জিমকে ইচ্ছে করলে আজ রাতেই মেরে ফেলতে পারত হন্তারক। কিন্তু লোকের মনে আর সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে চায় না সে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিমকে কাল সকালে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মেরে ফেলবে। ঘটনাটা এমনভাবে ঘটাবে, কারও মনে সন্দেহ জাগার অবকাশ থাকবে না। সে জানে কাল সকালে জিম পাঁচ বুশেল শস্যসহ ট্রাক নিয়ে গ্রীনবে-তে যাবে। ট্রাক চালাবে জিম নিজে। ওর বাবার সাথে সেই কথাই হয়েছে। জিমের স্মৃতি ঘেঁটে সে দেখেছে গ্রীনবে-তে যাবার রাস্তায় একটা কংক্রিটের ব্রিজ পড়বে। ব্রিজে ওঠার পর জিমকে দিয়ে ঘণ্টায় ষাট মাইল বেগে গাড়ি ছোটাবে ভিনগ্রহের প্রাণীটি। ধাক্কা খাওয়াবে পিলারের সাথে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িসুদ্ধ ছাতু হয়ে যাবে জিম। লোকে ভাববে ব্রেক ফেল করে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়েছে জিম ব্যস, তারপর শুরু হবে আসল খেলা।
আঠারো
রাতে ভাল ঘুম হয়নি ডক্টর আবরারের। সকালে উঠে নাস্তা বানালেন তারপর ভাবতে বসলেন আজ কী কী কাজ আছে। শহরে যাবার কথা তাঁর শিলা হয়তো কালরাতেই চিঠি আর স্টেটমেন্ট টাইপ করে রেখেছে। সকাল ন’টায় তাকে ফোন করবেন বলেছেন। এখন বাজে সাড়ে আটটা। তিনি স্টেশন ওয়াগন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
শহরে পৌঁছে প্রথমেই শেরিফকে ফোন করলেন আবরার। শেরিফ বললেন, ‘ডক্টর, আবার পরে করুন। এইমাত্র স্টেট পুলিশ রেডিও কার থেকে একটা খবর পেয়েছি; বার্টলসভিল আর গ্রীনবে-র মাঝামাঝি জায়গায় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটেছে। ওখানে যেতে হবে এখুনি, সরি।’ লাইন কেটে গেল।
রিসিভার রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন আবরার। ভাবছেন আবার কে অ্যাক্সিডেন্ট করল। তাঁর পরিচিত কেউ নয়তো? হলে শেরিফ হয়তো বলতেন।
একটু পরে আবার শেরিফের অফিসে ফোন করলেন ডক্টর। এবার ফোন ধরল তাঁর ডেপুটি। ডক্টর নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন একটু আগে শেরিফের কাছে তিনি ফোন করেছিলেন। শেরিফ একটা অ্যাক্সিডেন্টের কথা বলে ফোন রেখে দিয়েছেন ভাড়া ছিল বলে। ডেপুটি কি বলতে পারবেন কে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে?
ডেপুটি সজ্জন মানুষ। বলল জেমস ব্রামার নামে হাইস্কুলের এক ছাত্র মারা গেছে। বার্টলসভিলে তার বাড়ি। সে ট্রাক চালিয়ে গ্রীনবে-তে যাচ্ছিল, গাড়ি চালাতে চালাতে সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিল। সোজা ব্রিজের পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ট্রাক। সাথে সাথে মারা গেছে ব্রামার।
জেমস ব্রামারকে চিনতে পেরেছেন আবরার। ছেলেটার কথা আগেও শুনেছেন মিসেস কোহলের মুখে। তার বাড়িতে কাজ করছিল ব্রামার। আর এই ব্রামারদের বাড়ির ধূসর বেড়ালই গতকাল পর্যন্ত আবরারের সাথে ছিল।
এখন ব্রামার বেচারা মারা গেছে। সন্দেহ নেই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিন, প্রাণীদের আত্মহত্যার সাথে ব্রামারের মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস ডক্টরের।
এবার আর ভয় লাগছে না আবরারের। বরং আশ্চর্য শান্ত হয়ে গেছেন, কর্তব্যকর্ম স্থির করে ফেলেছেন তিনি এইমাত্র। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর নষ্ট করার মানে হয় না।
ওই জিনিসটা, ওটা যাই হোক, একজন কাউন্টি শেরিফের একে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের দায়িত্ব নিতে হবে এফবিআই এবং পদস্থ বিজ্ঞানীদের। তবে শেরিফের সাথে যে তিনি কথাটা বলবেন না তা নয়, বলবেন। এফবিআই, সেই সাথে আর্মিকেও ব্যাপার জানানো দরকার।
সৌভাগ্যক্রমে দু’টি বিভাগেই হোমরা-চোমরা ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় আছে ড. আবরারের। শিলার কাছ থেকে স্টেটমেন্টের কপি আসার পরপরই তিনি এদের সাথে কথা বলা শুরু করবেন। তবে সবার আগে যা করা দরকার তা হলো বিপজ্জনক ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসা। আবরার ঠিক করলেন তিনি আবার নিজের আস্তানায় ফিরে যাবেন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কেটে পড়বেন ওখান থেকে। শিলার কাছ থেকে স্টেটমেন্ট নিয়ে সোজা চলে যাবেন গ্রীনবে-তে, ওখানকার কোনও হোটেলে উঠবেন এবং ফোনে সবার সাথে যোগাযোগ শুরু করবেন। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে তাঁর এফবিআই এবং আর্মির লোকজনদের ব্যাপারটা বোঝাতে সমর্থ হবেন। তারা বার্টলসভিলে আসবে তদন্ত করতে।
.
ভিনগ্রহের হন্তারক তার ‘পারসেপ্টর সেন্স’ প্রয়োগ করে দেখল ড. আবরার বাড়িতে নেই। আবরার তো প্রায়ই সকালে শহরে যায়। তবে সে মাছ ধরতে যায়নি বা হাঁটতে বেরোয়নি। কারণ গাড়িটা নেই।
ড. আবরারের জিনিসপত্র চেক করল সে। ব্যক্তিগত সমস্ত জিনিসই যথাস্থানে আছে। শুধু কাপড়-চোপড় বাদে। সিঙ্কে ধোয়া ডিশ দেখে বোঝা যায় নাস্তা খেয়েই সে বেরিয়েছে। এত সকালে তার শহরে যাবার কথা নয়। কোনও কারণে তড়িঘড়ি করে বেরিয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই; ফিরে আসবে সে। তারপর রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়বে-
বেড়াল হয়ে সে যে কটা দিন এ বাড়িতে ছিল, তার পারসেপটর সেন্স তেমনভাবে কাজ করেনি। তার পক্ষে বন্ধ ঘর বা ক্লজিটের ভেতরে উঁকি মারা সম্ভব হয়নি। পারেনি বন্ধ বই বা ভাঁজ করা চিঠি পড়তে। এখন, অবসরে, সে তার হারানো শক্তি আবার ফিরে পেতে শুরু করেছে।
হঠাৎ মাটিতে কম্পন অনুভব করল সে, গাড়ি আসছে। আবরারের স্টেশন ওয়াগন। একাই আসছে সে। ঘড়িতে দশটা বাজে।
আবরার সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন, হন্তারক তার ‘পারসেপশন সেন্স’ প্রয়োগ করল গাড়ির ওপর এবং এই প্রথম বুঝতে পারল কিছু একটা ভজকট হয়ে গেছে। গাড়িতে পুরানো তারপুলিন দিয়ে সযত্নে মুড়ে রাখা হয়েছে ধূসর বেড়ালটার লাশ। ভিনগ্রহের খুনীর দ্বিতীয় শেষ হোস্ট। একে আবরার কোথায় পেল, এটাকে গাড়িতেই বা রেখেছে কেন? আবরার কি তা হলে জঙ্গলে সেই প্রস্রবণের কাছে গিয়েছিল? সে এই সম্ভাবনার কথা কল্পনাও করেনি। সে শুধু পেছনে, বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছিল কেউ তাকে অনুসরণ করছে কিনা। কেউ পিছু নেয়নি বলে সন্তুষ্টবোধ করছিল সে। কিন্তু ওই ঝিরঝিরে বৃষ্টি-সন্দেহ নেই, মাটিতে তার পায়ের ছাপ অনুসরণ করেছে আবরার। ইস, আবার সে ধরা খেল।