তবে এই হোটেলের সবচেয়ে বিখ্যাত ভূত নিঃসন্দেহে উইন্সটন চার্চিল। যদিও তাঁর প্রেতাত্মাকে নিয়মিত দেখা যায় না। স্টোররুমে এখনও হঠাৎ হঠাৎ তাঁর বিখ্যাত সিগারের ধোঁয়া ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। কখনও ওটার গন্ধও পান কেউ কেউ।
কুইন মেরি জাহাজের ভাণ্ডার . রক্ষক, যে এক ডাকাতিচেষ্টার সময় মারা যায়, সে-ই নাকি বি-৩৪0 কামরাটাকে ভুতুড়ে করে রেখেছে। হোটেলের অনেক অতিথিই বিভিন্ন বস্তু যেমন কাপ-প্লেট কামরাটায় উড়ে বেড়াতে দেখেছেন, কখনও আপনাআপনি খোলে, বন্ধ হয় ড্রয়ারগুলো। আবার ঘুমাতে গেলে তাদের বিছানা ধরে কেউ টানতে থাকে।
আরও কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর কামরাও অতিপ্রাকৃত উপস্থিতির জন্য বিখ্যাত। রাতে শোনা যায় পানি পড়ার শব্দ। সকালবেলা বিনা কারণে বেজে ওঠে ফোন। মাঝরাতে হঠাৎ একে একে জ্বলতে শুরু করে একটার পর একটা বাতি। অতিথিরা শুনতে পান ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ, কখনও আবার অদৃশ্য কোন শক্তি টান দিয়ে নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তাদের কম্বল।
জাহাজের রান্নাঘরটা যেখানে ছিল সেখানে একটা অতিপ্রাকৃত কিছুর আনাগোনা আছে। ধারণা করা হয় সেটি খুন হওয়া এক ব্যক্তির আত্মা। প্রচণ্ড রাগী ও অশান্ত এক আত্মা ওটা। এমনকী যখন ‘গ্রে গোস্ট’ নাম নিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে ঘুরে বেড়াত তখনও এর উপস্থিতির কথা শোনা যায়। ওই সময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়া এক তরুণ রাঁধুনিকে আক্রমণ করে। ওই ঘটনা নিয়ে জাহাজে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে ওই তরুণকে একটা গরম স্টোভের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা হয়। কিচেনের চারপাশে এখনও প্লেট, কাপ এসব ছুঁড়ে মারে ওই অতৃপ্ত আত্মা। কখনও অবিচারের শিকার হওয়া লোকটার করুণ আর্তনাদ শোনা যায়। ওই জায়গার বাতিগুলো আপনাআপনি জ্বলতে নিভতে থাকে। রান্নাঘরের নানা সরঞ্জাম গায়েব হয়ে যায় হঠাৎ হঠাৎ।
কুইন মেরির সব ভূতেরাই যে মানুষ ছিল তা নয়। একটা কুকুরের চিৎকার শোনা যায় প্রায়ই। জীবিত থাকা অবস্থায় ওটা ছিল একটা আইরিশ সেটার। বলা হয় মালিকের খোঁজে সবসময় ছটফট করতে থাকে ওই কুকুরভূত। কুইন মেরি যখন একটা প্রমোদতরী ছিল তখন পোষা প্রাণী জাহাজে তোলা যেত। তবে ভিআইপি যাত্রী ছাড়া অন্যদের পোষা প্রাণীদের রাখতে হত সানডেকের একটা বিশেষ কামরায়। ওটাই খোঁয়াড় হিসাবে ব্যবহৃত হত। এক ইংরেজ যখন ভ্রমণে বের হতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন প্রিয় আইরিশ সেটার কুকুরটাকে। ভাল প্রশিক্ষণ পাওয়া কুকুরটা মালিকের সঙ্গে জাহাজের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালবাসত। তবে সে এটাও জানত এরপর তাকে আবার আটকা পড়তে হবে ওই খোঁয়াড়ে।
