ইঞ্জিন রুম যেখানে ছিল সেখানে সাদা ওভারঅল পরা একটা লোককে কাজ করতে দেখা যায় কখনও। ধারণা করা হয় জাহাজের গোড়ার দিকের এক অফিসার তিনি। মেইন ডেকের নিচে আরেকটা অতিপ্রাকৃত শক্তির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। যদিও দেখা যায় না তাকে। তার দৌড়ে যাওয়ার এবং ওই সময় শিকল নাড়ানোর শব্দ পাওয়া যায়।
যেখানে প্রথম শ্রেণীর স্যুইটগুলো সেখানে চমৎকার পোশাকের ফিটফাট এক আত্মাকে দেখা যায়। কালো চুলের লোকটার গায়ে থাকে ১৯৩০-এর দশকের একটি স্যুট। এক আলোকচিত্রী নিজের অজান্তেই তার ছবি তুলে ফেলে। ওই ট্যুর গাইড জাহাজের ভেতরের ছবি নিচ্ছিল। এক পর্যায়ে একটা আয়নার ছবি তোলে সে। যখন ছবিগুলো ধোয়া হয় আয়নায় লম্বা, কালো চুলের এক লোকের প্রতিবিম্ব দেখা যায়। বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হওয়ার কারণ ছিল না, কিন্তু সমস্যা হলো লোকটার পরনের স্যুটটা ছিল ১৯৩০-এর দশকের। যে সময় ছবি তোলা হয় তখন ট্যুর গাইড একাই ছিল। আর সে নিশ্চয়ই এত পুরানো জমানার একটি স্যুট পরে ছিল না।
কেউ জানে না কুইন মেরির কয়টা ভূত বাতি জ্বালা- নেভানোর খেলায় অংশ নেয়। তেমনি বন্ধ দরজা খুলে যাওয়া কিংবা খোলা দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এখানকার একটা ভূত এসব বিষয়ে অবিশ্বাসী রিপোর্টার টম হেনিসির ধারণা বদলে দেয়।
১৯৮৩ সালের মার্চের একটা রাত কুইন মেরিতে একা কাটান টম হেনিসি। এই রাতটির কথা ভুলবেন না কখনও। পরিকল্পনামত কুইন মেরির সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গাগুলোয় রেখে যাওয়া হয় তাঁকে। শ্যাফট অ্যালিতে কাটান পঁয়ত্রিশ মিনিট। এসময় অস্বাভাবিক একটা কিছু তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়। হঠাৎ ভুতুড়ে একটা দুম দুম শব্দ কানে আসে। সাহসের সঙ্গে শব্দ লক্ষ্য করে এগোন তিনি। কিন্তু যখনই কাছে আসেন ওটা থেমে যায়। ঘুরে যেদিক থেকে এসেছেন সেদিকে রওয়ানা দেন। এসময়ই তাঁর পথে কোথা থেকে এসে পড়ে বিশাল এক তেলের ড্রাম। ঘুরে অপর একটা পথ বেছে নেন। তারপর কী মনে করে আবার পুরানো পথে ফিরে আসেন। এবার পথ আটকাল একটা নয় বরং দুটো তেলের ড্রাম। এসময়ই মনে হলো তাঁর পায়ের নিচের ক্যাটওয়াক কাঁপছে। যেন কিছু একটা তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। হেনিসি এবার আর সাহস ধরে রাখতে পারলেন না। ঘুরে অন্য দিকে ছুটলেন।
মোটামুটি স্নায়ু শান্ত হয়ে এসেছে তাঁর। এসময় মনে হলো কাছেই কোথাও কয়েকজন মানুষ কথা বলছে। কান পাততেই বুঝলেন তিনজন লোক আলোচনায় মগ্ন। একপর্যায়ে কেবল একজনের কথা শুনতে পেলেন। তবে ওই একজনের কথাটা পরিষ্কার শুনতে পেলেন। সে বলছে, ‘বাতিটা নিভিয়ে দিচ্ছি আমি।’ সৌভাগ্যক্রমে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবার আগেই আতঙ্কিত রিপোর্টার শ্যাফট অ্যালি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
