‘পাগল হয়ে যাচ্ছেন এমনটি মনে হচ্ছে কেন আপনার?’
এবার দুঃস্বপ্নটার কথা ডি কার্লোকে খুলে বলল আর্থার। প্রথমে ঠাট্টাচ্ছলে শুরু করলেও, শেষের দিকে সিরিয়াস হয়ে উঠল, গরগর করে বলতে শুরু করল বাচ্চাটার কথা, যাকে প্রায়ই স্বপ্নে দেখে সে। বলল ক্রুশে বিদ্ধ শিশুর কথা। এই শিশুকেও স্বপ্নে দেখে আর্থার। সেদিন হাসপাতালে ঘোরের মধ্যে ক্রুশে বিদ্ধ শিশুর কথাই শীলাকে বলেছিল ও।
আর্থারের কথা শেষ হলে কনুইতে ভর করে অনেক কষ্টে উঠে বসলেন ডি কার্লো, একটা হাত রাখলেন ওর হাতে।
‘খারাপ স্বপ্ন সত্যি হয়ে ওঠার ব্যাপারটাকে ইংরেজীতে কি যেন বলে?’
‘হ্যালুসিনেশন,’ জবাব দিল আর্থার।
মাথা ঝাঁকালেন ফাদার। শয়তানের শক্তি অসীম। তার জন্যে দূরত্ব কোন বাধা নয়। মানুষের কল্পনাশক্তিকেও সে প্রভাবিত, দূষিত করতে পারে। অ্যান্টিক্রাইস্টের শক্তি মানুষের মন ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এমনকি পশুদেরকেও সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’
‘শয়তানের শক্তি পাগল বানিয়ে দিতে পারে মানুষকে,’ বলে চললেন ডি কার্লো। ‘আপনার এক পূর্বসুরির কথা হয়তো মনে আছে-অ্যানড্রু ডয়েল?’
মাথা দুলিয়ে জানাল আর্থার। মনে আছে।
‘তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল ডেমিয়েন থর্নের তাই সে তাকে পাগল বানিয়ে দেয়। লোকটা আত্মহত্যা করে। তবে কেউ জানতে পারেনি কেন।
‘দেবতারা যাদের ধ্বংস করতে চান, তাদের প্রথমে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটান,’ বিড়বিড় করল আর্থার।
এদিক-ওদিক মাথা নাড়লেন ডি কার্লো, ‘দেবতারা নন, মাই সন, দেবতারা নন।’
ডেভিড দাঁড়িয়ে ছিল দোরগোড়ায়, তার দিকে হাত তুলে ইশারা করলেন ডি কার্লো। আলখেল্লার পকেট থেকে একটা পাউচ বের করল সন্ন্যাসী। কার্লো বটুয়াটা খুলে একটা ড্যাগার বের করলেন। ‘ওরা এ জিনিস আমার কাছে রাখতে দেয় না,’ বললেন তিনি। ‘তাই ব্রাদার ডেভিডের কাছে এটা থাকে।’
ড্যাগারের বাঁটে, যীশুর মূর্তির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আর্থার।
‘এই ড্যাগার দিয়ে ডেমিয়েন থর্নকে হত্যা করা হয়েছিল,’ বললেন ডি কার্লো। ‘এটাকে আবার ব্যবহারের সময় এসেছে।’
আর্থারের হাতে ড্যাগারটা দিলেন তিনি। আর্থার ছুরিটার হাতল চেপে ধরল।
‘কি করতে হবে আপনার তা জানাই আছে,’ কাশতে কাশতে শুয়ে পড়লেন ডি কার্লো। ‘সময় কিন্তু খুব কম।’ চোখ বুজলেন তিনি। তারপর বিড়বিড় করে বললেন, ‘বুক অভ রেভেলেশন বলেছে: ‘পৃথিবী আর সাগরের বাসিন্দাদের ওপর নামিয়া আসিবে বিপর্যয়। কারণ শয়তান আসিতেছে প্রচণ্ড ক্রোধ লইয়া, আর সে জানে তাহার হাতে সময় খুব কম।’
