এভাবে প্রেতাত্মাটার মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার পর আর কোন অবিশ্বাস রইল না কারসনের। পত্রিকার একজন রিপোর্টারকে সে বলে, মারফিদের বেঞ্চ আর সমাধিটার মাঝখানে প্রেতাত্মাটাকে দেখার পর ভয়ে নড়তে ভুলে গিয়েছিল। একপর্যায়ে তার চোখের সামনেই কাঠামোটা অদৃশ্য হয়ে যায়।
একমুহূর্ত দেরি না করে নিজের কেবিনে ফিরে যায় জর্জ কারসন। সে বুঝতে পারে পরের দিন সকালে তার প্রথম কাজ হলো একজন লোক ডেকে ওই পাথরের ফলকটা আবার আগের জায়গায় ঠিকমত স্থাপন করা।
আর সামান্য এই শ্রদ্ধা জানানোটাই প্রেতাত্মাটার জন্য যথেষ্ট ছিল। কারণ এরপর আর ওই ছায়ামূর্তিকে রাত- বিরেতে হাজির হয়ে চমকে দিতে দেখা যায়নি লোকজনকে। অন্তত পত্রিকাটির রিপোর্টে তা-ই বলা হয়েছিল। অবশ্য এরপরে সেখানে আর কোন ভৌতিক ঘটনা ঘটেও থাকতে পারে। কারণ ওই রিপোর্টের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় একশো বছর।
প্রেতাত্মার সাহায্য
কখনও কখনও ছোট্ট কোন নৌকায় চেপে একাকী দুঃসাহসী সাগরযাত্রায় বেরিয়ে পড়ার খবর কানে আসে আমাদের। আমেরিকার ফ্লোরিডার বব ফ্লাওয়ার এমনই একজন। ১৯৭৮ সালের গ্রীষ্মে তার আঠারো ফুটি নৌকাটা নিয়ে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলো ফ্লাওয়ার। মিসকিটার নামের নৌকাটিতে চেপে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর সে। এবারের অভিযানটা সফল হলে মিসকিটারকে নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেরোনোর পরিকল্পনা।
যেদিন সাগরে নামাল নৌকাটিকে, সব কিছু ছিল চমৎকার। আকাশটা পরিষ্কার, সূর্য দারুণ আলো ঝরাচ্ছে। আটলান্টিক মহাসাগর এতটাই শান্ত যে ফ্লাওয়ারের মনে কোন শঙ্কাই রইল না। রাতের বেলা হঠাৎই পরিবেশ পাল্টে গেল। বাতাস ও ঢেউ তার ছোট্ট নৌকাটিকে নিয়ে রীতিমত খেলতে শুরু করল। নৌ বিদ্যা সম্পর্কে জানা সব ধরনের জ্ঞান প্রয়োগ করেও ঝড়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না ফ্লাওয়ার। কোন একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটা ছাড়া আর রক্ষা নেই বুঝতে পারল।
একটার পর একটা দিন পেরোতে লাগল। ঝড় থামার কোন লক্ষণ নেই। ফ্লাওয়ারের রীতিমত কাহিল অবস্থা। ঝড় এতটাই প্রবল যে বড় জাহাজগুলোও মিসকিটারকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে পারল না।
পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে ফ্লাওয়ার। কেবলমাত্র বেঁচে থাকার চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই করছে না এখন। বাঙ্কের সঙ্গে দড়ি দিয়ে শরীরটা বাঁধল, যেন সাগরে পড়ে না যায়।
একপর্যায়ে জ্ঞান হারাল। টানা ৯০ ঘণ্টা পর জেগেছিল। কতক্ষণ পর বলতে পারবে না হঠাৎ কেবিনে একটা কণ্ঠ শুনতে পেল। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারল না। চোখ খুলতেই কেবিনে তিনজন মানুষকে দেখতে পেল। দেখে অভিজাত কোন প্রমোতদরীর যাত্রী বলে মনে হলো।
ফ্লাওয়ার ভাবল প্রবল খিদে, ভয়, পিপাসা আর ক্লান্তিতে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে তার। চোখ বন্ধ করে দেয়ালের দিকে মুখ ফেরাল। এরই মধ্যে ওই তিনজন লোকের কথা শুনতে পাচ্ছে।
‘আমাদের কি একটা পাল টানানো উচিত?’ একজন জানতে চাইল। তারপর নানা ধরনের যুক্তি দেখাতে লাগল তিনজন। তবে এর সব কিছুই কীভাবে বব ফ্লাওয়ারকে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে। তারা একটা বিষয়ে নিশ্চিত, ফ্লাওয়ার নিজের জীবন বাঁচাতে পারবে না। এই অপমানটা গায়ে না মাখার সিদ্ধান্ত নিল বাঙ্কে শায়িত তরুণ। সে বারবার নিজেকে বোঝাতে লাগল গোটা বিষয়টাই তার কল্পনা।
তবে যতই সময় গড়াল এই অবিশ্বাসী মনোভাব বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ল। কারণ ওই লোকগুলো তাকে তুলে নানা ধরনের পরামর্শ দিতে লাগল জাহাজ নিয়ে। তাদের কথার কোন আগামাথা পাচ্ছে না সে। একপর্যায়ে ভাবতে আরম্ভ করল, ঝড়, না এই লোকগুলো তার প্রধান শত্রু?
