‘আমি জানতাম না আপনি অসুস্থ-’ ইতস্তত করে বলল ওয়াল্টার।
‘আমি ভালই আছি,’ জবাব দিলেন ডি কার্লো। ‘পৃথিবীটাই বরং অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
‘তা ঠিক,’ সায় দেয়ার ভঙ্গিতে বলল ওয়াল্টার, তরুণ-সন্ন্যাসীর দিকে তাকিয়ে হাসল। সে একটা চেয়ার নিয়ে এসেছে। চেয়ারের এক কোনায় বসল ওয়াল্টার, পকেটে হাত ঢোকাল শ্যারন ফেয়ারচাইল্ডের লেখাটা বের করার জন্যে।
‘আমার চিঠি পেয়েছেন?’
মাথা দোলালেন প্রীস্ট। ‘ড্যাগারগুলো যখন পেলেন, জানতেন ওগুলোর গুরুত্বের কথা?’
‘শুধু জানতাম ওগুলো প্রাচীন নগরী মেগিড্ডোতে পাওয়া ছুরির মত দেখতে। মেগিড্ডোর ড্যাগারের ছবি দেখেছি।’
‘ওগুলো মেগিড্ডোর ছুরিই। জেরুজালেমের কাছে, মাটির নিচের একটা শহর ছিল ওটা। এক সময় বলা হত আরমাগেড্ডন।’
‘শয়তানের আত্মা তাড়ানোর কাজে ছুরিগুলো ব্যবহার করা হত বলে শুনেছি, ‘ বলল ওয়াল্টার।
হাসলেন ডি কার্লো। না। ওগুলোর কার্যকারিতা আরও বেশি।’
ওয়াল্টার পত্রিকাটি বাড়িয়ে দিল ফাদারের দিকে। ‘আমি ছুরিগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এ লেখাটা পড়ার পর আবার মনে পড়ে গেল।
ডি কার্লো ভুরু কুঁচকে তাকালেন লেখাটার দিকে, তারপর পড়তে লাগলেন। তাঁর চোখ ভরে গেল পানিতে। জামার আস্তিন দিয়ে চোখ মুছে তাকালেন ওয়াল্টারের দিকে।
‘আমি এখন যে কথাগুলো বলব আপনি চুপচাপ শুনে যাবেন। আর কথার মধ্যে কোন প্রশ্ন করবেন না।’
রাজি হলো ওয়াল্টার। নড়েচড়ে বসল। প্রীস্ট ধীরে ধীরে তাঁর গল্প বলে গেলেন।
বললেন সেই ঘরের কথা, যেখানে শিক্ষানবিস হিসেবে স্পিলেট্টো নামের এক প্রীস্টের মৃত্যুর সময় স্বীকারোক্তিতে তিনি হাজির ছিলেন। ওই প্রীস্ট ছিলেন শয়তানের শিষ্য, এক পৈশাচিক জন্মগ্রহণে তিনি সাহায্য করেছিলেন। শয়তানের সাথে শেয়ালের মিলনে জন্ম নিয়েছিল এক প্রাণী।
ওয়াল্টার চোখ পিটপিট করল তবে কোন মন্তব্য করল না।
প্রাণীটাকে মানব শিশুর মত চেহারা দেয়া হয়। মার্কিন সিনেটর রবার্ট থর্ন এবং তার স্ত্রী ক্যাথেরিনের সদ্যেজাত সন্তানকে মেরে তার জায়গায় ওই প্রাণীটাকে বিকল্প হিসেবে হাজির করা হয়। স্পিলেট্টো রবার্টকে বুঝিয়েছিলেন তাঁর বাচ্চা মরে গেছে, আর ঈশ্বরের ইচ্ছায় এতিম একটি শিশুকে তিনি পেতে যাচ্ছেন নিজের সন্তানের মত। ক্যাথেরিন থর্নের এর আগে কয়েকবার গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে। মা হবার ওটাই ছিল তার শেষ সুযোগ। রবার্ট থর্ন রাজি হয়। বিকল্প শিশুটিকে নিজেদের সন্তান বলে স্ত্রীকে জানায় রবার্ট। শিশুটির নাম রাখে ডেমিয়েন।
‘শিশুটি ছিল ধ্বংসের প্রতীক,’ বললেন ডি কার্লো।
‘রবার্ট থর্ন শেষ মুহূর্তে সত্য উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি মেগিড্ডো চলে যান। তাঁকে সাতটি ড্যাগার দেয়া হয়। কিন্তু শয়তান পুত্রকে হত্যা করার আগে নিজেই খুন হয়ে যান।
