গান শেষ হয়ে গেল। আর্থার সুযোগ বুঝে প্রশ্নটা করল, ‘আমি যদি আজ রাতে কিছুক্ষণের জন্যে অদৃশ্য হয়ে যাই, পলকে ব্যস্ত রাখতে পারবে তুমি?’
হাসল শীলা। ‘মানে? আমাকে বেশ্যা সাজতে বলছ তুমি? একটা ভুরু কপালে উঠে গেল কৌতুকের ভঙ্গিতে।
‘আমি কি অমন কথা বলতে পারি?’
সীটে গা এলিয়ে দিল শীলা। ‘আচ্ছা, বলো তো সত্তর বছরের বুড়োর জিনিসের সাইজটা কেমন হবে?’
‘চিনেবাদামের মত,’ বলল আর্থার। ‘বড় জোর আখরোটের সমান।’ ভাবল, ইদানীং কত স্বচ্ছন্দে এসব শব্দ উচ্চারণ করছে শীলা। অথচ বিয়ের পর ও গুষ্টি মারি’ বললেও লজ্জায় লাল হয়ে যেত মেয়েটা।
খিক খিক হাসল শীলা, হাত বাড়িয়ে চালু করে দিল ক্যাসেটের উল্টোপিঠ। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল আর্থার। ভাগ্যিস শীলা জানতে চায়নি কেন সে বাড়িটাতে চক্কর দিতে চায়। জানতে চাইলে মুশকিল হত আর্থারের। বানিয়ে কি বলত সে?
মোটরওয়ে এক্সিট সাইনটা দেখা গেল, মোড় ঘুরল আর্থার। ঘড়ির দিকে চাইল, তারপর টেপ বন্ধ করে খবর শুনল।
…মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে জানার পর তেল আবিবে রাশান ডেলিগেশনরা তাদের এমব্যাসী ত্যাগ করেছেন। আমাদের পলিটিকাল এডিটর ক্লেয়ার ম্যাকডালি বলেছেন…
খবর শুনতে শুনতে আর্থারের মনে পড়ে গেল ছেলেটার কথা। কল্পনায় ভেসে উঠল মরা চোখ দুটো। জানে না ছেলেটার মুখোমুখি হবার সুযোগ তার হবে কিনা। তবে চেষ্টার ত্রুটি করবে না আর্থার। শুধু মুখোমুখি হয়েই তার দায়িত্ব শেষ। এরপরের কাজ ডি কার্লোর ঈশ্বর যা করার করবেন।
‘এদিকে আগে এসেছ কখনও?’ শীলার গলা শুনে বাস্তবে ফিরে এল আর্থার।
মাথা নাড়ল। ‘কেন?’
‘যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছ মনে হচ্ছে এদিকের পথঘাট সব তোমার চেনা।’
‘আসার আগে ম্যাপে চোখ বুলিয়ে নিয়েছি।’
কাঁধ ঝাঁকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের ঝোপঝাড়ের দিকে তাকাল শীলা। খানিক পর পেরিফোর্ডের অট্টালিকার প্রকাণ্ড গেটের সামনে হাজির হয়ে গেল ওরা। জানালা নামিয়ে হাত বাড়াল আর্থার, টিপে দিল গেট পোস্টের বোতাম। বলল নিজের নাম। খুলে গেল গেট। গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা।
দরজায় ওদের জন্যে অপেক্ষা করছিল পল বুহের। তাকে দেখে খিলখিল হাসল শীলা। বলল, ‘চিনেবাদাম।’
গাড়ি থামাল আর্থার, নামার সময় জুতোর ডগায় টান লাগল হ্যাভারস্যাকের স্ট্র্যাপ, ঠুন শব্দ হলো। তবে শীলা লক্ষ করল না ব্যাপারটা। বুহের হেঁটে এল ওদের কাছে, শীলার দিকের দরজা খুলে ধরল। শীলা নামতে চুমু খেল ওকে, তারপর ঘুরল আর্থারের দিকে।
‘তুমি এসেছ খুব খুশি হয়েছি,’ হাত মেলাতে মেলাতে বলল বুহের। ভাবিনি এমন পরিস্থিতিতে আসতে পারবে।’
মোবাইলে টোকা দিল আর্থার। ‘আশা করি ডিনারের মজা এ জিনিসটা নষ্ট করবে না।’
শীলার হাত ধরে নিয়ে চলল বুহের, ওদের পিছু পিছু এগোল আর্থার।
