‘না,’ জবাব দিলাম।
‘তবে অন্য কেউ করেছে। দেখো, চিমটা বা অন্য কোন যন্ত্র দিয়ে এখানে খোঁচা মারা হয়েছে।’
যা হোক, আমার বন্ধু জিনিসটা রেখে দিল। কয়েক হপ্তা বাদে তার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হলো আমার। বন্ধুটি জানাল তখন, সে রাতে ইদানীং ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখছে। তারপর হেসে জানাল আমার বেচে দেয়া দাঁতগুলোর উপস্থিতির কারণেই এটা ঘটছে বলে ধারণা তার।
‘প্রতি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠছি আমি। মনে হয় আমি কয়েকটা দাঁত গিলে ফেলেছি। আমার গলা দিয়ে ওগুলো নেমে যাওয়ার অনুভূতিটা এতটাই প্রকট যে বেশ কতকটা সময় লাগে ওটা যে দুঃস্বপ্ন তা বুঝতে। এই দাঁতগুলো দেয়ার আগে এ ধরনের কিছু ঘটেনি আমার জীবনে। তাই আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছে এই সমস্যার মূলে দাঁতগুলো। এর মধ্যে আমার এক রোগীর এক পাটি সুন্দর দাঁতের প্রয়োজন হয়। খুশি মনে তার মুখে ওগুলো বসিয়ে দিয়ে এর থেকে মুক্তি পাই। পরে তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন সে জানাল দাঁতগুলো নিয়ে বেশ আনন্দেই আছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।’
বিষয়টা আমাকে আরও বেশি রহস্যের মধ্যে ফেলে দিল। একদিন যে মহিলার কাছ থেকে দাঁতের পাটিটা কিনেছিলাম সে আবার আমার দোকানে এল, অন্য কিছু জিনিস বিশেষ করে পুরুষ মানুষের বিভিন্ন অলঙ্কার বিক্রির জন্য। তখন একজন কর্মচারীকে রেখে সাবধানে মহিলাকে অনুসরণ শুরু করলাম। ভাগ্য আমার সাথে ছিল। .নাইটসব্রিজের এক ফ্ল্যাটে তাকে ঢুকতে দেখলাম। সেদিনের মত চলে গেলাম। পরের কয়েকদিন নানা ব্যস্ততায় আর ওদিকে যেতে পারলাম না। তারপর একদিন হাজির হলাম। কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জানতে পারলাম মহিলার নাম মিসেস আরবাথনট। বিধবা। অল্প কিছুদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। তার ক’দিন পর পাততাড়ি গুটিয়ে এখান থেকে চলে গিয়েছেন। তাকে কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম মহিলার স্বামী কীভাবে মারা গিয়েছেন তা সে জানে কিনা। লোকটা জানাল দুর্ঘটনাবশত নিজের কয়েকটা নকল দাঁত গিলে ফেলেন ভদ্রলোক। তখন একটা অপারেশন করা হয় তাঁর। ওই সময়ই মারা যান। সে আরও জানাল মি. আরবাথনট মাঝে মাঝেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়তেন। বিশেষ করে স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগছিলেন। কয়েকবারই তাঁকে জলদি ডাক্তার ডেকে আনতে হয়েছে।
এখন আমার এবং দন্ত্য চিকিৎসক বন্ধুর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে বাকি রইল না এই দাঁতের পাটির মধ্যে কোন একটা অস্বাভাবিক বিষয় আছে। আর এটা যেভাবে হোক সমাধান করতে হবে আমাকে। মিসেস আরবাথনট এবং তাঁর অতীত সম্পর্কে সেজন্য আরও জানতে হবে আমাকে। কেয়ারটেকার জানাল মিসেস আরবাথনটের মেইড র্যানির সঙ্গে দারুণ ভাব ছিল তার। তবে মিসেস পুরুষদের দেখতে পারেন না বলে এটা গোপন রাখে তারা।
