মোটামুটি সিকি মাইল জন্তুটা তাদের পেছন পেছন আসে। ওটার জিভটা বেরিয়ে ছিল মুখ থেকে। টকটকে লাল। একপর্যায়ে সে এবং তার বাবা যখন রাস্তা ছেড়ে কটেজের দিকে চলে যায় কুকুরটা তাদের গেটের পাশ দিয়ে ছুটে অদৃশ্য হয়। তার বাবা তখন বলেন, এই অশরীরী কুকুরটা বহু বছর ধরে এভাবেই মাঝে মাঝে চেহারা দেখিয়ে আসছে। কারও ক্ষতি করে না। মিসেস জুয়েল জানায়, পর পর কয়েক রাত ওটার কথা ভেবে ঘুম হয়নি তার।
চোদ্দ বছর বয়সে আবার কুকুরটা দেখে সে। সমবয়সী দুটি মেয়ের সঙ্গে একটা ফার্ম থেকে ফিরছিল। উইক হিলের দিকে যাওয়া একটা মেঠো পথ পেরোচ্ছিল মেয়েরা। তিনজনই দেখে মাটিতে নাক প্রায় ঠেকিয়ে দৌড়চ্ছে বিশাল ওই জানোয়ারটা, আর প্রচণ্ড শব্দে গর্জাচ্ছে। মনে হচ্ছিল কুকুরদের গোটা একটা দল চিৎকার করছে খেপে গিয়ে। আরেকবার বাড়িতে পৌছার ঠিক আগে তাকে অতিক্রম করে যায় কুকুরটা। ওটার পথ থেকে লাফিয়ে সরে যায় সে, আর কুকুরটা পরমুহূর্তে হঠাৎই অদৃশ্য হয়।
বহু বছর পর, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ততদিনে, টরিংটন মার্কেট থেকে একটা টাট্টুতে চেপে ফিরছিল বাবার সঙ্গে। টরিংটন এবং অ্যালেন’স উইকের মাঝখানে হঠাৎ একটা ডোবামত জায়গা থেকে লাফিয়ে তাদের সামনে চলে আসে ওই অশুভ কালো জন্তুটা। টাট্টুটা এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে, পাগলের মত ছুটতে শুরু করে তাদের নিয়ে। সে আমাকে এটাও জানায় কিছুদিন আগেও (১৯২৫-২৬) ওই এলাকায় একে দেখা গিয়েছে। যদিও বিষয়টা নিয়ে কেউ মুখ খোলেনি।
১৯৩২ সালের ঘটনা। বিডফোর্ডের দুই মাইল দূরে এক যাজকের বাড়িতে বাস করছিলাম আমরা। ওই সময় আমার বোন এবং তার স্বামীও ছিল আমাদের সঙ্গে। বোন জামাইয়ের তখন ছুটি চলছিল। জানুয়ারির এক রাতে উইংলেইফে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ডিনারের দাওয়াতে গিয়েছিল স্বামী-স্ত্রী। ফেরে মধ্যরাতের একটু পরে। টরিংটন থেকে বিডফোর্ডের রাস্তাটা পড়ে তাদের এই যাত্রায়। ঘুমিয়ে পড়ায় রাতে তাদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে আমার বোন জানতে চায় বিডফোর্ড এবং উইংলেইফের মাঝখানের পথে কালো কুকুরের দেখা দেয়ার ব্যাপারে কিছু জানি কিনা। জবাবে জানাই ওই রাস্তায় এ ধরনের কিছুর কথা শুনিনি। তখন আমার বোন আমাকে তাদের গত রাতের অভিজ্ঞতাটা বলে।
টরিজের পাশের ফ্রিথেলস্টকের নিচের রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে আসছিল তারা। হঠাৎ গাড়ির হেডলাইটের আলোয় যেটাকে দেখা গেল সেটা দেখতে কুকুরের মত হলেও এত বিশাল কুকুর কোন মানুষ কখনও দেখেছে কিনা বলতে পারবে না। ওটা তাদের এতটাই কাছে ছিল যে সংঘর্ষ এড়াবার জন্য কড়া ব্রেক কষতে হলো তার স্বামীকে। তারপরও তাদের ধারণা ছিল কুকুরটা আঘাত পেয়েছে। কিন্তু গাড়ি থামার পর কোথাও দেখা গেল না ওটাকে।