তো এই রুটিনটা নিত্যই চলে আসছিল। একদিন হঠাৎ কুকুরটা জোরে জোরে চেঁচাতে লাগল এবং কুকুর রাখার ঘরটার দরজায় জোরে জোরে আঁচড়াতে লাগল। মনে হচ্ছে যেন ওখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় সে। আপাতদৃষ্টিতে ওটার মধ্যে কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু অস্থিরভাবে গোটা কামরাটা চক্কর কাটতে শুরু করে।
খোঁয়াড়ের সুপারভাইজার একজনকে পাঠাল কুকুরের মালিকের কেবিনে। আশা করল হয়তো মালিক তার প্রাণীটাকে শান্ত করতে পারবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল লোকটা বিছানায় মরে পড়ে আছে। কুকুরটা নিশ্চয়ই অজানা কোনভাবে নিজের বন্ধু ও প্রভুর মৃত্যু টের পেয়েছিল। তাই এমন অস্থির আচরণ করছিল।
কুকুরটা এতটাই আঘাত পায় ঘটনার অল্প কিছুদিনের মধ্যে সে-ও মারা যায়। এখনও তার আর্তনাদ শোনা যায়। কেউ কেউ ওই শব্দ অনুসরণ করে এর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যতই সেদিকে যেতে থাকে ভুতুড়ে আওয়াজটা আরও দূরে সরে পড়তে থাকে। হয়তো এটা দিয়ে বোঝা যায় দুর্ভাগা প্রাণীটা এখন মানুষের ধরাছোঁয়ার চেয়ে অনেক দূরে।
সিনিয়র সেকেণ্ড অফিসার উইলিয়াম স্টার্কের প্রেতাত্মাকে শনাক্ত করা যায় খুব সহজেই। কারণ বিশাল কুইন মেরির গোটা এলাকাজুড়ে চক্কর দিতে দেখা যায় তাকে। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাজেই মৃত্যু হয় স্টার্কের। মাতাল অবস্থায় ভুলে বোতল থেকে টেট্রাক্লোরাইড খেয়ে ফেলে সে। সাথে সাথে মৃত্যু হয় তার। শেষ ককটেলটা যে ভয়ানক বিষাক্ত ছিল এখনও এ ব্যাপারটা বুঝতে না পারায় তার অতৃপ্ত আত্মাটা দ্বিধাগ্রস্তভাবে ঘুরে বেড়ায় হয়তো। তবে একেবারেই নিরীহ ধরনের আত্মা সে।
সাদা ইউনিফর্ম পরা এবং অনেকগুলো সম্মানসূচক ফিতা জামায় আটকানো আরেক গর্বিত নাবিকের আত্মাকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় কুইন মেরিতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে তার অবয়বটা পরিষ্কার হলেও একেবারে স্বচ্ছ।
কুইন মেরির প্রধান লাউঞ্জ এখন কুইন’স সেলন বা অভ্যর্থনা কক্ষ হিসাবে পরিচিত। এখানেও আছে এক অশরীরীর আনাগোনা। কর্মচারীদের বর্ণনায় সাধারণ এক সাদা সান্ধ্য পোশাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অপরূপা এক নারীকে। কখনও ছায়ার মধ্যে একাকী নাচে সে। হোটেলে ভ্রমণের সময় একটা ছোট্ট মেয়ে এমন একজনের কথা বলে। গাইড কিছু না দেখতে পেয়ে ট্যুর চালিয়ে যায়। মেয়েটা বারবার ওই নারীকে দেখার কথা বলতে থাকে। অবশ্য মেয়েটার মত আরও অনেক পর্যটকই তাকে দেখেছে।
কুইন মেরির একটা অংশকে পুরানো এক ইংলিশ পানশালার আদলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে একটা অশরীরীর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সবসময় নিজের উপস্থিতি জানান দেয় না সে, যখন দেয় রীতিমত জাহির করে। একটার পর একটা প্লেট উড়ে গিয়ে আছড়ে পড়তে থাকে দেয়ালে। ঝুলতে থাকা ছবি এমনকী ঘড়িও উল্টো হয়ে যায়।