রাত তখন দশটা। খাওয়া শেষে বাইরে বসে আছেন দুই বন্ধু। ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ একটু দূরে একটা হায়েনার ডাক শোনা গেল। টানা, প্রলম্বিত একটা কণ্ঠ। এমন অদ্ভুত কণ্ঠে কোন হায়েনাকে এর আগে ডাকতে শোনেননি তাঁরা। একবার থামছে, তারপর আবার হচ্ছে। হঠাৎ কী একটা সন্দেহ করে দু’জনেই লণ্ঠন হাতে ছুটলেন কয়েদখানার দিকে। যা দেখলেন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এক প্রহরী এবং একজন পুলিস সদস্য মিলেও আটকাতে পারছে না আটক পশু কিংবা মানুষটাকে। খড়ের ছাদের নিচের বাঁশের বেড়াগুলোর ওপরে একটা গর্তমত করেছে সে। ওই ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। এসময় শব্দ শুনে এগিয়ে আসে পুলিস আর প্রহরী। উপায়ান্তর না দেখে পুলিসটি বন্দুকের কুঁদো দিয়ে এত জোরে মারে লোকটার মাথায় সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় মাটিতে। কর্পোরাল এবার এগিয়ে এসে তালগাছের খুঁটির সঙ্গে হাতকড়া আটকে দিল বন্দির। সবাই ভাবল এবার আর বাছাধন পালাতে পারছে না।
পরের দিন রাত। প্রহরীর হঠাৎ একটু চোখ লেগে এল। তখনই তার মনে হলো পাশ দিয়ে কী একটা ছুটে গেল। লণ্ঠনের আলোয় দেখল দেয়ালে বিশাল এক গর্ত, ছাদটা নিচের দিকে নেমে এসেছে অনেকটা। সবাইকে সতর্ক করে দিতে শূন্যে গুলি ছুঁড়ল সে। তারপরই ক্যাম্পের প্রান্তে, প্রায় চারশো গজ দূরে পাহারায় থাকা প্রহরীটির গুলির শব্দও শুনতে পেল।
স্মিথ এবং অস্টারস্টক দৌড়ে গিয়ে দেখলেন বন্দি পালিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো তালগাছের খুঁটি দাঁত দিয়ে দুই টুকরো করে গিয়েছে সে। না হলে পালাতে পারত না। সেখানে পড়ে আছে অনেকটা লালা ও রক্ত। হাতকড়াটা গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে। গোটা কামরায় অসহ্য একটা গন্ধ। সাত দিন ধোয়া-মোছার পরে যায় ওই গন্ধ।
সবাই রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ল ঘটনার আকস্মিকতায়। কয়েকজন পুলিস বেরিয়ে পড়ল। তারপরই তারা এসে একটা অদ্ভুত খবর দিল। ওপাশের প্রহরীর গুলিতে একটা হায়েনা মারা পড়েছে। কী আশ্চর্য! এত রাতে মানুষ ভর্তি ক্যাম্পে হায়েনা ঢোকা তো রীতিমত অস্বাভাবিক।
তবে কি ওই হায়েনা আর লোকটা একই ব্যক্তি? স্মিথ, বিশেষ করে তাঁর বন্ধু অস্টারস্টকেরও তা-ই মনে হলো। তাঁরা এগিয়ে গেলেন মৃত হায়েনাটার দিকে। হাঁ করা মুখটা পৈশাচিক। চোয়াল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। প্রহরী বর্ণনা করল ঘটনা।
কয়েদখানা থেকে গুলির শব্দ শুনেই সতর্ক হয়ে যায় সে। বন্দুক বাগিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ দেখে বিশাল একটা হায়েনা তাকে পাশ কাটিয়ে দৌড়চ্ছে আগুনের দিকে। আগুনে ঢুকেই পড়েছিল প্রায়। শরীরে আঁচ লাগতেই পিছু হটে। তখনই গুলি করে প্রহরী।
বিষয়টা নিয়ে অনেক ভেবেও কূলকিনারা করতে পারলেন না স্মিথ ও অস্টারস্টক। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন হয়তো হায়েনা আর ওই কয়েদী একই। কে না জানে আফ্রিকায় অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে আজও। ফুলানি, কুরগ্রামের লোকেরা, এমনকী তাঁদের অভিজ্ঞতাও তো এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। তাছাড়া লোকটার চোখে একটু সমস্যা ছিল। তাই কি হায়েনাটা আগুনের ভেতরে ঢুকতে যায়?
কিলবার্ন স্টুডিয়োর ভুতুড়ে ঘটনা
ও’ডনেলের ভুতুড়ে বাড়ি আর জায়গা নিয়ে গবেষণা করার বাতিক ছিল। একদিন আলাপের সময় তাঁর বন্ধু জর্জ নিয়াল বললেন কোন বাড়ি ভুতুড়ে হওয়ার সঙ্গে এর পরিবেশ বা আবহাওয়ার যোগ আছে। যখন কোন বাড়ির পরিবেশ বা আবহাওয়া অস্বস্তিকর লাগবে তখন সেখান থেকে কেটে পড়া বা বাড়ি বদল করাই উত্তম। তাঁর মতে সমতল ও পাহাড়ি এলাকার থেকে নিচু এলাকায় এবং জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় খুন- খারাবি আর ভুতুড়ে ঘটনা বেশি ঘটে। যেমন ব্রিস্টল, বাথ এবং ক্লিভডনের মত এলাকাগুলোতে ভুতুড়ে বাড়ি ও জায়গার খবর বেশি পাওয়া যায়। কারণ এসব জায়গা নিচু। লণ্ডনের প্রসঙ্গ এলে এক্ষেত্রে সবার আগে আসবে কিলবার্নের নাম। এটাই লণ্ডনের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গা। এখানকার পরিবেশটাই আসলে অতিপ্রাকৃত ঘটনার উপযোগী। তারপরই নিয়াল লিন্টন ওয়াইজম্যান নামের এক শিল্পীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন।
সাদা-কালো ছবি আঁকতে ভালবাসতেন লিন্টন। মনের মত একটা স্টুডিয়ো খুঁজছিলেন অনেক দিন। শেষমেশ মোটামুটি পছন্দ হলো কিলবার্নের স্টেশনের ধারের একটি জায়গা। ওখানে আঁকাআঁকির সব সরঞ্জাম নিয়ে উঠে পড়তেও সময় লাগল না।
এক বিকালের ঘটনা। এক আত্মীয়ের একটা বইয়ের জ্যাকেটের কাজে বেশ খাটাখাটনির পর একটু বিরতি টানতে চাইলেন। চেয়ারটা ফায়ারপ্লেসের আগুনের সামনে নিয়ে একটা সিগার ধরালেন। এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে লিণ্টনের বিয়ের কথা প্রায় পাকাপাকি। কিন্তু আর্থিক কিছু সমস্যার কারণে ওটা ঝুলে আছে। মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে চেয়ারে হেলান দিয়ে পাইপ টানছেন। এসময় হঠাৎ তাঁর মনে হলো একমাত্র চাচার কথা। ভদ্রলোক চিরকুমার। তাঁর কাছে অনেক প্রত্যাশা লিণ্টনের। তাঁর মনে হলো চাচার খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না অনেক দিন। কয়েকবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোন উত্তর পাননি। তবে কি তিনি অসুস্থ? লিণ্টনের ওপর চাচার রাগ করার কোন কারণ নেই। আগামীকাল অবশ্যই আবার চিঠি লিখবেন তিনি। যদি তারপরও উত্তর না পান তবে সোজা টরকুয়েতে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়ে চমকে দেবেন।