ওয়াল্টার বলল, ‘বাইবেলকে আপনি যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন।’
‘অ্যান্টিক্রাইস্টের শিষ্যরাও নিজেদের মত ব্যাখ্যা দিয়েছে,’ বললেন ডি কার্লো। ‘ট্যাসোন নামে এক লোক ছিল। পৈশাচিক জন্মে সে সাহায্য করেছিল। পরে অনুতপ্ত হয়ে সে রবার্ট থর্নের কাছে যায়। বলে শয়তানকে ধ্বংস করার সময় উপস্থিত।’ বিরতি দিলেন তিনি। তারপর আবার শুরু করলেন, ‘বাইবেলের ব্যাখ্যা সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত আছেন আপনি। জানেন, শেষের সেদিনে যীশু আবার জন্ম নেবেন এবং মুখোমুখি হবেন অ্যান্টিক্রাইস্টের। আর আরমাগেড্ডনের লড়াই হবে ইসরাইলে।’
জবাবে মাথা দোলাল ওয়াল্টার।
‘তিনি আবার জেগে উঠেছেন। আমি তাঁকে দেখেছি।’
ওয়াল্টার কপাল চেপে ধরল হাত দিয়ে। উঠে পড়বে কিনা ভাবছে, কিন্তু বসে রইল মন্ত্রমুগ্ধের মত। ‘থর্ন তার শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিল যীশুর পুনর্জন্মের দিন যে সব পুরুষ শিশু জন্মগ্রহণ করবে তাদের সবাইকে মেরে ফেলতে। শতশত শিশু হত্যা করা হয়। কিন্তু শিশু যীশুর কোন ক্ষতি হয়নি।’
চোখ ঘষছে ওয়াল্টার, প্রীস্ট ওর গায়ে হাত রাখলেন। ‘বুঝতে পারছি,’ বললেন তিনি। ‘এ ব্যাপারগুলো হজম করা কঠিন, বিশেষ করে আপনার মত মানুষের জন্যে যাঁর সারাদিন কেটে যায় লাইব্রেরীতে। তবু অনুরোধ, আমার কথা শুনে যান।’
বিছানার পাশে একটা শেলফ, ওখান থেকে দুটো খাম বের করলেন ডি কার্লো, একটা দিলেন ওয়াল্টারের হাতে।
‘এই চিঠিখানা আগে পড়ন। অসুস্থ অবস্থায় এক সাহসী মহিলা লিখেছে ওটা। পড়ন এবং কথাগুলো বিশ্বাস করুন।’
প্রেরকের ঠিকানা উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের। ওয়াল্টার চিঠির শেষ পাতা উল্টে সই দেখল। নামটা অচেনা।
‘পড়ুন,’ নির্দেশের মত শোনাল ডি কার্লোর কণ্ঠ।
পড়তে শুরু করল নিকোলাস ওয়াল্টার:
আগামী হপ্তায়, ফাদার, আমাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে পেটের একটা অপারেশনের জন্যে। আমাকে বলা হয়েছে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাদায়ক হবে। তবে কথাটা বিশ্বাস করিনি আমি। মনে হয় না আমি আর বাঁচব। আমাকে তো আপনি চেনেনই, ফাদার। ভয়ঙ্কর ঘটনাটাও একমাত্র আপনিই জানেন। তাই আপনাকে বিশ্বাস করে লিখছি।
আপনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করার কয়েক হপ্তা পর যন্ত্রণাটা শুরু হয়ে যায়। প্রথমে ব্যাপারটাকে পাত্তা দিইনি। তারপর লক্ষ করলাম পেটটা ফুলতে শুরু করেছে। আমার ডাক্তার আমাকে এক স্পেশালিস্টের কাছে পাঠালেন। তিনি ফোলাটা বাড়ার সাথে নিয়মিত নানা পরীক্ষা করে যেতে লাগলেন। ‘ক্যান্সার’ শব্দটা তিনি উচ্চারণ করেননি T এখনও শব্দটা আমাদের কাছে অচ্ছুৎ কিনা। তিনি শুধু মাঝে মাঝে ‘ফোলা’ নিয়ে কথা বলতেন আর এক্স-রে রিপোর্ট দেখাতেন।