কয়েকদিন পর র্যানির সঙ্গে দেখা করলাম। ঠিকানা আগেই তার প্রেমিক ওই কেয়ারটেকারটার কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিলাম। কিছু টিপসের বিনিময়ে র্যানি আমাকে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিল
বলতে শুরু করল সে, ‘আরবাথনটদের পারিবারিক জীবন মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। যদিও তাঁর স্ত্রী বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। একজন অসুস্থ লোকের সঙ্গে ঘর করতে মহিলা খুব সন্তুষ্ট না হলেও বেশি ঝামেলাও পাকাচ্ছিলেন না। তারপরই কয়েকজন পুরুষবিদ্বেষী নারীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন থেকেই পুরোপুরি বদলে গেলেন মিসেস আরবাথনট। স্বামীর কোন কথাই আর ভাল লাগল না তাঁর। এমনকী একটা বই কিংবা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে বললেও গালমন্দ করতেন। তাঁর ওই বান্ধবীরা যত বেশি যাতায়াত করতে লাগলেন, মিসেসও আরও বেশি উগ্র হয়ে উঠলেন।’
র্যানি আমাকে আরও জানাল একদিন মিসেস এবং তাঁর এক বান্ধবীর কথার একটা অংশ শুনে ফেলে সে। ডাইনিং রুমে ফায়ারপ্লেসের ধারে বসে ধূমপান করছিলেন এবং কথা বলছিলেন তাঁরা। তখন ডিনারের কাপড় বিছাতে যায় র্যানি। এসময় দেখে মিসেস খুব ঝুঁকে বান্ধবীর কথা শুনছেন। এসময় বান্ধবীর কিছু কথা কানে আসে তার, ‘১৮৯৬ সালের পর আর কোন মহিলার ফাঁসি হয়নি এই ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে। তাছাড়া এমন অনেকগুলো ঘটনার কথা তোমায় বলতে পারি যেখানে হার্ট অ্যাটাকে বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে ভাবা হয়েছে অথচ এর পেছনে কারও হাত ছিল। কিন্তু কেউ সন্দেহ পর্যন্ত করেনি।’ তারপর হঠাৎ গলা নামিয়ে ফেলেন মহিলা যেন নাম শুনতে না পায় র্যানি। ‘সিঁড়ির গোড়ায় ঘাড় ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ধরে নেয়া হয় দুর্ঘটনাবশত তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমি জানি আসলে বিষয়টা তা নয়। ভদ্রলোক সবসময় মাতাল হয়ে থাকত। তাই তার স্ত্রী কোরালি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার কাছে স্বীকারও করে সে।’
র্যানি এরপর আর কিছু শোনেনি। কারণ ওই কামরা থেকে বেরিয়ে আসতে হয় ওই মুহূর্তে। তবে পরের দিন বিষয়টা কিছুটা পরিষ্কার হয় তার কাছে। ওই দিন একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে র্যানি। এসময় দেখে রান্নাঘরে তার মালকিন এক পাটি দাঁত নিয়ে কিছু একটা করছেন। তাঁর এক হাতে দুটো চিমটা, অপর হাতে দাঁতের পাটি। তারপরই তার ভেতরে ঢোকার শব্দ পেয়ে আলগোছে চিমটা আর দাঁত পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন। ওই দিন সকালে নাস্তার সময় র্যানি জানতে পারে মি. আরবাথনট দুই-তিনটা দাঁত গিলে ফেলেছেন। যখন ডাক্তার এলেন, মিসেস আরবাথনট তাঁকে জানালেন সবসময় স্বামীকে ঢিলা দাঁতগুলোর ব্যাপারে সতর্ক করলেও তাঁর কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি তিনি। র্যানি জানাল, তবে ওই দিন সকালে কিচেনে চিমটা দিয়ে দাঁতে কী কারিগরি ফলিয়েছে এটা ‘ব্যাখ্যা করেননি একবারের জন্যও।