‘ওখান থেকে দূরে থাকো, বুদ্ধ!’ সতর্ক করে দিল কিম সেং। তাকে পাত্তা না দিয়ে দশাসই গুণ্ডাদুটোকে পাশ কাটিয়ে আগুনের শিখা লক্ষ্য করে অগ্নিনির্বাপকের মুখ তাক করলাম। এসময়ই ঘাড়ে প্রচণ্ড একটা রদ্দা অনুভব করলাম। মাটিতে আছড়ে পড়লাম। কিমের পোষা গুণ্ডাদের একজন পা তুলে দিল আমার ওপর।
‘তোমাকে আমি এসব থেকে দূরে থাকতে বলেছি।’ গর্জে উঠল কিম।
জ্বলতে থাকা আস্তাবলের ধোঁয়ায় নাকি ঘোড়াগুলোর জন্য আমার চোখে পানি চলে এসেছিল, বলতে পারব না। হতভাগা ঘোড়াগুলোর চিৎকার শুনতে পেলাম, আগুনের লেলিহান শিখা ঘিরে ফেলেছে তাদের। তার আস্তাবলটা জ্বলে-পুড়ে একেবারে ছারখার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল বদমাশ লোকটা। তারপর উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল, এখন জানে বীমার টাকায় অনেকটাই আর্থিক সমস্যা সামলে উঠতে পারবে।
ওই সময়ের সিঙ্গাপুরে আইনের তেমন একটা বালাই ছিল না। প্রতিটি জায়গা ছিল দুর্নীতির আখড়া। তাই ঘটনাটা সামাল দিতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না কিমকে।
তারপরই অদ্ভুতভাবে যবনিকাপাত হলো কিম অধ্যায়ের। কেউ বলতে পারে না ঠিক কেমন করে ঘটনাটা ঘটল। তবে লোকের মুখে মুখে গল্পটা ছড়িয়ে পড়ল। ওয়ং কিম সেংকে তার বিশাল ভিলার মাঠে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোন একটা জন্তুর পাল তার ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, তার শরীর বা পোশাকের যে টুকরোগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাতে পাওয়া যায় আগুনে পোড়া খুরের ছাপ।
রেলস্টেশনের মেয়েটি
এবারের অভিজ্ঞতাটি জেনিসি লিম নামের এক তরুণীর।
নভেনা মেট্রো রেলস্টেশনে আসা-যাওয়া করা ট্রেনগুলোতে চড়ে সন্ন্যাসিনীর পোশাক গায়ে চাপানো রহস্যময় এক নারীকে চলাফেরা করতে দেখেছেন কেউ কেউ। তবে মেট্রোরেলে দিনে-রাতে নিয়মিত চলাফেরা করলেও তাকে কখনও দেখিনি। হয়তো একদিন ওই অশরীরীর দেখা পেয়েও যেতে পারি।
তবে রহস্যময় একটা স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে এক সকালে তোয়া পেয়োহ স্টেশনে এক ট্রেনে দেখেছি। সে কাহিনীটাই বলব।
সিটি হলে যাচ্ছিলাম। আমার সামনে বসেছিল মেয়েটা। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি আমার। আর পাঁচ-দশটা স্কুল ছাত্রীর মতই মনে হচ্ছিল। তবে চুল অনেক লম্বা, কোমর পর্যন্ত। সাদা একটা ইউনিফর্ম পরনে ছিল তার। তবে খুব ভালভাবে লক্ষ্য করতে পারিনি, কারণ মাথা নিচু করে একটা বই পড়ছিল। লম্বা চুলগুলো মুখের বেশিরভাগটাই ঢেকে রেখেছে।
যখন সিটি হলে পৌঁছল ট্রেন, আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। মেয়েটাকেও উঠতে দেখলাম। তখনই চেহারাটা দেখলাম। মুখের চামড়া তামাটে। তবে অবাক হলাম চোখজোড়া দেখে। ওগুলো প্রায় বর্ণহীন।
তারপরই বিস্ময়কর কাণ্ডটা হলো। এস্কিলেটরে যখন উঠলাম তখন সে ছিল আমার সামনে। কিন্তু যখন ওপরে উঠলাম মেয়েটা সেখানে নেই। চারপাশে তাকালাম তার খোঁজে। কাঁধের পাশ দিয়ে তাকাতেই শিউরে উঠলাম, আমার ঠিক পেছনে মেয়েটা। হাসছে। এটা অসম্ভব। পুরোপুরি ঘুরে আমার পাশ কাটিয়ে যাওয়া ছাড়া কীভাবে এটা করল সে?
যখন টিকেট চেকারের সামনে পৌছলাম ততক্ষণে সে হাওয়া। একটু পরে আবার দেখলাম তাকে, আরও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে নর্থ ব্রিজ রোডের দিকে যাচ্ছে। অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তার ওপর চোখ রেখে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। কেবল মেয়েটার থেকে দুই মিটার দূরে, এসময় বাতাসে মিলিয়ে গেল। কীভাবে সে এটা পারল?
এক হপ্তা পরের ঘটনা। আমার মা আর খালার সঙ্গে তোয়া পেয়োহ মেট্রো রেলস্টেশনে এসেছি। তখনই আবার মেয়েটাকে দেখলাম। আরও কিছু যাত্রীর সঙ্গে একটা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। কী ঘটেছে আগেই মাকে বলেছিলাম। এবার ইশারায় দেখালাম। মা ও খালা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে ঠিক করল। মেয়েটার দিকে আস্তে-ধীরে হাঁটতে লাগল তারা।
কিন্তু যখনই মেয়েটার কাছাকাছি হলো, তাদের দিকে রংহীন চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর আগের মতই বাতাসে উবে গেল।
সু নামের ছেলেটি
লি থাই হোং নামের এক যুবকের গল্প।
একসময় আর্মিতে চাকরি করতাম। এক শনিবার বিকালে আমার পুরানো অফিসার লেফটেনেন্ট লও কুইয়ি ইয়ং, আমি এখন যে অ্যামিউজমেন্ট পার্কে কাজ করি সেখানে এলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে। আমরা গল্প করছিলাম, এদিকে তাঁর স্ত্রী আর ছেলে বিভিন্ন রাইডে চড়ছিল। স্ত্রী আর ছেলেটার সঙ্গে তখন আমার পরিচয় করিয়ে দেন। ভদ্রমহিলার নামটা ভুলে গেছি। তবে ছেলেটার নাম মনে আছে স্পষ্ট। সু নামের একটা ছেলের নাম কী করে ভুলি?
‘কী অদ্ভুত!’ বলে ফেললাম, ‘এটা তো মেয়ের নাম!’ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুইয়ি ইয়ং ব্যাখ্যা করলেন। অন্য এক নারীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। শুরুতে খুব ভেঙে পড়লেও বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। সাবেক প্রেমিকার কথাও ভুলে যান। বিয়ের কথাও পাকা হয়।
ঠিক ওই সময় হঠাৎ ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েন কুইয়ি ইয়ং। বেশ কয়েকজন চিকিৎসক দেখিয়েও লাভ হলো না। একপর্যায়ে এক ওঝার শরণাপন্ন হলো পরিবারটি।
তিনিই জানালেন পুরানো প্রেমিকার প্রেতাত্মা সওয়ার . হয়েছে তাঁর ওপর। অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে তার প্রেমিক এটাই তাকে অশান্ত করে তুলেছে। এর একমাত্র সমাধান ভূত বিয়ে।