তবে ‘ফোলা’টা যে টিউমার নয় সে আমি জানি। আর এক্স-রেগুলো যে অন্য লোকের তাতেও আমার সন্দেহ নেই। ফাদার, কি বলব, হারামজাদা ফোলাটা আমাকে লাথি মারে। এটা যদি দুঃস্বপ্ন হয় তাহলে বলব আমি জীবন্ত দুঃস্বপ্ন দেখে চলেছি।
আমি জানি না ক্লিনিক থেকে বেরুতে পারব কিনা। যদি না পারি তাই আগেভাগে চিঠিটা লিখে রাখলাম। ধরে নিন এটা আমার স্বীকারোক্তির বিকল্প। তবে আমার মৃত্যুর আগে এ লেখা পড়তে পারবেন না।
আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই, তাই ডেমিয়েন সম্পর্কে আপনার তথাকথিত প্রমাণ আমাকে বিচলিত করতে পারেনি। ব্যাপারটা এখনও মেনে নিতে পারিনি আমি। ডেমিয়েন আমার কাছে আমার সন্তানের হত্যাকারী ছাড়া কিছু নয়। ও আমার ছেলে পিটারকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাই ওকেও আমি খুন করেছি। পিটারের পিঠে বেঁধা ছুরিটা হ্যাঁচকা টানে বের করার সেই অশ্লীল শব্দটা এখনও আমার কানে বাজে। দেখতে পাই ডেমিয়েনের শিরদাঁড়ায় ছুরি ঢুকিয়ে দেয়ার সেই দৃশ্যও।
ডেমিয়েন আপনার কাছে অ্যান্টিক্রাইস্ট। আমার কাছে আকর্ষণীয় একজন পুরুষ, যার শরীরে ছিল এক অদ্ভুত জন্মদাগ-এর বেশি কিছু নয়।
যাহোক, মাঝে মাঝে রাতের বেলা যখন ওসব কথা মনে পড়ে যায় সেই সময় আমার শরীরের ভেতরে এই শয়তানটা আমাকে…থাক, এ নিয়ে আর কথা বাড়াব না। আমাকে আর ক’দিনের মধ্যে ক্লিনিকে যেতে হবে। আমার জন্যে প্রার্থনা করবেন, ফাদার। আপনার প্রার্থনায় আমার কোন ক্ষতি হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’
পড়া শেষ করল ওয়াল্টার। মাথা নেড়ে বলল, ‘বেচারী। ক্যান্সারের প্রতিষেধক কি কোনদিন তৈরি হবে না?’
‘ওটা ক্যান্সার ছিল না।’
ওয়াল্টার বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল প্রীস্টের দিকে।
‘মেয়েটা ছিল ডেমিয়েন থর্নের শেষ শিকার। আমার ধারণা, সে ডেমিয়েনের সন্তানের জন্ম দিয়েছে।’ দ্বিতীয় চিঠিটা ওয়াল্টারকে দিলেন ডি কার্লো।
কোন কথা না বলে চিঠি পড়তে লাগল ওয়াল্টার: ‘ক্ষমা করুন, ফাদার, যে পাপ আমি করেছি…’
পড়া শেষ হলে ডি কার্লোর দিকে আবার তাকাল সে। চেহারা থেকে সমস্ত রং মুছে গেছে।
‘এ অবিশ্বাস্য,’ বলল ওয়াল্টার।
‘মহিলা মিথ্যা বলবে কেন?’ জিজ্ঞেস করলেন ডি কার্লো।
‘এ পাগলের প্রলাপ।
‘ভুল। মহিলা এক বর্ণ মিথ্যা কথা লেখেনি।’
ওয়াল্টার কিছু বলতে যাচ্ছিল, হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলেন ডি কার্লো। ‘সেই ভয়ঙ্কর রাতে আমি আর কেট রেনল্ডস তার সন্তানকে কবর দিই। ডেমিয়েনের লাশ ফেলে চলে আসি। ড্যাগারটা নিয়ে এসেছিলাম সাথে। স্বপ্ন দেখেছিলাম নতুন প্রভাতের। কিন্তু ভুল স্বপ্ন দেখেছিলাম। শয়তানের শিষ্যরা ডেমিয়েনের লাশ খুঁজে বের করে। রটিয়ে দেয় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে সে। ওদের নিজেদের ডাক্তারের এ ব্যাপারে সায় ছিল। শিকাগোতে, ওদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় লাশ।’