‘চেয়ারের দিকে তাকাও,’ চেঁচিয়ে উঠল সে, ‘তাড়াতাড়ি! এত ধীর কেন তুমি?’ এসময়ই ক্লিক করে একটা শব্দ হলো। মনে হয় বাইরে থেকে দরজাটা আটকে দেয়া হয়েছে। এসময় আগুনটা হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠল। এতে ধরা পড়ল সামনের চেয়ারটায় তাঁর দিকে পেছন ফিরে বসে আছে ফ্ল্যানেলের পোশাক পরা কেউ। লোকটার পাদুটো ছড়ানো। মাথাটা চেয়ারের পেছনে বিশ্রামরত। এতে পেছন থেকে মুখটা দেখতে পেলেন এখন লিণ্টন। তখনই মনে হলো অবয়বটার মধ্যে কোন একটা অস্বাভাবিকতা আছে। মুখটা সবুজ। চোখটা আধবোজা। মুখটা হাঁ করে আছে। ততক্ষণে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন লিন্টন। চেয়ারটার সামনে গিয়ে আধশোয়া লোকটার দিকে তাকালেন সরাসরি। যা দেখলেন আতঙ্কে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন। লোকটা আর কেউ নন-তাঁর চাচা। তাঁর অস্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকার কারণ পরিষ্কার। তিনি মারা গিয়েছেন। গলা কাটা। আ পরিষ্কারভাবে বললে ধারালো কিছু দিয়ে বারবার আঘাত কর। হয়েছে তাঁর গলায়। আবিষ্কারটা এতটাই ভয়ানক যে কিছু সময়ের জন্য চিন্তা করার শক্তিও হারিয়ে ফেললেন লিন্টন। জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলেন কতক্ষণ। কেউ যেন বা পাজোড়া আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছে মেঝের সঙ্গে। তারপর হঠাৎই কাজ করা শুরু করল তাঁর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। দরজার দিকে দৌড়ে গেলেন সাহায্যের, আশায়। ওটা আটকানো। দরজায় করাঘাত করতে লাগলেন জোরে। এসময় বাইরে থেকে শোনা গেল নারীকণ্ঠের অট্টহাসি।
‘ওহ, কত্ত বোকা তুমি। কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজটা? চাচার টাকা চেয়েছিলে? কিন্তু হেরে গেলে। সব এখন আমার। বিয়ের সময়ই উইল করিয়ে সব আমার নামে লিখিয়ে নিয়েছি। আর তোমাকেও জেলে ঢুকতে হচ্ছে!’ হাসতে হাসতেই বলল তরুণী।
‘মানে? এই, শয়তান, তুমি কী বলতে চাচ্ছ?’ রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন লিন্টন।
‘ফাঁদে আটকা পড়েছ তুমি। রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। দরজা তালা লাগিয়ে দিয়েছি। জানালাগুলোয় গ্রিল আছে। তোমার পোশাকের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে কেমন বুদ্ধি করে তোমাকে ফাঁসিয়েছি। যখন তুমি আমাকে চুমু খাচ্ছিলে এবং আমার পোশাক আর চুল থেকে সুগন্ধ নিচ্ছিলে, তখন তোমার চাচার কিছু রক্ত তোমার পোশাকে লাগিয়ে দিয়েছি। এখন হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি আমি। এক ঢিলে বুড়ো স্বামী এবং তার বেকুব ভাতিজার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। এবার পুলিস ডাকতে চললাম।’
