কর্নেল নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়েছেন ততক্ষণে। হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে ফেললেন মুহূর্তের মধ্যে। ‘আমার কমাণ্ডে কোন প্রহরী ডিউটির সময় ঘুমায় না।’ রাগে চেঁচিয়ে উঠেই সিপাহীর জ্যাকেটের উজ্জ্বল বোতাম সই করে ট্রিগার টিপে দিলেন। স্যর ট্রেভরের হৃৎপিণ্ড ভেদ করল তাঁর বুলেট।
কর্নেল ওয়ারেনডার যখন দেহটা পরীক্ষা করতে গেলেন তখনই ভয়াবহ ভুলটা বুঝতে পারলেন। আতঙ্কিত কর্নেল তক্ষুণি দুর্গের চিকিৎসককে আনতে লোক পাঠালেন। তবে ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। স্যর ট্রেভর সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছেন।
তার বাবা প্রিয়তম স্বামীকে মেরে ফেলেছে এটা সহ্য করা উইলফুলের জন্য ছিল অসম্ভব। যখন এটা শুনল উন্মাদ হয়ে গেল। বিয়ের পোশাকে দৌড়ে গেল সে জায়গাটায় যেখানে স্বামী বিদায় জানিয়ে তাকে শেষবারের মত চুমু খায়। পাথরের হাঁটাপথে স্বামীর রক্ত দেখে যন্ত্রণায় কেঁদে উঠল হতভাগা মেয়েটা। তারপর কেউ বাধা দেয়ার আগেই লাফ দিল দেয়ালের ওপাশে। নিচের পাথুরে দেয়ালে আছড়ে পড়ে মৃত্যু হয় তার সঙ্গে সঙ্গে।
ওই রাতেই পাপবোধ, মানসিক যন্ত্রণা ও মেয়ের পরিণতিতে স্তব্ধ কর্নেল কোয়ার্টারে নিজের কামরায় দরজা আটকে দেন। যে পিস্তল ব্যবহার করে বোকার মত বিয়ের রাতে মেয়েকে বিধবা বানান সে পিস্তলের গুলিতে আত্মাহুতি দেন নিজেও।
গত কয়েক শতকে তরুণী এই কনের প্রেতাত্মাকে দেখা গিয়েছে বহুবার। যে কামরাটা তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল সেখানে এবং যে পথে শেষ সময়টা কাটিয়েছে প্রিয়তমের সঙ্গে সেখানেই ফিরে ফিরে আসতে দেখা যায় উইলফুলের প্রেতাত্মাকে। কখনও কখনও খুব রাগী দেখায় তার চেহারা। তবে বেশিরভাগ সময় দুঃখী, হতাশাগ্রস্ত এক নারীর প্রতিমূর্তি হয়েই হাজির হয়।
ওই রাতে ছোট্ট ছেলেটার কবজি স্পর্শ করার কারণ সম্ভবত বাবার বোকামি আর হিংস্রতার কারণে যে পরিবারের স্বাদ সে পায়নি তার আকাঙ্ক্ষা। আদর্শ এক স্ত্রী এবং মা হবার স্বপ্ন বুকে নিয়েই মারা যায় দুর্ভাগা মেয়েটা। তার বদলে সে কিনা হলো কিনসেল ফোর্টের শ্বেতবসনা প্রেতিনী।
কিনসেল দুর্গের শ্বেতবসনা প্রেতাত্মার গল্প আসলে এক কিংবদন্তী। উইলফুল ওয়ারেনডারের ভূতই যে সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। তবে বিগত বছরগুলোতে যারাই তাকে দেখেছে একই বর্ণনা দিয়েছে, সাদা বিয়ের পোশাকের এক তরুণী। অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তাসহ অজস্র মানুষ এই ভূত দেখেছে। নিয়মিত হাজির হওয়া প্রেতাত্মার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই প্রেতিনী।
সাগরের ভুতুড়ে কাণ্ড
সাগরে ঘটে নানা ধরনের ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তি। ভুতুড়ে জাহাজ, প্রেত, দৈব ভবিষ্যদ্বাণী, নাবিকের অতৃপ্ত আত্মা এমন আরও কত কী!
ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী
এখন যে ঘটনাটি বর্ণনা করব আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবই মনে হতে পারে আপনার কাছে। কিন্তু এর প্রত্যেকটি অংশই খুব ভালভাবে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। তাই স্বীকার করে নিতে হবে সত্য কখনও কল্পনাকেও হার মানায়।
একসময় ‘আস্ক’-এর ক্যাপ্টেন ছিলেন রিচার্ড ব্রাউন। ১৮৬০-এর দশকের এক ভ্রমণের ঘটনা। কেবিনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ব্রাউন। এখন পর্যন্ত এবারের যাত্রায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। ক্যাপ্টেনের অধীনে বিশ্বস্ত কিছু ক্রু কাজ করছে। এমনিতে বেশ সাদাসিধে মানুষ ব্রাউন। সাগর, ক্রু আর নিজের জাহাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারলেই খুশি।
একমুহূর্ত পরেই তাঁর ফুট তিনেক সামনে এক নারীমূর্তিকে দেখতে পেলেন। যদিও নারীটির শরীর ভেদ করে সাগরটাও দেখা যাচ্ছে। মাথা ঝাঁকিয়ে, চোখ কচলে আবার তাকালেন ব্রাউন। তখনই শরীরে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। বুঝতে পারলেন আর যা-ই হোক, এ রক্তমাংসের কোন মানুষ নয়।
ছায়ামূর্তির আরও কাছাকাছি হলেন উঠে দাঁড়িয়ে। পরে বলেছিলেন কীভাবে যেন অতিপ্রাকৃত এই শক্তির বশে চলে এসেছিলেন।
‘এখনই জাহাজটা ঘুরিয়ে ফেলো,’ দুর্বল কণ্ঠে বলল সে, ‘বাড়ির দিকে ফিরে চলো। এই জাহাজটা অশুভ। যদি ফিরিয়ে না নাও তোমার সব ক্রুকেই হারাবে, যাবে নিজের জীবনটাও।’
সতর্কসঙ্কেত দিয়ে একমুহূর্ত দেরি না করে অদৃশ্য হলো অশরীরী I
কয়েক মিনিটের জন্য যেন নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেললেন ক্যাপ্টেন ব্রাউন। একের পর এক প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে মনে। আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? ওই জিনিসটাকে থোড়াই কেয়ার না করে কোর্স ধরেই চলতে থাকব? নাকি ভুতুড়ে ওই সতর্কবাণী মাথা পেতে নিয়ে জাহাজ ঘোরাব?
শেষ পর্যন্ত মালিকদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ব্রাউন। ক্রুরা অবাক হলেও বুঝতে পারল নিরাপত্তার ব্যাপারে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায়ই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্যাপ্টেন। আদেশ মেনে জাহাজের কাজ করতে লাগল তারা। ক্রুরা এটাও জানে মাল নির্দিষ্ট বন্দরে না পৌঁছে দিয়ে ফিরে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করছেন ক্যাপ্টেন।
ওয়ালসের কার্ডিফ বন্দরে যখন ভিড়ল জাহাজ যা প্রতিক্রিয়া হওয়ার তাই হলো। ব্রাউনকে বহিষ্কার করা হলো, সেই সঙ্গে তাঁর জাহাজ চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। কয়েক বছর বাদে ভেঙে পড়া ও বিধ্বস্ত অবস্থায় মৃত্যু হয় ব্রাউনের।