এটা কি ঘটনাটা আগে থেকে জানা থাকায় নাকি মেয়েটার অতিপ্রাকৃত উপস্থিতির কারণে বলতে পারব না। তবে সেখান থেকে অনেককেই কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখেছি। আমাদের গোস্ট ট্যুরগুলো পরিচালনা করা হয় মোমের আলোয়। অতিপ্রাকৃত ভ্রমণ শেষে যাঁরা ভৃত্যদের পুরনো কোয়ার্টারে রাত কাটান তাঁদের হয় জীবনের সেরা ঘুমটা হয়, নতুবা ঘুম আসে না একেবারেই। এমনও আছে গোটা রাতটা এখানে কাটানও না কেউ কেউ। গাড়িতে চেপে শহরে চলে যান। আমি একজন প্রফেশনাল স্টান্টম্যান। তবে প্রতি হপ্তায় একবার হলেও বাড়িতে আসি। ভুতুড়ে ঘটনা বাদ দিলে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায়ও এটি একটা চমৎকার দালান। মা-বাবা অনেক কষ্ট করে একে আবার পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই এই দালানটা নিয়ে আমি গর্বিত। যদিও এখানে এলে ভয়ের একটা অনুভূতি অনেক সময় কাজ করে আমার মধ্যেও।’ এদিকে তার স্ত্রী সোফিয়া এখানে আসার পর অদ্ভুত এক অনুভূতির শিকার হয়। তার মনে হয় এ বাড়িতে আগেও এসেছে সে। একপর্যায়ে অনুভব করে ক্রউলিদের সময় এই বাড়ির একজন পরিচারিকা হিসাবে কাজ করত সে। ওই সময়ের অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে তার। কখনও কখনও বাড়ির পুরানো ভৃত্যদের দেখতে পায়। এমনকী মি. ক্রউলির উপস্থিতিও টের পায়। তাই মন্টিক্রিস্টোর সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক গভীর। তবে সত্যি তার পুনর্জন্ম হয়েছে নাকি অন্য কোন শক্তি তাকে এমন ধারণা দিচ্ছে বোঝা মুশকিল। এখন অবশ্য গোস্ট ট্যুরগুলো পরিচালনায় বড় ভূমিকা থাকে সোফিয়ার। ভূত নামাবার মিডিয়াম হিসাবেও কাজ করে।
এই বাড়ি থেকে তোলা কিছু কিছু ছবি আসলেই পিলে চমকে দেবে আপনার। একটা ছবিতে ছায়াময় এক কাঠামোকে একটা ঘোড়ার গাড়ির ওপরে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। আরেক ছবিতে আবার রহস্যময় এক হাতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। অপর এক ছবিতে আয়নাতে দেখা যায় আদিবাসী এক ভৃত্যের ঝাপসা চেহারা। এক পর্যটক পুরানো এক বেডরুমের ছবি তুলেছিলেন। দেখা যায় বাম পাশে ছায়াময় একটা আকৃতি ভাসছে। এই বাড়িতে আসা অনেকেই অতিপ্রাকৃত উপস্থিতি টের পেয়েছেন।
রায়ান পরিবারের পরিচালিত ট্যুরে অনেক পর্যটকই অদৃশ্য কিছু একটা তাঁদের স্পর্শ করেছে দাবি করেছেন। রাতে ঘুমাতে গিয়ে কেউ ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠেন। কেউ আবার শরীরে কোন একটা অদৃশ্য কিছুর ওজন অনুভব করেন।
অবশ্য বিজ্ঞান লেখক ফিলিপ বেল এখানকার রহস্যময় ব্যাপারগুলোর একটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন কিছু কিছু শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এতই কম যে মানুষের কানে পৌছে না। কিন্তু শরীর এটা অনুভব করতে পারে। তখনই নানা ধরনের ভুতুড়ে অনুভূতি হয় তাদের। তবে মি. রায়ান বলেন, এই বাড়িতে একটা ভ্রমণ অবিশ্বাসীদের চিন্তাধারা বদলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ‘অনেক অবিশ্বাসীই এ বাড়িতে ঢুকেছেন। তবে যখন বেরিয়ে যান, অতিপ্রাকৃত শক্তির উপস্থিতি এবং মৃত্যুর পরের জগৎ সম্পর্কে দ্বিতীয়বার ভাবতে শুরু করেন।’
অদৃশ্য সাহায্যকারী
প্রেতাত্মা সম্পর্কে মানুষের ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে কানাডার ল্যাব্রাডরের এক অশরীরী। প্রেত মানুষের ক্ষতি করে এটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু ল্যাব্রাডরের ওই প্রেতাত্মা বিপদে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাদের পথ দেখায়।
শুরুতে বরং ফ্রেড কর্কবির কাহিনীটি শোনা যাক। পারট্রিজ হিলের দুর্গম এক পথে চলছিল কৰ্কবি। দশটা কুকুর তার স্লেজ গাড়িটা টেনে নিয়ে চলছিল। হঠাৎ পুব দিক থেকে ধেয়ে এল তুষার ঝড়। চারপাশ ঝাপসা হয়ে গেল। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না কর্কবি। ভেজা স্কার্ফটা দিয়ে ঢেকে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করল। এদিকে ঝড়ে স্লেজটা নিয়ে কুকুরগুলো দিগ্বিদিক্ দৌড়চ্ছে।
তুষারকণাগুলো মুখে বিঁধছে সূচের মত। শীতল বাতাসে চোখ খুলে রাখা মুশকিল। হঠাৎই একটা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়ে গেল কুকুরেরা। কয়েক পা এগুলেই খাদে পড়ে মৃত্যু হত সবার। পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব শিকারি কর্কবির মনোবল অসাধারণ। এই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠাণ্ডা রাখল। বুঝতে পারল পথ হারিয়েছে। তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে না পড়লে খারাপি আছে কপালে। ঝড়ো বাতাসে হয়তো গিয়ে পড়বে খাদে।
এসময়ই জোরে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করল কুকুরগুলো। ছুটে যেতে চাইল। ব্যাপারটা কী বোঝার জন্য স্লেজের কাছে এগিয়ে গেল কর্কবি। এসময় কাছেই আরও কিছু কুকুরের শব্দ কানে এল। ভালভাবে চারপাশে তাকাতেই দেখল তুষারের মধ্যে চোদ্দ-পনেরোটা কুকুর অপর একটি স্লেজ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। স্লেজের পেছনে দাঁড়িয়ে সাদা ফারের পোশাক গায়ে চাপানো বিশালদেহী এক লোক। হাতে চাবুক। চিৎকার করে লোকটাকে ডাকল কর্কবি। কিন্তু ঝড়ে হারিয়ে গেল তার কণ্ঠস্বর। লোকটার কোন দিকে খেয়াল নেই, কুকুরগুলোর শরীরে চাবুকের বাড়ি কষাতে কষাতে দ্রুত চলে যাচ্ছে। মনস্থির করে ফেলল কর্কবি। ওদের পেছনেই যাবে। তাছাড়া লোকটার আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এই এলাকা হাতের তালুর মতই চেনে। অতএব দেরি না করে
রগুলোকে ছোটাল ওই লোকটা এবং তার স্লেজটানা *সুরগুলোর পেছনে। মোটামুটি এক ঘণ্টাটাক পরে ফ্রেঞ্চম্যান’স আইল্যাণ্ডে সৈনিকদের ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌছে গেল। যে দলটাকে অনুসরণ করছিল একটা বাঁক নিয়ে ওটা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে বলতে পারবে না।