চোখ ঘষল ওয়াল্টার, ডি কার্লো সন্ন্যাসীকে ইঙ্গিত করলেন ওকে এক গ্লাস পানি দিতে। তারপর আবার গল্প শুরু হলো। বললেন ডেমিয়েন থর্ন কিভাবে থর্ন কর্পোরেশনের প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হলো। থর্ন কর্পোরেশন এমন এক কোম্পানি যারা বিশ্বের বেশিরভাগ জনগণকে খাদ্য যুগিয়ে চলছে। বললেন কিভাবে ডেমিয়েনের শিষ্য তৈরি হতে লাগল, সেই সাথে বেড়ে চলল তার শক্তি এবং প্রভাব…
‘তারপর, আমার প্রার্থনার জবাব পেলাম,’ বলে চললেন ডি কার্লো। ‘আপনি ড্যাগারগুলোর খোঁজ পেলেন। আপনার প্রীস্ট ওগুলো আমার কাছে নিয়ে এলেন। এ ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছে। ঈশ্বরের অনুষঙ্গ হিসেবে আপনি কাজ করেছেন।
পানি পান করছিল ওয়াল্টার, বিষম খেল। তবে কিছু বলল না।
‘আমার ছয় ভাইকে নিয়ে ইংল্যান্ডে গেলাম ডেমিয়েন থর্নকে ধ্বংস করতে।’ কটের নিচ দিয়ে একটা ড্যাগার বের করলেন তিনি। নিজের অজান্তে চেয়ারের সাথে সেঁটে গেল ওয়াল্টার। ঝলমল করছে ইস্পাত, ড্যাগারের বাঁটে অসম্ভব সুন্দর শিল্পকর্ম। এটা সেই ড্যাগার। এই পাগল সন্ন্যাসী যা বলছে তাহলে কি তা সব সত্যি? ভাবল সে।
‘আপনি একজন প্রীস্ট হয়ে মানুষ খুন করতে যাচ্ছিলেন?’ অবিশ্বাস ওয়াল্টারের কণ্ঠে।
‘সে মানুষ, ছিল না,’ স্বাভাবিক গলায় বললেন ডি কার্লো। সে ছিল অ্যান্টিক্রাইস্ট-যীশুর শত্রু।’
মুচকি হাসল ওয়াল্টার। ডি কার্লো ওর মুখের সামনে ড্যাগারটা তুলে ধরলেন। ‘জানি, ব্যাপারটা মেনে নিতে আপনার মন সায় দিচ্ছে না,’ বললেন তিনি। ‘যদিও আপনি একজন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ। রবার্ট থর্নও মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হন তিনি। কেট রেনল্ডস নামে একটি মেয়েও ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে চায়নি। পরে সে-ই এই ড্যাগার ডেমিয়েন থর্নের পিঠে ঢুকিয়ে দেয়।’ ড্যাগারটা ফেলে দিলেন ওয়াল্টারের কোলে। সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল যীশুর মুখের দিকে।
‘ভেবেছিলাম আমরা সফল হয়েছি, তাকে ধ্বংস করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল ভুল।’ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডি কার্লো, শুয়ে পড়লেন কটে।
ওয়াল্টার ফলায় আঙুল ছোঁয়াল। ইচ্ছে করছে চলে যায়। কিন্তু উঠে দাঁড়াবার শক্তি পাচ্ছে না।
‘বুক অভ রেভেলেশনের কথা তো জানেনই,’ বললেন প্রীস্ট।
মাথা ঝাঁকাল ওয়াল্টার।
‘ওখানে এক জায়গায় আছে,’ বললেন ডি কার্লো। ‘ “এবং ওটা তাহাকে দেয়া হইল সন্ন্যাসীদের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্যে, জেতার জন্যে। এবং শক্তি দেয়া হইল তাকে, তাহার সকল আত্মীয়স্বজন, এবং জিভ এবং জাতিকে।” বিরতি দিলেন প্রীস্ট। “শক্তি দেওয়া হইল তাকে।’” পুনরাবৃত্তি করলেন তিনি। ‘আর পৃথিবীতে থর্ন কর্পোরেশনের চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই।’