ওরা হলঘরে ঢুকল। বাটলারের সালামের জবাবে মাথা ঝাঁকাল আর্থার। তাকাল গ্যালারির দিকে। সিঁড়ি এঁকেবেঁকে উঠে গেছে দোতলায়। করিডর ধরে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে চাইছে ও, বুঝে নেয়ার চেষ্টা করছে ছেলেটা কোথায় থাকতে পারে। শ্বাস টানল ও, লিভিংরুমে ফায়ারপ্লেসের ধোঁয়ার গন্ধ পেল শুধু।
ফ্রেঞ্চ উইন্ডোর সামনে ওদের নিয়ে গেল বুহের। এখান থেকে বাগানটা পরিষ্কার দেখা যায়। ফ্লাডলাইটের আলোতে ঝলমল করছে লন আর বাগান।
‘পরে তোমাদের বাগানে নিয়ে যাব,’ বলল বুহের।
শীলাকে খুঁজল আর্থার। দেয়ালে টাঙানো পেইন্টিংগুলো দেখছে সে ঘুরে ঘুরে। হাত তুলে ডাকল স্বামীকে। দাঁড়িয়ে পড়েছে একটা পোর্ট্রেটের নিচে। ওদিকে পা বাড়াল আর্থার। ডেমিয়েন থর্নের ছবি। নিচে লেখা ইউ.এস অ্যামব্যাসাডর।
‘তোমাকে বলেছিলাম না ও খুব সুন্দর দেখতে,’ ফিসফিস করে বলল শীলা, চোখ টিপল।
বুহের যোগ দিল ওদের সাথে, হাসল শীলার কথা শুনে। ‘মেয়েদের সহজেই আকর্ষণ করতে পারত ডেমিয়েন,’ বলল সে।
‘কিন্তু ওর বাচ্চাকাচ্চা হয়নি?’ প্রশ্ন করল আর্থার।
অবাক চোখে স্বামীকে দেখল শীলা। ‘ও কথা বললে কেন তুমি? কিসের মধ্যে কি!
আর্থার শ্রাগ করে ফিরল বুহেরের দিকে। ‘ভদ্রলোক বংশ রক্ষার ব্যবস্থা করে যাননি জেনে অবাক লাগছে।’
‘মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে মারা যায় সে,’ বলল বুহের।
‘শুনেছি। ওঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখেছি।’
হঠাৎ নীরবতা নেমে এল ঘরে। কেউ কিছু বলছে না। নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল দরজা খোলার শব্দে। বাটলার জানাল ডিনার রেডি।
আবার শীলার হাত ধরল বুহের, বো করল। ‘তোমাদের বোধহয় খিদে পেয়েছে।’ বলে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে এল সে ঘর থেকে।
হল পার হয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকল ওরা। বাটলার যার যার চেয়ার দেখিয়ে দিল। টেবিলের মাঝখানে, সুদৃশ্য মোমদানিতে ছ’টা কালো মোম জ্বলছে। লনের দিকে মুখ ফেরানো ফ্রেঞ্চ উইন্ডোগুলো খোলা। তারাজ্বলা আকাশ দেখা যাচ্ছে মেঘের ফাঁকে।
বসার সময় আর্থারের ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করে আর কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে কিনা। ডিনার পার্টিতে নারী সঙ্গ ছাড়া বুহেরের জমে না। তবে আজ বোধহয় আর কাউকে দাওয়াত দেয়নি সে। তিনটে প্লেট দেখা যাচ্ছে শুধু।
শীলার দিকে ফিরল আর্থার। আবার অনুভব করল ওকে ছাড়া তার চলবে না। এত অপরূপ লাগেনি কখনও শীলাকে। কালো, গা খোলা পোশাকটা ফর্সা শরীরে মানিয়ে গেছে দারুণ। শুধু আকর্ষণীয় বা অপরূপ বললে কম বলা হবে। বলা উচিত আগুনের মত জ্বলছে শীলা। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর্থার। জবাবে শীলাও মিষ্টি হাসল। বুহেরকে ছোট বেলার গল্প বলছে সে। হাসছে বুহের।