খোকন যা যা করে
মাছের মতো তাকায় খোকন
পাখির মতো ওড়ে,
বাঁশির সুরে বলে কথা
ঘরে, গলির মোড়ে।
মেঘের পাড়ায় বেড়ায় ভেসে
পঙ্খিরাজের পিঠে,
কখনো ফের বসে থাকে
ক্ষীর নদীটার সিটে।
পদ্মপাতায় খায় সে খাবার
দিনে এবং রাতে;
জ্যোৎস্নারাতে এক্কাদোক্কা
খেলে পরীর সাথে।
শালিকটাকে কনে সাজায়
হবে মজার বিয়ে,
বুড়ো শেয়াল জলদি আসে
টোপর মাথায় দিয়ে।
সাত হরিণের আটাশ খুরে
জ্বলে হাজার হীরে,
খোকন সে-সব কুড়িয়ে ছড়ায়
জোনাকিদের ভিড়ে।
কত্ত চিঠি পাঠায় খোকন
হালকা মেঘের খামে,
রৌদ্র ছায়ায় ছড়া লেখে
বাংলাদেশের নামে।
খোকার খাতা
খোকার আছে মজার খাতা,
বাহা, বাহা, বাহারে।
সেই খাতাটা উঠতে পারে
মস্ত উঁচু পাহাড়ে।
খোকার খাতা পাখির মতো
উড়তে পারে আকাশে,
গোলাপ ফুলের তোড়া হয়ে
ভাসতে পারে বাতাসে।
সেই খাতাটা যেতে পারে
নীল সাগরের কিনারে,
এক নিমেষে পারে যেতে
হালকা মেঘের মিনারে।
খোকার খাতায় পরী ঘুমায়,
রৌদ্র পোহায় পৃথিবী।
বলছে খাতা, ‘কনক চাঁপা,
বল তো আমায় কী দিবি?’
গাছের জন্য
গাছ কেটো না, গাছ মেরো না,
গাছ আমাদের ভাই।
মন দিয়ে আজ শোনো সবাই
বলতে যেটুকু চাই-
গাছের মতো এমন ভালো
বন্ধু বেশি নাই।
দেয় সে ছায়া, তারই জন্যে
শুদ্ধ হাওয়া পাই।
গাছের ডালে নানা রঙের
ফুলের বাহার দেখি,
গাছে তাজা ফলের মেলা,
নয়তো কিছুই মেকি।
গাছ লাগাতে মাটি খোঁড়ো
বাসার আশেপাশে,
চোখে-মুখে আরাম পাবে
গাছের পাতায়, ঘাসে।
গাছ লাগাতে, গাছ বাঁচাতে
চলো আমরা যাই,
গাছ চুরিতে ব্যস্ত যারা,
তাদের মুখে ছাই।
ছড়া পালানোর পর
ছড়া কোথায়? ছড়া কোথায়?
কই পালাল ছড়া?
পাই না খুঁজে কই মিলাল
ছড়ার হাতের নড়া?
অষ্টপ্রহর ছড়ার পিছে
মিছেই ঘুরে মরা।
গাছের পাতায়, চপল রোদে
বাজত ছড়ার মল।
যখন-তখন জোছনা-রাতে
নামত ছড়ার ঢল।
গলির মোড়ে কলের জলে
বাজত ছড়ার গলা,
ফুটপাতটায় দেখত লোকে
ছড়ার জোনাক-জ্বলা!
আজকে ছড়ার শুকনো নদী
তাই পড়েছে চরা।
ছড়া কোথায়? ছড়া কোথায়?
কই পালাল ছড়া?
সবাই মিলে ষাঁড়ের মতো
করল এমন তাড়া,
প্রাণ বাঁচাতে ছাড়ল ছড়া
ছন্দমিলের পাড়া।
পাঁচজনে আজ ভাবুক বসে
দোষটা হলো কার?