আমার ম্যাপটা এনে সামনে মেলে দিতেই ওরা আমাকে দেখাল কোথায় ঘটনাটা ঘটে। ওখান থেকে সরতে হলে জন্তুটাকে হয় এক পাশের খাড়া পাথুরে পাহাড় বাইতে হত, নইলে উঁচু দেয়াল লাফিয়ে টপকে নদীতে পড়তে হত। কিন্তু কোনটাই সম্ভব নয়।
আমার বোন সকালরেলায়ও ওই ঘটনাটার কথা মনে করে কাঁপছিল। কোন কুকুর হতেই পারে না ওটা, এটা তার বিশ্বাস। এদিকে আমার বোনের স্বামী সবসময়ই একজন অতি যুক্তিবাদী মানুষ। তার মতে সব অদ্ভুত ঘটনারই কোন না কোন জাগতিক ব্যাখ্যা থাকতে বাধ্য। কিন্তু সে আমাকে বলল বিশাল ওই জিনিসটার হঠাৎ শূন্য থেকে হাজির হওয়া কিংবা আবার ওটার মিলিয়ে যাওয়ার কোন ব্যাখ্যা অন্তত তার কাছে নেই।
আশি বছর বয়সী মি. ফ্রিম্যান, একসময় যিনি যাজক ছিলেন, আমাকে ১৯২৩ সালে বলেন, ট্রভেরটনে এখনও কালো কুকুরটাকে দেখা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
লাইম রেজিসের সীমানার ঠিক বাইরে, একটা লেনের কিনারে এক সরাইখানা আছে, যেটার নাম ব্ল্যাক ডগ বা কালো কুকুর সরাইখানা। বলা হয় রাতের বেলা একটা বিশাল কুকুর ছুটে এসে ওই সরাইখানার এক কিনারার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। এতে হঠাৎ হঠাৎ ওই অংশের দেয়াল ধসে যেত।
থেলব্রিজের কাছে একটা জায়গা আছে যার নাম ব্ল্যাক ডগ। উনিশশো সালের দিকে ওখানে এমনকী স্থায়ী. একটা ছোট বসতিও ছিল না। কেবল ছিল একই নামের একটা সরাইখানা এবং এক কামারশালা।
ট্রভেরটনের চৌহদ্দিতেও কালো কুকুরের কিংবদন্তি ডালপালা মেলেছে। ওখানে বাস করা ব্ল্যাকমোর নামের উচ্চশিক্ষিত এক ভদ্রলোক বলেছিলেন তিনি এবং তাঁর বাবা দু’জনেই ভয়াল ওই কালো কুকুরকে দেখেছেন। শুধু তা-ই না, এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম ধরে লোকেরা একে দেখে আসছে। কীভাবে এটা সম্ভব তাঁর জানা নেই।
ডেভনে কালো কুকুরটার উপস্থিতির ব্যাপারে মিসেস কেরবেনেলের এই গবেষণার পর আশা করি পাঠকদের পক্ষে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হবে।
এখানে বর্ণনা করা বেশিরভাগ ঘটনাই আশি-নব্বই বছর কিংবা আরও বেশি আগের। কিন্তু ইংল্যাণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় এখনও কালো কুকুর দেখা যাওয়ার ঘটনা শোনা যায়। ভবিষ্যতে সত্য হরর কাহিনী সিরিজের অন্য কোন পর্বে কালো কুকুরের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে লেখার ইচ্ছা রইল।
নার্স ব্ল্যাক
১৮৫০-এর দশকে চার্লস কিন এবং তাঁর স্ত্রী অ্যালেন ইংল্যাণ্ডের মঞ্চে ছিলেন অতি পরিচিত মুখ। অভিনেতা- অভিনেত্রী ও ম্যানেজার দুই ভূমিকাতেই তাঁরা ছিলেন সফল। নানা ধরনের বিচিত্র বিষয়ের প্রতিও ঝোঁক ছিল এই দম্পতির। কাজেই তাঁদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে যখন ভৌতিক ঘটনা ঘটল বিস্তারিত বর্ণনাসহ তা লিপিবদ্ধ করেন কিন। আর তাঁর মাধ্যমে এর কাহিনীটা আসায় এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ কম।