এই অদ্ভুত লোকগুলোর কথামতই নৌকাটা পরিচালিত করল ফ্লাওয়ার। তারপর বিধ্বস্ত অবস্থায় শুয়ে পড়ল কেবিনে আবার। একটু পর লোকগুলোর একজন এসে তাকে মিসকিটারের ডেকে যাওয়ার নির্দেশ দিল।
‘তোমার ফ্লেয়ার গানগুলো জ্বালো। কাছেই একটা জাহাজ আছে। ওটাই তোমাকে বাঁচাবে।’
কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ফ্লেয়ার গান ছুঁড়ে মারল আকাশে। তারপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল ডেকের ওপর। একটু পরেই একটা মালবাহী জাহাজকে দেখা গেল দৃষ্টিসীমায়।
কয়েক সেকেণ্ড পর আবারও কোনমতে শরীরটাকে টেনে নিয়ে কেবিনে ঢুকল। ওই তিন আগন্তুক অদৃশ্য হয়েছে। একটু পরই ফ্লেয়ার গানের আলো দেখে হাজির হওয়া জাহাজটা মিসকিটার এবং এর মালিককে উদ্ধার করে বন্দরে নিয়ে গেল।
কয়েক মাস পর যখন তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয় তখন বিষয়টা নিয়ে আবার সন্দেহের দোলাচলে ভুগতে থাকে সে। যদিও কথা থেকে যায়। সে কীভাবে বুঝল তখনই ফ্লেয়ার গান ছুঁড়তে হবে?
সব কিছু মিলিয়ে অতিপ্রাকৃত রহস্যের ইঙ্গিতই পাই আমরা। অন্য ভুবনের তিনজন মানুষ তাকে সাহায্য করেছে নাকি ওই পরিস্থিতিতে তার মনের মধ্যে এমন একটা ক্ষমতা তৈরি হয় যাতে সে বুঝতে পারে একটা জাহাজ এগিয়ে আসছে, সে রহস্যের সমাধান হয়নি আর
ভুতুড়ে জাহাজ
নিস্তব্ধতা, স্থিরতা ও অন্ধকার এই তিনটা অ্যানি এম. রেইড নামের জাহাজটির ক্রুদের সেদিন আঁকড়ে ধরেছিল। ক্যাপ্টেন ডার্কি নোঙর ফেলতে ও পাল গোটাতে বললেন। চারপাশের পরিবেশে একটা অস্বাভাবিক কিছু টের পাচ্ছিল নাবিকরা। কেউ কথা বলছে না। উত্তমাশা অন্তরীপ পেরোনোটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এটা তাদের জানাই ছিল। এই জায়গাটা তারা দ্রুত পেরিয়ে যেতে পারলেই শান্তি পেত। এর বদলে এখন এমন নিস্তব্ধতার মধ্যে অপেক্ষা করাটা নিশ্চয়ই প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে নাবিকদের মনে।