ভুতুড়ে এক কুকুরের কিংবদন্তি গ্রেট ব্রিটেনের পুব অংশে ডালপালা মেলেছে বহু বছর ধরে। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী লেডি ওয়ালসিংহ্যাম এর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। এমনকী এর দেখাও পেয়েছিলেন!
এক রাতে সাফোকের লিস্টনে তখনকার লেডি রেনডলশ্যামের সঙ্গে একটা গির্জার গোরস্থানের কাছে বসে ছিলেন। উদ্দেশ্য অশুভ কালো কুকুরের দেখা পাওয়া। আনুমানিক বারোটার দিকে, সমাধিফলকগুলোর মাঝখান থেকে একটা বিশাল কালো ছায়া বেরিয়ে এল, তারপর এক লাফে গির্জার নিচু সীমানা দেয়াল পেরিয়ে বালুর টিলাগুলোর দিকে রওয়ানা হলো। এই দুই নারীর কেউই কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিংবা মাতাল ছিলেন না।
নরফোকের ব্ল্যাক শাক নামে পরিচিত কিংবদন্তির সেই কালো ভুতুড়ে কুকুরই আমাদের এই কালো শয়তান। বলা হয় নরফোকের ওই শয়তান কুকুর ক্রোমার এবং শ্যারিংহ্যামের মাঝখানের পাহাড়ি পথ ধরে নিঃশব্দে চলাফেরা করে। এখানকার বাসিন্দাদেরকে এমনকী দশ পাউণ্ড এবং এক বোতল বিয়ারের লোভ দেখালেও তারা রাতে এই পাকদণ্ডী পথে চলতে রাজি হবে না।
ডব্লিউ. এ. ডাট তাঁর দ্য নরফোক ব্রডল্যাণ্ড বইয়ে লিখেছেন, ‘নরফোকের সবচেয়ে ভয়ানক প্রেত বলা চলে ব্ল্যাক শাককে। অ্যাংলো-স্যাক্সন শব্দ স্কাক্কা বা সিয়োক্কা থেকে এসেছে এই শাক শব্দটি। অর্থ শয়তান। এই পৈশাচিক কুকুর গায়ে-গতরে বড় আকারের একটা বাছুরের সমান, ঝোপঝাড়ের ছায়া ধরে নিঃশব্দে চলাফেরা করে সে। একা চলা পথচারীদের অনুসরণ করে, হলুদ চোখের ভয়ানক দৃষ্টি দিয়ে তাদের আঁতকে দেয়। এর সঙ্গে দেখা হওয়া মানে এক বছরের মধ্যে হতভাগ্য লোকটির মৃত্যু। বার্টন ব্রডের কাছের নিটিসহেড লেন তার হানা দেয়ার পছন্দের এক জায়গা। তবে কলটিশাল ব্রিজও তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে। ওটার ওপর দিয়ে প্রায়ই মুণ্ডুবিহীন অবস্থায় চলাফেরা করতে দেখা যায় তাকে।’
তবে এই ভুতুড়ে কুকুরের এক অদ্ভুত সংস্করণ নাকি ক্যাম্ব্রিজশায়ারের কাছে সাফোক সীমান্তের সুঘ হিল লেনে ঘুরে বেড়ায়। ক্যাম্ব্রিজের প্যান্টন স্ট্রিটের পুলিস কনস্টেবল এ. টেইলর আমাকে বলেছিল তার যৌবনকালে ওয়েস্ট র্যাটিং থেকে বালশামের দিকে যাওয়া পথটায় শাগ মাঙ্কি নামের এক অদ্ভুত জীব ঘুরে বেড়াত। একটা মোটা চামড়ার কুকুর এবং বড় চোখের বানরের সঙ্কর নাকি ছিল ওটা। কখনও পেছনের পায়ে ভর দিয়ে চলত, কখনও আবার চারপায়ে ছুটে বেড়াত।
