তবে মিসেস অ্যানের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। কারণ এরপর এক রাত একা ওক রুমে ঘুমালেন তিনি। আবারও সেই সাদা তরুণীকে দেখলেন, এবার কামরার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁদছে, হাত ঝাঁকাচ্ছে। নিচে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে বেদনার্ত চোখে। পরের দিন এক মিস্ত্রীকে ডাকা হলো মেঝের ওই অংশের কাঠের পাটাতন তুলে ফেলতে। তবে একসময় ওখানে যা-ই থাকুক না কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিক ঘটনা কমতে লাগল বাড়িটাতে। একপর্যায়ে থেমে গেল একেবারে। বেশ নিশ্চিন্ত হলো পরিবারটি। কিন্তু তখনও একটা ঘটনা ঘটার বাকি। রহস্যময় ঘটনা শুরুর কয়েক বছর পর ব্যবসার প্রয়োজনে জন চ্যাপম্যান পরিবারসহ আবার লণ্ডনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাবার জন্য স্থির করা দিনটির কয়েকদিন আগের এক সকালে ঘুম ভেঙে অ্যান দেখেন তাঁর খাটের কিনারে কালো মুখের এক লোক দাঁড়িয়ে। পরনে জ্যাকেট, গলায় লাল স্কার্ফ। যখন তার দিকে তাকালেন সে অদৃশ্য হলো। পাশে শুয়ে থাকা জন কিছুই টের পাননি। অ্যান কিছু বলেনওনি।
কয়েকদিন পর দেখা গেল বাড়ির কয়লার মজুত শেষ। চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়িটা উষ্ণ রাখতে আরও কিছু দরকার। জন বললেন আজ লণ্ডন যাওয়ার পথে অর্ডার দিয়ে যাবেন। পরদিন সকালে অ্যান তাঁকে ধন্যবাদ দিলেন বিষয়টা মনে রাখার জন্য। কিন্তু তিনি জানালেন একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন কয়লার ব্যাপারটা। চাকরদের কেউও কয়লার অর্ডার দেয়নি। অ্যান নিজেই গ্রামে গিয়ে তদন্ত করা স্থির করলেন। কয়লা • ব্যবসায়ী জানাল, সে কয়লা পাঠায় ফ্যাশনেবল জ্যাকেট পরা, গলায় লাল স্কার্ফ জড়ানো এক কালো মুখের তরুণের অর্ডারের প্রেক্ষিতে। সে তাকে না চিনলেও ভেবেছে চ্যাপম্যানদের নতুন কর্মচারী।
যখন সত্যি ভুতুড়ে বাড়িটা ছেড়ে লণ্ডনের নতুন বাড়িতে উঠলেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মি. এবং মিসেস চ্যাপম্যান’। তখনই জন জানালেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন চেস্টনাটের ওই বাড়িটা আসলেই ভুতুড়ে। অসুখী ওই তরুণী মা আর অশুভ নার্স ব্ল্যাকের প্রেতাত্মার কারণে তাঁদের আগে অনেক ভাড়াটেই বাড়িটা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
লণ্ডনের ভূতের রাজ্যে
ইলিয়ট ও’ডনেল একজন গোস্ট হান্টার। ভুতুড়ে বাড়ি বা জায়গার খোঁজে ইংল্যাণ্ডের অনেক এলাকায়ই অভিযান চালিয়েছেন। তাঁর কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি আজ।
সাধারণত ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা বললে আমাদের মনে হয় অভিজাত বাড়ি, ম্যানশন বা পুরানো কোন প্রাসাদের কথা। কিন্তু লণ্ডনের দরিদ্র এলাকাগুলোতেও নানা ধরনের অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে। যেমন প্যাকহ্যাম রের এক দোকানের কথা বলব এখন।
আগস্টের এক সন্ধ্যা। একটু একটু করে আঁধার হতে শুরু করেছে চারপাশ। দোকানে ঢুকেই চমকে গেলাম। এক মহিলাকে ব্র্যাণ্ডি পান করাচ্ছে দোকান মালিক। মহিলাটি মেঝেতে আধবসা আধশোয়া অবস্থায় আছেন। পুরোপুরি জ্ঞান আছে এটাও বলতে পারব না।
‘হ্যালো, মি. ডি., ঘটনাটা কী?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘মহিলাটি একটু বেশি রকম চমকে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’
বিষয়টা কী জানতে চাইলাম। দোকান মালিক আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অমত করল না খুলে বলতে। জানাল যখন বেকন কাটছিল এসময়ই মহিলাটি দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন। তারপরই মহিলাটি চিৎকার করে উঠে মূর্ছা যান। তিনি ভেবেছেন দোকান মালিক তার হাতের আঙুল কেটে ফেলেছে।
‘অবশ্য,’ বলল সে, ‘তুমি বলতেই পার এটা একটা হ্যালুসিনেশন কিংবা দৃষ্টিবিভ্রম টাইপের কিছু। তবে এই জায়গার মধ্যে আসলেই অস্বাভাবিক একটা কিছু আছে। সন্ধ্যার একই সময় একই ধরনের ঘটনা দেখার কথা বলেন ক্রেতারা। তাঁরা দেখেন আমার একটা আঙুল কাটা পড়ছে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এটা সবসময় বেকন কাটার সময়ই হয়, চিজ, বিফ কিংবা অন্য কিছু কাটার সময় নয়। বিষয়টা আমার মনের মধ্যে এতটাই চাপ ফেলে যে কখনও মনে হয় সত্যি বুঝি একটা আঙুল কেটে ফেলছি। চিৎকার করে গিন্নিকে ডাকতে শুরু করি।’
‘তাহলে, তোমার স্ত্রী বা অন্য কাউকে বেকনের ব্যাপারটা দেখতে দাও না কেন?’ পরামর্শ দিলাম, ‘তাহলে হয়তো এটা ঘটবে না আর।’
তবে ওটা ঘটল, আরও ভয়ঙ্করভাবে। পরের বার যখন গেলাম তখন ঘটনাটা খুলে বলল সে।
‘জায়গাটা ছাড়ছি আমি। এটা অনেকটাই তোমার কারণে। মনে আছে অন্য কাউকে বেকনের দায়িত্ব দিতে বলেছিলে?’
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।
‘তো কাজটা করতে দিই আমার শালীকে,’ বলতে লাগল সে, ‘আমাদের সঙ্গে এসে বাস করার আগে ব্রিক্সটনে একটা রেস্তোরাঁর ব্যবসা ছিল তার। প্রথম রাতে যখন কাজটা করল কিছুই ঘটল না। তবে দ্বিতীয় রাতে তার আতঙ্কিত চিৎকারে দোকানে দৌড়ে যায় আমার স্ত্রী। আমার শালী চিৎকার করে বলছিল, ‘ওহ! আমি আমার আঙুল কেটে ফেলেছি।’ চিৎকারটা আমিও শুনেছি। তবে সেই পুরনো ঘটনা মনে করে পাত্তা দিইনি মোটেই। বরং হাসছিলাম মুচকি মুচকি। কিন্তু তারপরই শালী সিসির ওখান থেকে দৌড়ে কাউন্টারে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে আমার স্ত্রী বলল, ‘এখনই একজন ডাক্তারের খোঁজে যাও। ওর আঙুলটা পুরোপুরি কাটা পড়েছে।’’
ক্যানিংটন পার্কের এক বাড়িতেও বেশ অদ্ভুত রকম ভুতুড়ে ঘটনা ঘটে। পুরানো ধাঁচের বাড়িটার থেকে কিছুটা দূরে রাস্তা শুরু হয়েছে।