টম হেনিসি কুইন মেরি থেকে বেরিয়ে এলেন এক বদলে যাওয়া মানুষ হিসাবে। ওই জায়গায় আর কখনও একা সময় কাটানোর কথা চিন্তাই করেননি তিনি। হাজারো মানুষ ফি বছর কুইন মেরি হোটেলে ভ্রমণ করে নিদেন পক্ষে একটা ভূতকে দেখার জন্য। অনেকের ইচ্ছা পূরণও হয়।
শেষ কথা, ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি হলিউডে মৃত্যুবরণ করা লেডি মেবেল ফর্টেস্কু-হ্যারিসনের কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল। কুইন মেরি স্থায়ীভাবে ডকে জায়গা নেয়ার পরেই খ্যাতির চূড়ায় উঠল। যখন ভবিষ্যদ্বাণী করেন তখন ওটা অবিশ্বাস্যই মনে হয়েছিল, কিন্তু ওটার উদ্বোধনের সময় তাঁর বলা কথাগুলো অতীতের জাহাজ, অধুনা এই জনপ্রিয় হোটেলের সঙ্গে তাঁর নামটাও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রাখল।
আইরিশ কনের ভূত
ছেলেটা যদি চিৎকার করে না উঠত, তবে বেবিসিটার মেে ভেবে বসত সে স্বপ্ন দেখছে।
পুরনো কিনসেল দুর্গ এবং এর ভূতের গল্পটা মেয়েটার জানা। এখানে বদলি হয়ে নতুন আসা অফিসার এবং তাঁর পরিবারের বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে রাজি হওয়ায় এমনকী বন্ধুরা তাকে গালমন্দও করেছিল। কিন্তু সাগরতীরের আইরিশ এই বন্দরশহরে একটা তরুণী মেয়ের জন্য পছন্দসই চাকরি জোগাড় করা মোটেই সহজ ছিল না। তাছাড়া এসব ভূত-প্রেতের কিচ্ছায় তার বিশ্বাস নেই। তারপরই শ্বেতবসনা ওই নারীকে সে নিজেই দেখে বসল।
কয়েক ঘণ্টা আগেই বাচ্চাদুটো ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে তরুণী জেগে ছিল। ছোট্ট ছেলে আর মেয়েটার সঙ্গে একই কামরায় ঘুমাতে একটুও খারাপ লাগে না তার। এটা তার চাকরির অংশ। সে বাচ্চাদের পছন্দ করে এ ব্যাপারেও সন্দেহ নেই। ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের নিয়মিত কোমল শ্বাস- প্রশ্বাসের শব্দ তাকে আনন্দ দেয়। ছোট্ট বিছানাদুটোর দিকে তাকিয়ে হাসল মেয়েটা। এসময়ই কামরাটার অপর পাশে একটা কিছুর দিকে দৃষ্টি গেল তার।
তরুণী এক নারীর দেহ এগুচ্ছে বাচ্চাদুটোর দিকে। গোটা পোশাকটা সাদা। দেখে পুরানো দিনের বিয়ের পোশাকের কথা মনে পড়ে। কাপড়ের সাদা ফুলের মত সাদা তার মুখ ও হাত। কামরাটার ওই পাশে কোন দরজা কিংবা জানালা নেই। তাহলে সে এল কোন্ দিক থেকে? আবার মেঝের ওপর দিয়ে আসছে যে কোন শব্দই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ভেসে ভেসে এগুচ্ছে।
মেয়েটা এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছে যে, নড়তে পর্যন্ত পারছে না। দু’জনের মধ্যে ছোট যে বাচ্চাটা, ভেসে ভেসে তার কাছে গিয়ে থেমে গেল শ্বেতবসনা নারী। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে শুধু চেয়েই আছে ন্যানি মেয়েটা। ছোট্ট ছেলেটির হাতজোড়া বুকের ওপর ভাঁজ করা। দীর্ঘক্ষণ ঘুমন্ত শিশুটির দিকে তাকিয়ে থাকল নারীমূর্তিটি। তারপর ফ্যাকাসে একটা হাত আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার কবজি স্পর্শ করল।