লিন্টন দরজার পাশেই টেলিফোনের কাছে যাওয়ার শব্দ শুনল তার। জেরাল্ড রোড পুলিস স্টেশনে ফোন দিয়ে সে বলছে, ‘আমি ইন্সপেক্টর, সার্জন কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কাউকে চাই। তাড়াতাড়ি আসুন দয়া করে। ইটন স্কয়ারের নম্বর বাড়িতে একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আমার স্বামীকে তার ভাতিজা মেরে ফেলেছে। সৌভাগ্যক্রমে ঘটনাটা দেখে ফেলেছি আমি, বুদ্ধি করে আসামীকেও ওই কামরায়ই আটকে ফেলতে পেরেছি। খোদার দোহাই, শীঘ্রি আসুন।’
তারপরই তরুণীটি সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। হতাশ, বিপর্যস্ত লিন্টন মেঝের ওপর বসে পড়লেন। এভাবে কতক্ষণ কেটেছে বলতে পারবেন না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে এল। একজন লোকের কর্কশ কণ্ঠ, তারপর ভারী কিছু পদশব্দ। পরমুহূর্তে সিঁড়ি বেয়ে তাদের ওঠার থপ থপ আওয়াজ। একমুহূর্ত পরই ল্যাণ্ডিঙে উঠে এল পদশব্দ। -তারপর চাবি দিয়ে দরজা খোলার আওয়াজ। দরজাটা যখন খোলা হচ্ছে, আশ্চর্য একটা অনুভূতি হলো লিণ্টনের, পরমুহূর্তেই জ্ঞান হারালেন তিনি।
যখন চোখ খুলে আশপাশে তাকালেন, বিস্মিত হয়ে দেখলেন, তাঁর স্টুডিয়োতে ফিরে এসেছেন। আগুনের সামনে ঠিক আগের অবস্থানেই, নিজেকে আবিষ্কার করলেন। পৈশাচিক ওই মহিলা হাজির হওয়ার ঠিক আগের অবস্থায় আছেন যেন। এসময়ই দরজায় করাঘাতের আওয়াজ। তবে স্টুডিয়োর নয়, ঘরের প্রধান দরজায়। বারবার শব্দটা হতেই লাগল। সিঁড়ি বেয়ে নেমে দরজা খুলতেই একটা ছেলের দেখা পেলেন। হাতে একটা নোট। এখন পুরো সচকিত লিন্টন পড়তে শুরু করলেন, ‘প্রিয় ভাতিজা, অনেক দিন হলো আমার কোন খবর না পেয়ে তুমি নিশ্চয়ই চিন্তিত। তোমাকে না জানিয়ে একটা কাণ্ড করে ফেলেছি আমি, বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী চমৎকার এক আমেরিকান তরুণী। আশ্চর্য বিষয়, এখন যেখানে তুমি থাক একসময় সেখানেই থাকত সে। তোমাকে দেখতে অধীর হয়ে আছে ও। আজ রাত আটটায় কি আমাদের সঙ্গে ডিনার করবে? রাগ কোরো না। তোমার চাচা রবার্ট।
‘ও, একটা কথা, আমার বাসা বদলেছি। আমার পুরনো বাড়িটা ছিল চিরকুমার একজনের উপযুক্ত। কিন্তু একজন বিবাহিত লোকের জন্য না। আমার নতুন ঠিকানা…
ঠিকানাটার দিকে তাকালেন লিন্টন। ইটন স্কয়ারের একটা বাড়ির নম্বর। বিপদের একটা আশঙ্কায় দৌড়ে ওপরে উঠে কাপড় বদলালেন। এবং যথাসময়েই চাচার বাসায় পৌঁছলেন।
ভেতরে ঢুকতেই একটা ধাক্কা খেলেন। ঘণ্টাখানেক আগে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে যে বাড়িটায় এসেছিলেন সেটার সঙ্গে এর দারুণ মিল। ওই ঘড়িটা, ওটার টিকটিক আওয়াজ শুনতে পেলেন। বাড়িটাও কেমন সুনসান। ‘ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই তাঁর চাচা একটু লজ্জিত ভঙ্গিতে স্বাগত জানালেন। তাঁর গলার দিকে চোখ চলে গেল লিণ্টনের। সেখানে কোন ক্ষত নেই। কীভাবে প্রিয়তমার দেখা পেয়েছেন চাচা সে বর্ণনা দিচ্ছিলেন, এমন সময় ভেতরে ঢুকল এক নারী।