শুরু থেকেই এবার বেশ বেকায়দায় পড়ে ইংরেজ বাহিনী। কোনভাবেই ফরাসী রক্ষণ-দুর্গ ভাঙতে পারছিল না। ফরাসী গোলন্দাজ আর পদাতিকদের পাল্টা আক্রমণে রীতিমত দিশেহারা অবস্থা রেজিমেন্ট ৪২-এর।
চার ঘণ্টা ভয়াবহ যুদ্ধের পর জেনারেল অ্যাবারক্রমবি উপায়ান্তর না দেখে পিছু হটার নির্দেশ দেন। অন্তত সাতশো সেনা নিহত কিংবা আহত হয় এই লড়াইয়ে।
এঁদের মধ্যে ছিলেন ইনভেরাওয়ি। সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করলেও তাঁর ক্ষতটা এতটাই মারাত্মক যে এটা নিশ্চিত, মৃত্যু সমাগত তাঁর। পাশেই পড়ে আছে ইনভেরাওয়ির ছেলের মৃতদেহ, এই রেজিমেন্টের এক অফিসার। কর্নেল ইনভেরাওয়ির অবস্থা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলেন। জমিদার চোখ পিট পিট করছেন। কথা বলার চেষ্টা করলেন। কেবল ফিসফিস করে কয়েকটা শব্দ বললেন, ‘তুমি ধোঁকা দিয়েছ…এটাই টিকোনডেরোগা… কারণ তাকে দেখেছি আমি…’ যন্ত্রণায় কালো হয়ে গেল তাঁর মুখটা। পরমুহূর্তেই মারা গেলেন।
ওই দিনের ঘটনাই, তবে অনেক দূরে স্কটল্যাণ্ডে, এডেরেইনের মিস ক্যাম্পবেল এবং তাঁর বোন কিলমালি থেকে ইনভেরারের দিকে হাঁটছিলেন। খালের ওপরের নতুন সেতুটায় এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। এসময় বোনেদের একজনের আকাশের দিকে চোখ গেল। চিৎকার করে বোনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, ‘আকাশের দিকে তাকাও। জলদি। তুমিও কি দেখতে পাচ্ছ?’
ওপরে তাকাতেই মুখ হাঁ হয়ে গেল তাঁর বোনের। একটা বড় ধরনের যুদ্ধের দৃশ্য যেন মঞ্চায়িত হচ্ছে সেখানে। রং দেখে রেজিমেন্টগুলোকে আলাদা করতে পারলেন। অনেক বন্ধুকেও চিনতে পারলেন এঁদের মধ্যে। একপর্যায়ে তাঁদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে ইনভেরাওয়ি এবং তাঁর ছেলে মাটিতে পড়লেন। পরিচিত আরও অনেককেই ভূলুণ্ঠিত অবস্থায় আবিষ্কার করলেন। যখন ইনভেরারেতে পৌঁছলেন তখন খুব উত্তেজিত দু’জনেই। সব বন্ধুকে তাঁদের দেখা ওই দৃশ্যের বর্ণনা দিলেন। এমনকী কাকে কাকে পড়ে যেতে দেখেছেন, তারিখসহ লিখে রাখলেন।
শুধু তাঁরাই যে এই দৈব দৃশ্য দেখেছেন তা নয়। বেশ বিখ্যাত এক চিকিৎসক স্যর উইলিয়াম হার্ট ইনভেরারে দুর্গের পাশ দিয়ে এক বন্ধু এবং এক ভৃত্যসহ হাঁটছিলেন। তাঁরাও আকাশে ওটা দেখেন। মিস ক্যাম্পবেলদের বর্ণনার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় তাঁদের অভিজ্ঞতাও।
কয়েক হপ্তা পরে টিকোনডেরোগায় এই ব্যর্থ আক্রমণের বিষয়ে একটা বিবৃতি দেয় আর্মি গেজেট। তার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায় ওই দৈব দৃশ্যের বর্ণনা।
তবে গেজেট আসার বহু আগেই আরগিলে নেমে এসেছে বেদনার কালো ছায়া। জমিদার ইনভেরাওয়ির বন্ধুরা জেনে গেছেন সৎ ভাইয়ের প্রেতাত্মা তার কথা রেখেছে, ‘টিকোনডেরোগাতে আবার দেখা হবে আমাদের….
