কিন্তু যখন ভদ্রমহিলা গোপন তথ্যটা ফাঁস করেন তখন এমনকী তাঁর অবিশ্বাসী স্বামীও মেনে নেন মেয়ের ভূত হাজির হয়েছিল ভাইয়ের সামনে। সেন্ট যোসেফের ওই হোটেল রুমে তরুণ কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও বোনের আত্মার মুখোমুখি হয় সেদিন।
আমেরিকান রিসার্চ ফর সাইকিক রিসার্চের ১৮৮৭ সালের সংখ্যায় এ ঘটনাটির বর্ণনা আছে। তাদের ফাইলে আত্মীয়ের প্রেতাত্মার দেখা পাওয়ার অনেক অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাটাকে স্বপ্ন কিংবা হ্যালুসিনেশন হিসাবে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু যখন বোনকে দেখে তখন ওই লাল ক্ষতের বিষয়টা তরুণের জানা না থাকায়, এই ঘটনাটা অন্যগুলোর থেকে অতিপ্রাকৃত-বিশেষজ্ঞদের কাছে আলাদা হয়ে রয়েছে।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু
উঁচু পাহাড়টার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড গুম্ফাটা। অবস্থানগত কারণে খুব কম পর্যটকই এটা দেখেছে। এমনকী স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে এর সম্পর্কে যেসব ভীতিকর গল্প ছড়িয়ে আছে তা সম্পর্কেও জানে না। যে পর্বতের গায়ে মনাস্ট্রিটা ঝুলে আছে সেটা সাগরসমতল থেকে প্রায় দুই মাইল উঁচুতে। চারপাশে উঁচু সব পর্বতচূড়া গুম্ফাটাকে আড়ালে রাখতে সাহায্য করেছে।
বরফঢাকা হিমালয় ঘেরা বিশাল এক মালভূমি তিব্বত। রহস্যময় এক দেশ এটি। পুরানো রীতি-নীতি নিয়ে টিকে আছে এখনও এর অনেক প্রাচীন মনাস্ট্রি। পর্যটকদের জন্যও অনেকটাই নিষিদ্ধ এলাকা। বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাবে এর অনেক কিছুই বদলে গেলেও কোথাও কোথাও নানা ধরনের অদ্ভুত রীতি-নীতি পালন করা হয়।
আমরা এখন যে গুম্ফাটার বর্ণনা দিচ্ছি সেটা কিন্তু এখনও প্রাচীন তিব্বতের বিচিত্র রীতি-নীতি লালন করে আসছে। এর প্রধান লামা খুব ক্ষমতাধর। বলা হয় অদ্ভুত সব ক্ষমতা আছে তাঁর। নানান ধরনের জাদুর রাজা বলা যায় তাঁকে। বিশাল এক দুর্গসদৃশ দালানে বাস করেন তিনি। সেখানে কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানুষেরই যাওয়ার সুযোগ মেলে। চারপাশ ঘিরে আছে উঁচু দেয়ালে। এর গায়ে ডজনখানেক জানালা। নিচের ভবনগুলোতে মনাস্ট্রির অন্য লামাদের বাস। উপাসনা আর ধ্যান করে তাঁদের সময় কাটে। আবার আশপাশের গ্রামগুলো থেকে লোকেদের নিয়ে আসা অর্থ-কড়িও সংগ্রহ করেন তাঁরা, গুম্ফার দেখভালের জন্য।
প্রধান লামার দুর্গসদৃশ দালানেই ইয়ামার মন্দির। এখানে বিশাল আকারের একটা কাঠের ভাস্কর্য আছে অন্ধকারের দেবতা ইয়ামার। এর চারপাশ ঘিরে আছে ছোট ছোট কম গুরুত্বপূর্ণ সব ভাস্কর্য। এখনও পুরানো তুকতাক আর মন্ত্রে বিশ্বাসীদের কাছে এই স্ট্যাচু অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাদের জানা নেই এর মুখ থেকে যে শব্দ বের হয় তা আসলে কাঠামোটার পেছনে গুপ্ত কামরায় থাকা এক ভিক্ষুর।
