জ্যাকের সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয় তখন কারলোটা ছিল বিবাহিত। স্বামী হারমান গডিভেজের সঙ্গে থাকত কার্টাজেনায়। জ্যাকের প্রেমে পড়ে তার সঙ্গে পালায় নারীটি। তবে প্রতিবেশীরা নিয়মিতই প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেতেন। যখন কারলোটাকে তার সাজঘরে হার্টে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে অ্যান্ড্রুর ওপর।
ইংরেজ রাষ্ট্রদূত তখন এখানে ছিলেন না। তাঁর বদলে দায়িত্ব পালন করছিলেন একজন স্পেনীয়। তাছাড়া তথ্য- প্রমাণ ছিল জ্যাকের বিরুদ্ধে। একে বিদেশী, তাতে আবার তেমন ক্ষমতা নেই। তাছাড়া একজনকে বলির পাঁঠা বানানোর দরকার ছিল পুলিসের। অতএব মরতে হলো জ্যাককে।
যা হোক, আমি কার্টাজেনা গিয়ে একজন গোয়েন্দা নিয়োগ করলাম হারমান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণও মিলল। কিন্তু স্পেনীয় পুলিস কোন ব্যবস্থাই নিল না। স্পেনের আইন-কানুনের এই হতাশাজনক অবস্থা দেখে লণ্ডনে ফিরে এলাম। তবে জ্যাকের ব্যাপারে মুখ খুললাম না এখানে। এমনকী আমাদের স্কুলের বন্ধুরা এখনও জানে না জ্যাকের ভাগ্যে কী হয়েছে। তবে স্কুলে এখনও ওর ভূত দেখা যায়, যেমন দেখা যায় যে হোটেলে আমি ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে।
কালো মৃত্যুদূত
অশুভ কালো কুকুর নিয়ে এর আগেও টুকটাক লিখেছি। এবারের অধ্যায়টি মূলত এ বিষয়ে গবেষণা করা জে. ওয়েন্টওয়র্থ ডের লেখার রূপান্তর। এখানে এ বিষয়ে আগ্রহী আরও একজন নারীর অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রহ করা নানান ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছেন ওয়েন্টওয়র্থ।
উইকেন ফ্যানের জলার ওপরের আকাশে চাঁদ উঠেছে। লাল, গোলাকার। এখানকার জলাভূমি, ডোবা, নলখাগড়ার বন সব আছে সেই হাজার বছর আগের মতই। এর ধারেই একটা সরাইখানায় বসে আগুন পোহাচ্ছে কিছু মানুষ।
‘জলার তীর ধরে যাব আমি। মূল রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেয়ে এভাবে গেলে অন্তত এক মাইল পথ বেঁচে যাবে।’ আমার সিদ্ধান্ত জানালাম।
‘ওই জলা এলাকায় রাতে কালো শয়তান ছুটে বেড়ায়, স্যর।’ মুখে ঢুকে পড়া আগুনের সাদা ছাই থু করে ফেলে বলল জ্যাক বার্টন, ‘ওই পথে যাব না আমি। অনেক টাকার লোভ দেখালেও না।’
‘কারোরই যাওয়া উচিত নয়,’ সুর মেলাল উপস্থিত কয়েকজন, ‘এক মহিলার কী হয়েছিল মনে করতে পারছ, জ্যাক? ওই কুকুরটা তার কাছে এসেছিল রাতে। কয়দিন পরেই মারা যায় সে।’
‘ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি,’ বলে ফ্রেডের দিকে ফিরে জানতে চাইলাম, ‘যাবে তুমি? আমার পথেই পড়ে তোমার বাড়ি। বেশ কতকটা সময় বেঁচে যাবে তোমার।’
ঘোড়ার মত ত্রাহিস্বরে চেঁচিয়ে উঠল ফ্রেড, ‘না, স্যর, না, স্যর। কেউ আমাকে রাতে ওই জলার তীর ধরে নিতে পারবে না। এমনকী ইংল্যাণ্ডের রাজাও নয়। তোমার কাছে হাঁস মারার একটা বন্দুক আছে জানি, এর বদলে যদি মেশিন গান থাকত তবুও নয়। যদি যাও, কুকুরটা তোমারও বারোটা বাজাবে।’
একেবারে ছোটবেলা থেকেই ফ্রেডকে চিনি। জলা এলাকায় আমার শিকারের দিনগুলোতে সে ছিল একেবারে যাকে বলে নিয়মিত সহচর। কোন পরিস্থিতিতেই পিছু হটতে দেখিনি তাকে। কিন্তু আজ রাতে সে ভয় পেয়ে গিয়েছে। এমনকী স্বীকারও করছে তা।
‘তুমি কেন এত ভয় পাচ্ছ, ফ্রেড?’
