।
সেই ছেলেটা যায় ছুটে যায়
খেলার লোভে দূরের মাঠে,
সঙ্গী সাথীর সঙ্গে খেলে
সময়টা ওর মজায় কাটে।
কিন্তু সাঁঝের অনেক পরে
সেই ছেলেটা ফিরলে ঘরে,
বকা-ঝকা খায় না শুধু
লাল হয়ে যায় গালটা চড়ে।
বেশ কিছুদিন কেটে গেলে,
ছেলেটিকে দেখে না কেউ,
খেলার মাঠে জাগে না আর
হৈ-হুল্লোড়, খুশির ঢেউ।