এই মন্দিরের লামারা মাথায় এক ধরনের কালো টুপি পরে থাকে। মন্দিরের নিচে গুপ্ত কক্ষে রাশি রাশি স্বর্ণ আর হীরা-জহরত নাকি লুকানো আছে। তবে এই গুল্ফার বুড়ো, কঠিন চোখের লামা ছাড়া আর কেউ জানেন না এর সত্যতা কতটা কিংবা কীভাবে ওই ধনসম্পদের কাছে যাওয়া যায়।
জাপানের কিয়োটোর এক কিউরিও দোকান। একজন ক্রেতাকে হাতে ধরে রাখা খুলির একটা বল সম্পর্কে বলছে বিক্রেতা। ‘স্যর, এটা তিব্বতের খাঁটি জিনিস। এর জন্য আমাকে কেবল আড়াইশো ইয়েন দিতে হবে তোমাকে। এক মানুষের খুলি দিয়ে এটা তৈরি। যে স্থানীয় লোকটার কাছ থেকে আমার এজেন্ট এটা কিনেছে সে বলেছে এটা লাসার দক্ষিণের এক মন্দির থেকে আনা হয়েছে।’
ক্রেতা আর. এল. রিচার্ডসনের জিনিসটা ভারী পছন্দ হয়েছে। এই অদ্ভুত গুম্ফার কথা এই প্রথম শুনছে সে। জিনিসটা কেনার সঙ্গে সঙ্গে ওই মন্দির এবং এর গুপ্তচর্চা সম্পর্কেও যতটা সম্ভব জেনে নিল।
কোন একটা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলে বসে থাকার লোক নয় রিচার্ডসন। লাসার কাছের রহস্যময় ওই মন্দিরের গুপ্তভাণ্ডারের খোঁজে নিজেই যাওয়া স্থির করল। বন্ধুরা তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করল বারবার। তবে অভিযান আর পরানো রত্নের গন্ধ যখন পেয়েছে কে ঠেকায় রিচার্ডসনকে!
মে গেল দার্জিলিং। তারপর পাহাড়ি পথে রওয়ানা হলো। সঙ্গে মালপত্র বোঝাই ঘোড়া আর ভয়াল দর্শন কয়েকজন তিব্বতী গাইড। এদের একজনই কেবল ইংরেজি জানে।
পাঁচ সপ্তাহ পাহাড়ি পথে পাড়ি দিয়ে এক সন্ধ্যায় ওই গুম্ফার ধূসর দালানগুলো যে পাহাড়ের কাঁধে অবস্থিত সেখানে পৌছল।
‘এটাই সে জায়গা,’ অল্পবিস্তর ইংরেজি জানা গাইডটি জানাল, ‘এটা কোথায় জানতাম না। তবে অনেক লোককে জিজ্ঞেস করেছি। তারা কেউ বলেছে এখানে, কেউ ওখানে। তবে আমি এটা বের করেছি। বুদ্ধির জোরে। বাড়তি টাকা পাওনা আমার। দিয়ে দাও। কারণ বড় লামা সাদা মানুষ পছন্দ করেন না। বেঁচে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ফিরে যাও।’
তবে দুঃসাহসী অভিযাত্রীর পরিকল্পনা ভিন্ন। মালামাল বোঝাই ঘোড়াগুলোকে দাঁড় করিয়ে মনাস্ট্রির পাঁচ মাইল দূরে নিচু এক পাহাড়সারির পেছনে ক্যাম্প করল। তার লোকদের আপাতত এখানেই অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে একাকী রওয়ানা হলো মনাস্ট্রির উদ্দেশে।
আঁকাবাঁকা পাহাড়টার নিচে যখন পৌঁছল তখন অন্ধকার নেমে এসেছে। দেয়ালের চারকোনা জানালাগুলো গলে কিছুটা আলোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় খাড়া দেয়াল বেয়ে উঠতে লাগল রিচার্ডসন। কখনও তার পক্ষে এটা সম্ভব হত না, যদি না ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকত।