জেলার অনেকেই ওই অশুভ জিনিসটাকে দেখে। তবে ওটার ঘুরে বেড়ানোর প্রিয় জায়গা গেল্ডারস। বিকলস রোডের ধারের একটা জংলা জায়গা এই নামে পরিচিত। এ ব্যাপারে বেশ খোঁজ-খবর নেয়া মি. মোরলে এডামস জানান, কেউ যদি ভয় না পায় তবে কেবল তার পিছু পিছু যাবে জিনিসটা। ওই সময়ে পেছনে তাকানো উচিত না। তাহলে পাগলা কুকুরের মত তেড়ে আসবে। কেউ কেউ বলে রাস্তাঘাট থেকে ছোট ছেলে-মেয়েদের কাপড় কামড়ে টেনে নিয়ে যায় এই মৃত্যুকুকুর।
এসেক্স, ডর্টমুর এসব জায়গায়ও এই অশরীরী কালো কুকুর দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। কালো কুকুরের ডোরচেস্টশায়ারের কিংবদন্তিতে অনুপ্রাণিত হয়েই স্যর আর্থার কোনান ডয়েল লেখেন রহস্যকাহিনী দ্য হাউণ্ড অভ দ্য বাস্কারভিলস।
কালো কুকুরের ব্যাপারে আগ্রহী মানুষের অভাব নেই। ১৯৫৬ সালের ২৯ আগস্ট মিসেস বারবারা কেরবেনেল আমাকে একটা চিঠি লেখেন। এতে ডেভনে এই কালো কুকুরের উপস্থিতি বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য দেন।
‘১৯২৫ সালে আবিষ্কার করি নির্দিষ্ট একটা রাস্তা ঘিরে কালো কুকুর দেখা যাওয়ার ঘটনা অনেক বেশি শোনা যায়। কপলস্টোন থেকে টরিংটনের দিকে গেছে রাস্তাটা। মোটামুটি ২১ মাইল এলাকায় এর আনাগোনা বেশি। এক ওয়াগনচালক আমাকে তার অভিজ্ঞতার কথা বলে। পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছরের লোকটার সোজাসাপ্টা এবং সত্য কথা বলিয়ে হিসাবে নাম আছে এলাকায়। কপলস্টোনের কারখানাগুলো থেকে টরিংটনে চল্লিশ বছর নিয়মিতই রাতের বেলা জিনিসপত্র আনা- নেয়া করেছে ওয়াগনে করে। প্রথমবার যখন দেখে তখন বেশ নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। দ্রুত গিয়ে আশ্রয় নেয় তার বিশাল ওয়াগনের ক্যানভাসের হুডের তলায়। তবে এরপর যখন মাঝে মাঝেই প্রায় ছোটখাট একটা গরুর সমান ওই কালো কুকুরটা দেখা দিতে লাগল রাতে, তখন আর খুব একটা ভয় পায়নি। ঘোড়াগুলোও শুরুতে ওটাকে দেখে ত্রাহি চিৎকার জুড়ে দিত। পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কুকুরটা ওয়াগনের পাশে পাশে ছুটত। তবে কখনও ওই প্রাণীটাকে সে স্পর্শ করত না, এমনকী ওটার সঙ্গে ভাব আদান-প্রদানেরও চেষ্টা করত না।’
ডেভনের পাহাড়ের ওপর ছোট্ট এক গ্রাম ডাউন সেন্ট মেরি। এখানে একটা প্রাচীন স্যাক্সন গির্জাও আছে। গ্রামবাসীরা জানায় রাতে গির্জার আশপাশে হাজির হয় টরিংটনের কালো কুকুর। বিশেষ করে গ্রামের কামার ওটাকে বেশ কয়েকবারই দেখেছে। গির্জা আর একটা স্কুলঘরের মাঝখান দিয়ে ছুটে যেত অদ্ভুতুড়ে জিনিসটা। এসময় কখনও ওটা মাথা দিয়ে বাড়ি দিত স্কুলদালানকে। এতে ওই দালানের কিনারাটা আংশিক ভেঙেও যায়।
আরেকটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এই গ্রামেরই এক লোক। যুবা বয়সে সে কয়েকজন বন্ধুসহ বড়দিনের উৎসবের রাতের খাওয়া শেষে কপলস্টোনের দিকে ফিরছিল। এসময়ই হঠাৎ কালো কুকুরটার রাস্তা ধরে এগিয়ে আসার শব্দ পায়। তাড়াতাড়ি ওটাকে এড়াতে দৌড়ে একটা মাঠে গিয়ে আশ্রয় নেয় ছেলেরা। দেখে বাছুরের সমান একটা কুকুর, কুচকুচে গায়ের রং, জ্বলজ্বলে চোখ, স্কুলদালানের দিকে ছুটছে। একটু পরেই একটা সংঘর্ষের শব্দ শোনে, অনুমান করে ওটার মাথার আঘাতে স্কুলের দেয়াল থেকে পাথর খসে পড়ছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে দৌড়ে বাড়িতে হাজির হয় তারা।
কালো কুকুরের চলাচলের এলাকা হিসাবে যে লাইন বা রাস্তাটা আমি আবিষ্কার করেছি তার সমান্তরালে গিয়েছে উইক হিল নামের এক গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমের এক খাড়া পাহাড়ি রাস্তা। ওখানে অ্যালেন’স উইক নামে একটা খামারও আছে। এখানে কোন ঘটনা জানতে পারি ভেবে খোঁজ-খবর নেয়ার চিন্তা করি। তারপরই মনে পড়ে আমাদের গ্রামের দোকানটা যে মহিলা চালায় সে একসময় ওখানে থাকত। তার বাবা এখনও ওই এলাকাতেই থাকেন। দোকানে এসে জানতে চাইলাম, ‘টরিংটনের কালো কুকুরের কথা কি শুনেছ?’
আমি যখন কথা বলছিলাম তখনই গ্রামের দু’জন মহিলা ভেতরে ঢুকল কিছু কিনতে। দোকানি মিসেস জুয়েল খুব আলাপী এবং ভাল মানুষ। কিন্তু হঠাৎই সে বলে উঠল, ‘না, কখনওই না।’ তারপর আমাকে বিদায় জানিয়ে ওই দুই মহিলার সঙ্গে আলাপ শুরু করল।
তার এই ব্যবহারে হতবিহ্বল হয়ে চলে গেলাম। আধ ঘণ্টাটাক পরে আবার যখন দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছি মিসেস জুয়েল দরজার সামনে এল। আমার বাহু ধরে বলল, ‘মনে কষ্ট নিয়ো না। এসো, তোমাকে অনেক কথাই বলার আছে আমার।’ তারপর টেনে তার পার্লারে নিয়ে গেল আমাকে।
‘টরিংটনের কালো কুকুরের ব্যাপারে তুমি কী জানতে চাও?’
জবাবে জানালাম এই কুকুরটার বিশেষ করে উইক হিলের আশপাশে এর বিচরণের ঘটনাগুলো নিয়ে জানতে আগ্রহী আমি।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল মহিলা। হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারপর ঝেড়ে কাশল, ‘ওটা সবসময়ই ওখানে আছে। সবাই প্রাণীটার কথা জানে। তবে ওটার কথা বললে মন্দভাগ্য তাড়া করে। আমি জানি না তোমাকে কুকুরটার কথা বলে নিজের বিপদ টেনে আনছি কিনা।
তারপর ফিসফিস করে বলতে শুরু করল। সে চাইছিল না এখানকার কেউ তার এই কথা শুনুক। উইক হিলেই বেশি আসে ওটা। ওখানেই প্রথম দেখে। তখন তার বয়স এই দশ। ১৮৭০ সাল কি এর দু’এক বছর আগে বা পরের ঘটনা। রাত এগারোটা। বাবার সঙ্গে একটা উৎসবের খাওয়া শেষে বাড়ি ফিরছিল। উইক’ হিলের অ্যালেন’স উইক খামারের কাছেই তাদের বাড়ি। চন্দ্রালোকিত এক রাত ছিল সেটা। হঠাৎ তাদের পেছনে একটা কিছুর শব্দ শুনে সচকিত হয়ে ওঠে দু’জনে। পিছু পিছু আসছে একটা বিশাল কালো কুকুরের মত জন্তু। বাবার হাত চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠে সে। বাবা বলেন তখন, ‘আমার হাত ধরো, কথা বলবে না একটুও। আস্তে হাঁটো, কাঁদবে না।’