এদিকে ভাই হঠাৎ দেখি
ছড়া পগারপার।
জাদুর বাসা
যাযাবরের মজার যাওয়া,
কী-যে মজার আসা,
যখন খুশি যেখানে তার
বানায় জাদুর বাসা।
তালে তালে
খট্ খটা খট্ ঘোড়া ছোটে
তেপান্তরের মাঠে,
হন্ হনা হন্ পালকি চলে
পাড়াতলির ঘাটে।
টপ্ টপা টপ্ শিশির ঝরে
টিনের ঘরের চালে,
হুম্ হুমা হুম্ ভুতুম ডাকে
রাত-জমানো ডালে।
মট্ মটা মট্ লাকড়ি ভাঙে
রাকামণি ভোরে,
ঘট্ ঘটা ঘট্ রেলগাড়িটা
চলছে বড় জোরে।
ঝম্ ঝমা ঝম্ বৃষ্টি পড়ে
খেলাঘরের ছাদে,
থম্ থমা থম্ আকাশ শুধু
ঘ্যানঘ্যানিয়ে কাঁদে।
দম্ দমা দম্ ঢোলক বাজে,
বাজনা আরো আছে।
ঝন্ ঝনা ঝন্ ঘুঙুর পায়ে
রাকামণি নাচে।
তিনটি হরিণ
দুটি হরিণ তি
জুটল হ্রদের তীরে।
হরিণ দ্যাখে হ্রদের পানি
চন্দ্রহারের হীরে।
তেপান্তরে
পক্ষীরাজের সফেদ ডানা আধখানা,
হীরামনের হীরের টুকরো সাত ছানা
কয়েক আনায় কিনতে পারো তোমরা,
কিনতে পারো পাতালপুরী ভোমরা।
কঙ্কাবতীর চোখের আলো সাচ্চা,
কিনতে পারো ওহে দু-তিন কাচ্চা।
তেপান্তরে মাঠের ধুধু নিশ্বাস
কিনতে পারো-করো আমায় বিশ্বাস।
দীপিতার খেলা
দাদা ভাইটা দুষ্টু ভারি
যতই ধরি বায়না,
আমার সাথে লুকোচুরি
খেলতে মোটেই চায় না।
পেট-মোটা সব কেতাব নিয়ে
পড়ছে বসে একা।
খেলার বেলায় একটুও তার
পাই না আমি দেখা।
সকল সময় বই পড়াটা
দেব বটে চুকিয়ে,
ফন্দি করে চশমাটা তার
রাখব দূরে লুকিয়ে।
তখন কী যে হবে মজা-
দাদাভাইয়ের হাতটা খালি।
দেখবে চোখে ধোঁয়া ধোঁয়া,
আমার হাতে বাজবে তালি।
আমার কাণ্ড বুঝে দাদু
বলবে, ‘এসো, পাজি,
চশমাটা দাও, তোমার সাথে
খেলতে আমি রাজি’।
ধুপ ধুপা ধুপ
(একটি বিদেশী ছড়া মনে পড়ে, তাই)
ধুপ ধুপা ধুপ ধাপ,
বাস রে সে কী লাফ।
ষাঁড়টা হঠাৎ জোরে
এক লাফেতে ওরে
পৌঁছে গেছে শেষে
চাঁদ মামার দেশে।
ধুপ ধুপা ধুপ ধাপ,
বাস রে সে কী লাফ।
পড়ল চাঁদে পা’টা,
খুর যেন তার ঝাঁটা।
ডাইনে-বামে ছুটল শুধু
এত্ত ধুলো উড়ল ধুধু।
ঝুপ ঝুপা ঝুপ ঝাপ,
চাঁদের মাটি সাফ।
নয়না আয়
নয়না আয় ফুল কুড়ানি
শিউলিতলায় এসে,
সেখানে ওই ফুলের গন্ধ
হাওয়ায় বেড়ায় ভেসে।
নয়না আয় নদীর পাড়ে
দেখবি নৌকো কত;
নদীর বুকে জ্বলছে রোদে
হীরে শত শত।
নয়না আয় সন্ধেবেলা
সবুজ ঝোপের কাছে,
সেখানে শোন পাতায় পাতায়
জোনাক পোকা আছে।
নয়না আয় চল না যাবি
পাড়াতলি গাঁয়,
সেখানে রোজ হরেক রকম
পাখিরা গান গায়।
নয়না তুই সোনার খাটে
চুপটি করে ঘুমো,
রাতের বেলা পরীর রানি
তোকে দেবে চুমো।
নয়না তার বোনকে বলে
নয়না তার বোনকে বলে, শোন দীপিতা,
দিচ্ছি তোকে বলে
আমার ছড়ায় কান না দিলে চিমটি খাবি,
কানটা দেব মলে।
ঐ যে দূরে নীল আকাশে উড়ছে নানা
মেঘ-পরীদের শাড়ি,
সেখানটাতে আছেরে শোন চোখ-জুড়ানো
চন্দ্রমামার বাড়ি।
চন্দ্রমামার নাম শুনিস নি হদ্দ বোকা,
চাঁদমামা তো তিনি।
তার বাগানে তারাগুলি বাজনা বাজায়
মধুর রিনিঝিনি।
পণ করেছি, রাতের বেলা উড়ে আমি
যাব চাঁদের বাড়ি।
আজব কত মণ্ডা, মিঠাই পাব খেতে
পাব মধুর হাঁড়ি।
যাবি কি তুই আমার সাথে গভীর রাতে
অত্ত দূরে উড়ে?
চাঁদমামা না খুবই ভালো, কত্ত মজার
গল্প দেবেন জুড়ে।
তুই তো আবার জানি বেজায় ঘুমকাতুরে,
ঘুম আসে তোর সাঁঝে।
তোকে নিয়ে গভীর রাতে দূর আকাশে
আমার যাওয়া সাজে?
শোন দীপিতা, বোনটি আমার রাগ করিস নে,
চাঁদের বাড়ি যাব।
তারার নূপুর, মেঘের পরী, দুধের নদী
দেখতে ঠিকই পাব।