- বইয়ের নামঃ অশরীরীজগৎ
- লেখকের নামঃ ইশতিয়াক হাসান
- সিরিজঃ সেবা হরর সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ভূতের গল্প
অশরীরীজগৎ
পাতালকুঠুরী লণ্ডভণ্ড
প্রয়াত হ্যারি প্রাইস পল্টারগাইস্টদের সম্পর্কে বলেছিলেন এরা রীতিমত অভিশপ্ত প্রেতাত্মা, ভয়ঙ্কর এদের আচরণ। সাধারণ ভূতেরাও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। কখনও এরা দেখতে ভীতিকর, বদখত, প্রচুর শব্দ করে, তবে এদের মধ্যে অনেকই আছে যারা মানুষের বিশেষ করে যাদের বাড়িতে বা এলাকায় থাকে তাদের ক্ষতি করে না। কখনও কখনও তো রীতিমত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে।
কিন্তু পল্টারগাইস্টদের কাছে এসব প্রত্যাশা করা বৃথা। এরা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে অভ্যস্ত, এমনকী এই আচরণের পেছনে গ্রহণযোগ্য কোন কারণও থাকে না। প্ৰচণ্ড প্রতিহিংসাপরায়ণও। বলা হয় সাধারণ ভূতেরা কেবল কোথাও উদয় হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেও এরা রীতিমত উপদ্রব চালায়।
নানা ধরনের পরিবেশেই পল্টারগাইস্টদের আনাগোনার খবর পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই সমাধিক্ষেত্রগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।
তবে এর সঙ্গে আবার বিভিন্ন গোরস্থানে দেখা দেয়া নিরপরাধ কিছু প্রেতাত্মাকে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। মেরি কটনের সেই শিশু শিকারদের কথা বলা যেতে পারে। নিজের চার সন্তানসহ গোটা পনেরো শিশুকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসি হয় ডারহামের পশ্চিম অকল্যাণ্ডের মেরি কটনের। যেসব গোরস্থান ও সমাধিক্ষেত্রে এই শিশুদের গোর দেয়া হয় সেসব জায়গায় তাদের ভূতের দেখা মেলে। এমনই এক দুর্ভাগা ছোট্ট ভূত একবার গ্রামের পোস্টম্যানকে অনুসরণ করতে থাকে। পরনে ছিল গোর দেয়ার সময়কার পোশাকটি। একপর্যায়ে পোস্টম্যানের পিছু পিছু তার বাড়ি হাজির হয়। তারপর ঢুকে পড়ে ভদ্রলোকের ছোট্ট শিশুটি যে কামরায় ঘুমিয়ে ছিল সেখানে। আতঙ্কিত পোস্টম্যান ও এই দুর্ভাগা ছোট্ট মেয়ের অশরীরীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে সদাশয় এক মহিলা। ভুতুড়ে এক বাড়িতে বাস করা ওই বুড়ো মহিলা প্রেতাত্মাদের সঙ্গ পেয়ে অভ্যস্ত। মহিলা পরে বলে, ‘অন্ধকার পাতালকুঠুরী খুব ঠাণ্ডা, সেখানে নিঃসঙ্গও ছিল মেয়েটা। ওকে একটু আরাম দেয়ার চেষ্টা করেছি আমি। তোমাকে আর বিরক্ত করবে না সে।’ সত্যি ছোট্ট ওই ভূতকে আর দেখা যায়নি। ধারণা করা হয় বুড়ির ভুতুড়ে বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিল সে।
এই পল্টারগাইস্টরা সাধারণ শান্ত প্রেতাত্মাদেরও বেশ ঝামেলায় ফেলে। বলা হয় কোন কোন গোরস্থানের পারিবারিক ভল্ট বা পাতালকুঠুরীগুলোতে মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা।
এবার যে ঘটনাটি বলব সেটা রেকর্ড করা হয় ইংল্যাণ্ডের সাফোক কাউন্টির স্টেনটন গ্রামের এক সমাধিক্ষেত্র থেকে ১৮১৫ সালে।
একদিন ভল্ট খুলতেই দেখা যায় কাঠের পাটাতনে আটকানো কাঠের ঢাকনি দেয়া কিছু সীসার কফিনের জায়গা বদল হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে গেল। কফিনগুলো আগের জায়গায় রেখে পাতালকুঠুরী আটকে দেয়া হলো। কিছুদিন পর একজনকে সমাধিস্থ করতে গিয়ে একই সমস্যা চোখে পড়ল গ্রামবাসীর। দু’বছর বাদে যখন আবার খোলা হলো ভল্ট, আরও বড় চমক অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। অন্যান্যবারের মত কফিনগুলো শুধু এলোমেলো অবস্থায়ই নেই, আটজন মানুষ বইতে হয় এমন একটা ওজনদার কফিন ভল্টের দিকে যাওয়া সিঁড়ির ওপর এনে রাখা। কে করল তবে কাজটা?