‘বলেছিই তো, ওই কালো কুকুরটা। ওটা এই জলার তীর ধরে রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায়। মাস্টার ওয়েন্টওয়র্থ, ওটা আলকাতরার মত কালো, বাছুরের সমান বড়। চোখজোড়া গাড়ির হেডলাইটের মত। তোমার দিকে একবার দৃষ্টি দিলেই হয়েছে, প্রাণে বাঁচবে না।’
‘কিন্তু, ফ্রেড, বুনো হাঁসের পেছনে এখানে রাতের পর রাত ঘুরে বেড়িয়েছে বাবা। তাঁর তো কিছু হয়নি।’
‘স্বীকার করছি, তিনি তা করেছেন। তবে তাঁর ভাগ্য ভাল অশুভ কালো কুকুর তাঁকে চেহারা দেখায়নি, যদি দেখাত তবে তিনি মারা পড়তেন।’
ফ্রেড বলল কয়েক বছর আগে তার বোন এই এলাকায় এক চন্দ্রালোকিত রাতে দেখা করতে আসে তার প্রেমিকের সঙ্গে। তখন কালো কুকুরটার মুখোমুখি হয়ে যায়।
‘স্যর, কুকুরটা তীর ধরে চুপিসারে এগিয়ে আসে ছায়ার মত। ওটার মাথা ছিল নিচের দিকে। যখন আমার বোনের থেকে বিশ গজ দূরে মাথা উঁচু করে তার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকাল, চোখজোড়া ছিল রক্তের মত লাল। আমার বোনের আত্মা শুকিয়ে যায়। ঘুরে জলার তীর ঘেঁষে উল্টো দিকে দৌড়তে শুরু করে। প্রেমিকের সঙ্গে যখন দেখা হলো তার গায়ে ঢলে পড়ল জ্ঞান হারিয়ে।’ .
‘তার প্রেমিক কি কিছু দেখেছিল, ফ্রেড?’
‘না, স্যর।’
‘কিন্তু তোমার বোন যদ্দূর জানি এখনও বেঁচে আছে। অশুভ জিনিসটা তাকে মারতে পারেনি। আমাদেরও পারবে না।
‘আমার বোনকে তুমি দেখেছ, ওর মত শক্ত মেয়ে আর হয় না, স্যর। তারপরও এক হপ্তা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি। স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়েছিল।’
অতএব ফ্রেড আমার সঙ্গে ওই জলা এলাকাটা পার হলো না। সঙ্গে বন্দুক এমনকী এক কোয়ার্ট (প্রায় এক লিটার) বিয়ারের লোভ দেখিয়েও সে রাতে কারও ভয় জয় করতে পারিনি। যখন পরদিন সকালে ফ্রেডকে বললাম ওই রাতে একাই বহাল তবিয়তে জলাভূমির তীর ধরে বাড়ি ফিরে এসেছি, তখন সে উত্তর দিল, ‘তোমাদের মত পুরনো রাজ বংশের মানুষদের কালো কুকুর কখনও কখনও একটু ছাড় দেয় বৈকি।’