পক্ষীরাজ
বইটা ফেলে খুকুমণি
মায়ের কাছে বায়না ধরে;
পক্ষীরাজের পিঠে চড়ে
একলা যাবে তেপান্তরে।
হট্রমালার হাট পেরিয়ে
যাবে বটে অনেক দূরে।
মেঘের সাথে চলবে উড়ে,
পড়বে ছায়া সমুদ্দুরে।
কড়ির পাহাড়, পাষাণপুরী
পেছনে রইবে পড়ে,
পক্ষীরাজের সওয়ার হয়ে
খোকন যাবে তেপান্তরে।
দৈত্যদানোর নিশ্বাস লেগে
কত কিছুই গেছে উড়ে,
পক্ষীরাজের ডানাজোড়া
এক নিমেষে গেছে পুড়ে।
ঘোড়ার পা’টা আজকে কোথায়
আটকে গেছে কোন সে চরে?
তাই বলো না কেমন করে
খোকন যাবে তেপান্তরে?
বইটা খুলে খুকুমণি
ভাবছে কী যে অতশত।
নতুন কিছু খুঁজছে যেন
নয়া কলম্বাসের মতো।
ফুটফুটে ফুল
ফুটফুটে ঐ ফুল ফুটেছে
খুকির ফ্রকে কত্ত।
ফুরফুরিয়ে ফড়িঙ বলে-
সত্য এটা সত্য।
বরষা আসে
আষাঢ় মাসে বরষা আসে,
মুষলধারে বৃষ্টি।
মোষের গায়ের রঙের মতো
মেঘ হতেছে সৃষ্টি।
বর্ষা এলে
বর্ষা এলে বিষ্টি বটে
বুটির মতো পড়ে,
কখনো বা বিষ্টিধারা
বর্শা হয়ে ঝরে।
বাঁচতে দাও
পাখা নেড়ে নেড়ে প্রজাপতি বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
গাছের পাতার রাঙা পোকা বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
নীল আকাশের পায়রাটা বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
ঘরে ঢুকে-পড়া চড়ুইটা বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
শাদা চাদরের পিঁপড়েটা বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
দেয়ালে-বেড়ানো টিকটিকি বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
ক্ষুধায় কাতর মানুষটা বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
খুনীকে লোকটা ভয় পেয়ে বলে-
মেরো না আমাকে, মেরো না।
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাও।
বেলুন বৃত্তান্ত
এক যে ছিল ছোট্র গলি,
সেই গলিটার গল্প বলি।
গলির ভেতর মানুষ থাকে,
মাঝে-মাঝে কোকিল ডাকে,
গলির মোড়ে সেলুন।
গলির ভেতর রোজ বিকেলে
রোদ কিছুটা ঝিমিয়ে এলে
মাথায় রঙিন ফেটি বেঁধে
যেন সে এক মজার বেদে-
বলত-‘এ নিন বেলুন’।
নানা রঙের বেলুনগুলো
গ্যাসের দমে ফুলোফুলো
দু-চারটা চাইলে পরে
বলত হেসে মিষ্টি স্বরে-
‘আগে কড়ি ফেলুন’।
দু-চার কদম হেঁটে গিয়ে
পকেট থেকে পয়সা দিয়ে
বেলুন কিনি অবশেষে;
বেলুনঅলা বলল হেসে,
‘বেলুন নিয়ে খেলুন’।
কিন্তু এ কী বেলুন হাওয়া
আবার ফিরে যায় কি চাওয়া?
বেলুনঅলা গলির মোড়ে
বলে, চক্ষু বন্ধ করে
এবার চোখটা মেলুন।
ওমা এ যে রাস্তা জোড়া
ডানাঅলা নানান ঘোড়া
ওদের পিঠে স্বপ্ন এসে
বসে রঙিন নানা বেশে
বলে, ‘বামে হেলুন’।
বেলুনঅলা এক নিমিষে
অনেক দূরের মেঘে মেশে,
স্বপ্নগুলো ক্রমাগত
খেলা করে শিশুর মতো।
স্বপ্নগুলোই বেলুন?
ভূতের ভয়ে
ভরদুপুরে ফাঁকা ভিটায়
ভুতুম ডাকে নাকি?