নরউইচের কাছের হ্যাম্পনেলের বাসিন্দা মিসেস সোফিয়া উইলসনও কালো কুকুরের অস্তিত্বে প্রবলভাবে বিশ্বাসী। তিনি আমাকে লেখেন, ‘হ্যাম্পনেল থেকে মার্কেট হোল নামে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে। একষট্টি বছর আগে যখন হ্যাম্পনেলে প্রথম বাস করতে শুরু করি আমার স্বামী আমাকে বলে এখানকার অনেক বাসিন্দাই এ ধরনের অশুভ একটা কিছু দেখার কথা বলেছেন। আমার প্রিয়তম স্বামী মারা গিয়েছেন। ওই অশুভ কালো কুকুরও আমার কাছে স্রেফ এক কিংবদন্তি হিসাবেই ছিল। তারপরই এক রাতে আমার চব্বিশ বছরের ছেলেটা নরউইচ থেকে যখন এল, দেখলাম ওর চেহারা আতঙ্কে ফ্যাকাসে। সে অসুস্থ কিনা জানতে চাইলে বলল, মার্কেট হল ধরে আসার সময় বিশাল একটা কালো কুকুর তার বাইকের ঠিক মুখোমুখি চলে আসে। সে যখন সংঘর্ষটা এড়াবার কোন উপায় দেখছে না তখন জন্তুটা বেমালুম গায়েব হয়ে যায়। বাইক থেকে নেমে চারপাশে তাকিয়েও সে কিছু দেখতে পায়নি। তখনই ভয় পেয়ে যায়।’
গেলডেস্টোনের ধারের ওয়েভেনে উপত্যকার গ্রামগুলোতেও এ ধরনের অশুভ একটা কিছুর আনাগোনার খবর পাওয়া যায়। সাধারণত বিশাল একটা কুকুরের বেশেই ওটাকে দেখা যায়, তবে কুকুর এত বিশাল হয় না। সাধারণত অশুভ কিছু ঘটতে যাওয়ার আগে ওটা দেখা দেয়।
গ্রামের এক মহিলা জানান, গিলিংহ্যাম থেকে গেলডেস্টোনে যাওয়ার পথে এক রাতে ওটাকে দেখেন। তাঁর বর্ণনায়, ‘আমাদের বিয়ের পর পরই এটা ঘটে। আটটা থেকে নয়টার মাঝামাঝি তখন। গেলডেস্টোনের কাছের একটা লেনে তখন ছিলাম আমরা দু’জন। এসময়ই মিসেস এস.-এর সঙ্গে দেখা হয় আমাদের। তিনজন হাঁটতে শুরু করি। এসময়ই পেছনে একটা শব্দ পাই। অনেকটা একটা কুকুর দৌড়ে আসার মত। ভাবলাম কোন কৃষকের কুকুর। কাজেই মনোযোগ দিলাম না। আমাদের পেছনে লেগে রইল ওটা। পিট! পেট! পিট্! পেট! পিট! পেট!
‘মিসেস এস.-কে জিজ্ঞেস করলাম কুকুরটা কী চায়? ‘চারপাশে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘কোন্ কুকুরের কথা বলছ?’
কেন, তুমি ওটার শব্দ শুনতে পাচ্ছ না?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, ‘গত পাঁচ মিনিট কিংবা এর বেশি সময় ধরে জানোয়ারটা আমাদের অনুসরণ করছে। জোস, তুমি শুনতে পাওনি?’
ওহ! পাগল হয়ে গেলে নাকি! কোন শব্দ-টব্দ হচ্ছে না,’ তিরস্কার করল আমার স্বামী, ‘আমার হাতটা ধরে তাড়াতাড়ি পা চালাও।
‘জোস এবং মিসেস এস.-এর মাঝখানে থেকে ভয়ে ভয়ে হাঁটতে লাগলাম।
‘এসময়ই মিসেস এস. বললেন, ‘এখন ওটার শব্দ পেয়েছি। আমাদের সামনে। ওই তো তাকাও!’
‘সত্যি! সামনে একটা জন্তু, বিশাল একটা কালো কুকুরের মতই লাগছে। তবে এটা আসলে কুকুর নয়। অশরীরী কিছু একটা। ভয়ঙ্কর জিনিসটাকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে এর আগে, বেশ অশুভ কিছু ঘটনাও ডেকে এনেছে সে। গির্জার কাছ পর্যন্ত এটা আমাদের আগে আগে চলল। তারপর এক লাফে দেয়াল টপকে সমাধিগুলোর মাঝখানে অদৃশ্য হলো।’