নাইটসব্রিজের ভুতুড়ে দাঁত
ঘটনাটি সংগ্রহ করেন বিখ্যাত প্রেত গবেষক ইলিয়ট ও’ডনেল।
লণ্ডনের পাতাল রেলস্টেশনের একশো গজের মধ্যে নাইটসব্রিজে একটি ফ্ল্যাট আছে। বলা হয় ওটা ভুতুড়ে। আর এর ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটাকে সব কিছু বিবেচনা করে সত্যের কাছাকাছি মনে হয়েছে ও’ডনেলের কাছে। এটা তিনি শোনেন বন্ধকের কারবার করা হলবোর্নের এক লোকের কাছ থেকে। এটি বরং তাঁর মুখ থেকেই শুনব আমরা।
দশ বছর আগের ঘটনা (বিশ শতকের শেষ দিকে)। মুখ ঢাকা এক নারী আমার দোকানে আসেন। বেশ কয়েকটি আংটি, একটা ঘড়ি, টাইয়ের পিন আর এক সেট নকল দাঁত, যার ওপরের পাটির দুটো খোয়া গিয়েছে আর কয়েকটা আলগা, কিনতে অনুরোধ করলেন মহিলা।
‘তোমার বিজ্ঞাপনটা পড়েছি আমি। সেখানেই ‘জেনেছি নকল দাঁত কেনো তুমি। আর এটা আমার স্বামীর, যিনি মারা গিয়েছেন। যেহেতু এটার আর কোন প্রয়োজন নেই, আমার মনে হলো বিক্রি করে দেয়াই বিবেচকের কাজ হবে। এগুলো সোনার, ঠিক না?’
‘আংশিক, ম্যাম।’ তাঁর দিকে আরও ভালভাবে দৃষ্টি দিয়ে বললাম। তাঁর কণ্ঠে এমন একটা কিছু ছিল যেটা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মানুষের কণ্ঠ সবসময়ই আমাকে আকৃষ্ট করে। এই কণ্ঠটা খুব কর্কশ মনে হলো আমার, স্বামীর জন্য কোন আবেগের ছিটেফোঁটাও তাতে আছে বলে মনে হলো না আমার।
‘তা কত চাও তুমি?’ জানতে চাইলাম।
‘কত দেবে?’ জানতে চাইলেন ভদ্রমহিলা।
বললাম। বেশ কিছুটা দর কষাকষির পর আমার প্রস্তাবে রাজি হলেন। তারপর টাকা নিয়ে বিদায় নিলেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কেন যেন ওই মহিলার শীতল কণ্ঠস্বরটা ঘুরে-ফিরে বাজতে লাগল আমার কানে। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি, বলতে পারব না। হঠাৎ যন্ত্রণায় চিৎকার করে জেগে উঠলাম। মনে হলো নিজের একটা দাঁত গিলে ফেলেছি। মুখের ভেতর হাত দিয়ে সবগুলো দাঁতকে ঠিক জায়গায়ই পেলাম। তারপরও বারবার পরীক্ষা করতে লাগলাম। একপর্যায়ে নিশ্চিত হলাম ওটা একটা স্বপ্ন ছিল। আর গলায় দাঁত আটকে মরারও কোন সম্ভাবনা নেই আমার। সকালে ঘুম ভাঙতে গোটা ঘটনাটা মন থেকে ঝেড়ে-মুছে দূর করে দিলাম। রাতে আবারও একই ঘটনা ঘটল। একই দুঃস্বপ্ন দেখলাম। চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় উঠে বসলাম আবারও। ঘর ঘর শব্দ করছি। গলা চেপে ধরে আছি ভয়ানকভাবে। নকল দাঁতগুলোর প্রতি ভয়ানক একটা বিদ্বেষ অনুভব করলাম। যে কোন মূল্যে এর থেকে মুক্ত হতে চাইলাম। ওই সন্ধ্যায় আমার এক চিকিৎসক বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম। ওটা ভালভাবে পরীক্ষা করে সে বলল, ‘পাটি থেকে ওগুলো কি টেনে তোলার জন্য জোরাজুরি করেছ?’