চোখ মেললেন ফাদার, তাকালেন আর্থারের দিকে। ‘তার হাতে সময় কম, মি. আর্থার। ওকে ধ্বংস করুন। তাড়াতাড়ি। আর মনে রাখবেন আপনাকে দুঃস্বপ্ন ‘দেখাচ্ছে শয়তান। তবে ভয় পাবেন না। জাগ্রত যীশু আপনাকে সাহায্য করবেন। তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখুন।
মাথা ঝাঁকাল আর্থার সায় দেয়ার ভঙ্গিতে, সন্ন্যাসী বেরিয়ে গেল তাকে নিয়ে। নার্স বন্ধ করে দিল দরজা। করিডর ধরে হাঁটছে আর্থার, কানে ভেসে এল ডি কার্লোর কাশির শব্দ। গা-টা কেমন শিরশির করে উঠল।
আবার অশুভ সঙ্কেত – ১৬
ষোলো
বিবিসি প্রেস অফিসারের মত মেট্রোপলিটান পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার টেড উইলিসও আমেরিকান এমব্যাসী থেকে ফ্রেডরিক আর্থারের দাওয়াত পেয়ে অবাক হয়ে গেল। আরও বেশি অবাক লাগল যখন রাষ্ট্রদূত নানা রাজনৈতিক সমস্যা, ট্রাফালগার স্কোয়ার বিপর্যয় এবং শেষে উইলিসের প্রিয় বিষয় সকার নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। এসব ফালতু জিনিস নিয়ে কথা বলার জন্যে অ্যামব্যাসাডর নিশ্চয়ই ওকে ডাকেননি, সন্দেহ হলো উইলিসের। ওর ধারণা সত্যি। একথা সেকথার পর ড্যাগার প্রসঙ্গ উত্থাপন করল আর্থার।
ভুরু কুঁচকে গেল টেড উইলিসের। ‘পাঁচটা ড্যাগার?’
‘হ্যাঁ। আপনাদের ব্ল্যাক মিউজিয়ামে আছে। শিকাগোতে কয়েক বছর আগে ওগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের মিউজিয়ামের ড্যাগারগুলো দরকার স্বল্প সময়ের একটা শো-র জন্যে। তারপর আবার ওগুলো ফেরত পাবেন।’
তাহলে এই ব্যাপার? পেশিতে ঢিল পড়ল উইলিসের। ‘ড্যাগারগুলো দেয়া যাবে। কোন অসুবিধে নেই। তবে যত্নে এবং সাবধানে রাখতে হবে।’
‘সে ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চয়তা আপনাকে দিচ্ছি।’
‘বেশ। তাহলে আমাদেরও দিতে কোন অসুবিধে নেই।
‘ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ। আমাদের মিউজিয়াম খুব খুশি হবে ওগুলো পেলে।’
এরপর আবার সকারের গল্পে ফিরে গেল ওরা। মিনিট বিশেক পর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে বিদায় দিল আর্থার। বাড়ি ফেরার পথে মনটা খচখচ করতে লাগল টেড উইলিসের।
রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা মনঃপূত হয়নি তার। বলেছে মিউজিয়ামের জন্যে ড্যাগারগুলো চাই। আসলেও কি তাই? তবে কথা যখন দিয়ে ফেলেছে ড্যাগার দিতেই হবে। অবশ্য যথাসময়ে ওগুলো ফেরত পাবে বলে আর্থারের ওপর আস্থা আছে তার। কারণ ফ্রেডরিক আর্থারকে সে পছন্দ করে, বিশ্বাসও করে।
.
‘শীলা!’ গলা চড়িয়ে ডাকল আর্থার। আজ অবশ্য শীলার বাড়ি থাকার কথা নয়। শপিং-এ যাবে শুনেছে আর্থার। সাড়া না পেয়ে বুঝল শপিংয়েই গেছে শীলা। খুশি হলো ও। শীলা বাড়িতে না থেকে ভাল হয়েছে। বাড়ি থাকলে ড্যাগার নিয়ে নানা প্রশ্ন করত এবং আর্থারের জবাবে হয়তো তাকে সন্তুষ্ট করতে পারত না।