ভূতের ভয়ে ভড়কে গেল
ভারিক্কি এক পাখি।
মিলমিল খেলা
মিলের খেলা খেলবে বলে
খুলল খোকন খাতা।
খাতায় খাতায় মিল-ধরা ঐ
জাল রয়েছে পাতা।
মিল আসে না, দেয় না ধরা,
ঢুলছে খোকন বসে।
ঘুমের মাঠে মিলটা এলে
ধরবে তখন কষে।
মিল বুঝি দূর বনের হরিণ,
দৌড়ে পালায় শুধু।
মিল ছাড়া এই খাতার পাতা
করছে বেজায় ধুধু।
এই এসেছে, এই তো এল
মেঘপাহাড়ি মিল।
খোকন সোনা দিল হঠাৎ
খাতার দোরে খিল।
মেঘে মেঘে
দিনের বেলা মেঘে মেঘে
দেখি আমি কী?
দেখি কত মুখের মেলা,
দূরের পাখিটি।
মেঘে থাকে রোদের ছেলে,
বিষ্টি মেঘের ঝি।
মেঘ তো রাতে হাজার তারার,
চাঁদের পড়োশি।
মেঘের কোলে রামধনুকের
সাঁকো পেয়েছি।
সেই সাঁকোতে বসে সাধের
নাড়ু খেয়েছি।
মেঘের দিকে চেয়ে থেকে
অনেক শিখেছি,
মেঘের দেয়া বিষ্টি নিয়ে
ছড়া লিখেছি।
মেঘে মেঘে যেমন খুশি
ছবি এঁকেছি,
সত্যি আমি মেঘের বুকে
পরী দেখেছি।
মেঘের ডু্লি
মাঝরাতে ঐ মেঘের ডুলি
হাওয়ায় নড়েচড়ে
পরীর মতো মেয়ে নামে
ময়নামতীর চরে।
মৌমাছিদের পাড়া
মধু নিয়ে মাতামাতি
মৌমাছিদের পাড়ায়,
মাতাল হয় ভালুক ভায়া
মৌচাকে হাত বাড়ায়।
রাতদুপুরে
রাতদুপুরে রাঙা চাঁদের
রাংতামোড়া হাসি,
রাস্তাঘাটে রাতের পুলিশ
বাজায় জোরে বাঁশি।
লঙ্কা খেলে
লালচে লালচে লঙ্কা খেলে
গালটি যাবে পুড়ে।
লাল টুকটুক ডালিম খেও,
দুলবে মিষ্টি সুরে।
শাপলা-শালুক
শান্ত দিঘির শাপলা-শালুক
শান্তি আনে মনে,
শালপাতাটি শোলক শোনায়
নিঝুম শালের বনে।
শেবার দ্বীপ
শেবামণি ভাবছে বসে
কোথায় সে দ্বীপ বিরানা?
কোন ঠিকানায় লিখলে চিঠি
পাবে দ্বীপের ঠিকানা?
হলদে পাখি বলল ওকে-
সত্যি বলি, মিছা না;
সাত সমুদ্র তের নদীর
মাঝে দ্বীপের নিশানা।
হঠাৎ শেবা পেয়ে গেল
পাখির ঠোঁটে ঠিকানা,
বড় আপুর টিপের মতো
দ্বীপ যে চেনা বিছানা।
সন্ধ্যা হলে
সন্ধ্যা হলে সরোবরে
সারস আসে উড়ে।
সাতটি তারা সেতার বাজায়
সুনীল আকাশ জুড়ে।
সুর ফুটেছে
সুর ফুটেছে, সুর ফুটেছে
কোন সে পাখির গলায়,
বাবলা গাছের তলায়।
বাবলা-বনের টোপর ছুঁয়ে
তেপান্তরে একটু নুয়ে
সে সুর ঝরে ঝুরঝুরিয়ে
ক্ষীর নদীটির চরায়,
বুড়ো বটের গোড়ায়।
সে সুরেরই চিকন আলো
পাতায় পাতায় ঝলমলাল।
চম্পাবতীর নূপুর হয়ে
মন-জুড়োনো মধুর লয়ে