দু’একজন অতি বুদ্ধিমান দাবি করল পাতাল নদীর জলস্রোতের কারণে এটা হতে পারে। কিন্তু সেরকম কোন আলামত চোখে পড়ল না। তাছাড়া এরকম পানির তোড়েও সীসার কফিন নড়ার কথা নয়।
তবে এ ধরনের ঘটনার সবচেয়ে বড় প্রমাণটি পাওয়া যায় ওয়েস্ট ইণ্ডিজের বার্বাডোজে, ক্রাইস্ট চার্চের সঙ্গে যুক্ত ছোট্ট এক গোরস্থানে। দ্বীপটির সবচেয়ে দক্ষিণের বাতিঘরটির কাছেই এর অবস্থান। ব্রিজটাউন থেকে সড়ক পথে দূরত্ব আধ ঘণ্টা।
সাগর সমতল থেকে শ’খানেক ফুট উচ্চতায় ভল্টটি। পাথর কেটে ভেতরে বানানো হয়েছে। এর মেঝে, দেয়াল স্বাভাবিকভাবেই পাথরের। ওটা আটকানো নীল ডেভনশায়ার মার্বেল পাথরের টুকরো বা স্ল্যাব দিয়ে। জিনিসটা এতটাই ভারী যে কয়েকজন লোক লাগে তুলতে।
বার্বাডোজের প্রাচীন কয়েকটি পরিবারের সম্পত্তি এই ভল্ট। ওয়ালরণ্ডদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এটি। তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরে পায় ইলিয়টরা। রাজার সভাসদের সদস্য ছিল এই পরিবারগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। প্রচুর দাস ছিল তাদের। দ্বীপ শাসন করত তারাই।
১৭২৪ সালে বার্বাডোজ কাউন্সিলের সদস্য জেমস ইলিয়ট মারা যান ৩৪ বছর বয়সে। তাঁর দুর্ভাগা স্ত্রী টমাস ওয়ালরণ্ডের মেয়ে এলিজাবেথ স্বামীর দেহাবশেষ নিয়ে আসেন তাঁদের পারিবারিক ভল্টে। পাথরের ফলকে খোদাই করার ব্যবস্থা করেন কয়েকটা বাক্য, ‘সাহসী, পরোপকারী একজন মানুষ ছিলেন তিনি। ১৪ মে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয় তাঁকে। পরিচিত সবাই তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে ব্যথিত, পীড়িত।’
১৭২৪ সালে এখানে কয়টা কফিন ছিল তার রেকর্ড ছিল না। তবে শতকের বাকি সময়টা মোটামুটি নতুন কাউকে সমাধিস্থ করা হয়নি। ১৮০৭ সালের জুলাইয়ে গির্জার যাজকের কাছে একটা দরখাস্ত পেশ করা হয়, তাতে ইলিয়টদের আত্মীয়া মিসেস থমাসিনা গডার্ডকে এই ভল্টে সমাহিত করার আবেদন করা হয়। গির্জার পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়া হয়।