শুধু যে ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানার জন্য এলাকাটি বিখ্যাত তা কিন্তু নয়। এ অরণ্যের আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের উৎসবও হয়। ক্লাজ-নেপোকা এমনিতেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পর্যটক টানে। এখন অনেক পর্যটকই ভুতুড়ে বনের রাস্তা ধরে সাইকেল চালান, এঁদের কারও কারও টুকটাক সমস্যা হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও বেশিরভাগই কিন্তু ফিরে এসেছেন বহাল তবিয়তে। কাজেই একবার চেষ্টা করেই দেখতে পারেন অরণ্যটার রহস্য সমাধানে। উপরি হিসাবে পেতে পারেন ভালুক, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর দেখা।
ভুতুড়ে সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের বেশ কিছু ভৌতিক ঘটনা সত্য হরর কাহিনী সিরিজের আগের বইগুলোতে ছাপা বইগুলোতে ছাপা হয়েছে। ধারাবাহিকতায় ওখানকার বাছাই করা কয়েকটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি এই বইটিতেও।
ওমরের গল্প
এবারের কাহিনীটি বলেন একজন বিমান স্টুয়ার্ড। তাঁর নাম কামাল বিন মুস্তফা। আমরা বরং এটা তাঁর জবানীতেই শুনি।
এর নায়ক বা খলনায়ক যা-ই বলি না কেন আমার ভাই ওমর। আমাদের ছোটবেলার কথা। নিউটন সার্কাস এলাকায় বেড়ে উঠেছি। বাড়ির উল্টোপাশে মনক’স স্কুলের ফুটবল মাঠ। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে প্রতিদিন বিকালে সেখানে হাজির হতাম আমরা।
একদিন সন্ধ্যার আগে, ওমর বলটা লাথি মেরে পাঠায় মাঠের কিনারে একটা কুৎসিত দর্শন, অশুভ গাছের দিকে। ওটা আনতে গিয়ে দেখলাম, গাছে বাস করা অশুভ আত্মাদের শান্ত রাখতে যেসব লাল চীনা ফলক ব্যবহার করা হয় এর একটাকে উপড়ে ফেলেছে বলটা।
ওমরকে অবশ্য এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হলো না। বেশ সাহসী ছেলে সে। কিন্তু আমরা বাকি ছেলেরা বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। ওই ফলকটা ভেঙে লাল টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গাছের নিচে।
ওখানে যখন আমরা দাঁড়িয়ে আছি তখনই হঠাৎ ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করল। গাছটার ডালপালাগুলো সে হাওয়ায় অদ্ভুত শব্দ তৈরি করল। আকাশ ঢেকে গেছে ঘন কালো মেঘে। যেন বৃষ্টি নামবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যার যার বাড়ির দিকে দৌড়লাম।
রাতে আমাদের সবার ঘুম ভেঙে গেল ওমরের চিৎকারে। ওর পাজোড়া ফুলে ঢোল হয়ে গিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে বলল অনেক কষ্ট হচ্ছে তার।
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো সকালে। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে বলতে পারলেন না তিনি। উপায়ান্তর না দেখে ইপোহর একজন বোমা বা ওঝার শরণাপন্ন হলাম আমরা।
সাদা চুলের বুড়ো এক মানুষ তিনি। বেশিরভাগ আঙুলে নানা ধরনের পাথর শোভা পাচ্ছে তাঁর। সব কিছু খুলে বলার পর অদ্ভুত গন্ধের একটা মলম লাগানো কলা পাতা দিয়ে ওমরের পাদুটো মুড়ে দিলেন। তারপর দুর্বোধ্য কোন ভাষায় মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে ধূপ পোড়াতে লাগলেন।
আমাদের নিয়ে যে গাছটার নিচে ওই লাল ফলক ছিল সেখানে চলে এলেন ওঝা। বেশ কিছু ফল রেখে দিলেন জায়গাটিতে। এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই ওঝার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম আমরা। ওমরের কান্না থেমে গেছে। বলল ওর পা আর যন্ত্রণা করছে না।
কয়েকদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠল ওমর। আবার প্রতিবেশী বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু করলাম আমরা। তবে তখন খেলার সময় খেয়াল রাখতাম অশুভ ওই গাছটার কাছ থেকে যেন বল দূরে থাকে।
পুরানো স্কুল
এবারের অভিজ্ঞতাটি বেলিন্দা ওয়ং নামের এক মডেলের।
মাউন্ট ফেবার ধরে আমার প্রেমিকের সঙ্গে গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার সঙ্গে একটা বিষয়ে তুমুল তর্ক শুরু হয়। মেজাজটা এতটাই খিঁচড়ে যায় যে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে বললাম। তখন বেশ রাত। রাস্তাও ফাঁকা কিন্তু সে এতটাই অমানুষ যে আমাকে নেমে যেতে দিল
কিছুক্ষণ হাঁটতেই শীতল বাতাসে গরম মাথাটা আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হলো। বুঝতে পারলাম এখানে এই রাতে নেমে পড়ে বোকামি করেছি। আকাশ চিরে ফালা ফালা করে দিয়ে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। কেমপং সিলাট ধরে হাঁটছি এমন সময় বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল সত্যি সত্যি। আশপাশে কোন গাড়ি-ঘোড়া নেই। অতএব পুরানো এক স্কুলভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম।
পুরানো রাডিন মাস স্কুল ওটা। বহু বছর ধরেই এখানে লোকজনের ততটা আনাগোনা নেই। বিশেষ করে স্কুলভবনটা পরিত্যক্ত হবার পর থেকে। তাই এখানে কোন বাতি বা প্রহরী নেই। স্কুলের চারপাশের ছিন্ন বেড়ার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়তে পারলাম।
গোটা দালানটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবে ঝড়ের জন্য এটা মোটামুটি ভাল আশ্রয়। তাছাড়া আমি বেশ সাহসী, মেয়ে। অন্ধকার করিডোর ধরে হাঁটতে লাগলাম। ভাঙা জানালা গলে যখনই ঝড়ো বাতাস ভেতরে ঢুকছে প্রতিটি আনাচে-কানাচে নানা ধরনের ছায়া খেলা করছে। অব্যবহৃত ক্লাসরুমগুলোর দিকে তাকালাম। ওগুলোর অবস্থা দেখে করুণা হলো। সব টেবিল আর টুল উল্টানো, ভাঙা। দেয়ালে আশ্চর্য সব চিত্র আঁকা। বাস্তব দুনিয়ার কিছুর সঙ্গে এই চিত্রগুলোর মিল আছে কমই। অন্ধকারে আমার পায়ের আওয়াজের প্রতিধ্বনি শুনে বুঝতে পারলাম একাই আছি এখানে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। এসময়ই ফিক ফিক হাসির শব্দ শুনলাম। ওপরের সিঁড়িগুলোতে ছোট ছেলে-মেয়েদের দৌড়াদৌড়ির আওয়াজও পেলাম। প্রথমে বেশ স্বস্তি পেলাম। মনে হলো, যাক, কিছু বাচ্চাও মনে হয় কীভাবে যেন এই বৃষ্টিতে এখানেই আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সিঁড়ি ধরে যেখান থেকে আওয়াজটা আসছে মনে হচ্ছে, সেদিকে এগুতেই আমার মাথায় এল এই আবহাওয়ায় কয়েকটা শিশু কোনভাবেই ঘরের বাইরে আসার কথা নয়।