ডেমিয়েন থর্ন মারা গেছেন নিজের বিছানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। ব্যাপারটা এক অর্থে অস্বাভাবিক।
শ্যারন ডেমিয়েন থর্নের ছবি দেখল। পাশে ছোট ছোট আরও কয়েকটি ছবি। সবগুলোর নিচেই ক্যাপশন আছে: রবার্ট থর্ন, ডেমিয়েনের বাবা, লন্ডন চার্চের সিঁড়িতে গুলি খেয়ে মারা গেছেন, রহস্যময় খুনেকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ক্যাথরিন, ডেমিয়েনের মা, হাসপাতালের জানালা দিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এর আগে, পেরিফোর্ডে, তাদের পারিবারিক নিবাসে মিসক্যারেজের শিকার হন ক্যাথরিন। ডেমিয়েনের চাচা-চাচী, রিচার্ড এবং অ্যান থর্ন, থর্ন মিউজিয়ামে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যান। ডেমিয়েনের সৎ ভাই, মার্ক, তেরো বছর বয়সে ব্রেন হেমারেজে মারা যায়।
আর্টিকেলটাকে সাব-হেড দিয়ে আবার ভাগ করা হয়েছে। একটা হেডিং এরকম:
পেরিফোর্ড, অভিজাত ভৌতিক বাড়ি
হেডিং-এর নিচে একটা জমিদার বাড়ির ছবি। তারপর ডেমিয়েনের তরুণী ন্যানির গল্প, সে জানালায় দড়ি বেঁধে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। ন্যানির পরে যে ডেমিয়েনের দেখাশোনা করত তার কথাও আছে। সে নির্মমভাবে খুন হয়েছে রবার্ট থর্ন যে রাতে মারা গেলেন সেই সময়। আর এই সেই পেরিফোর্ড, লেখক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পাঠকদের, যা ক্যাথেরিন থর্নের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্যেও দায়ী
গল্পের আরেক অংশে পরিবারের বাইরের লোকজনের মৃত্যুর কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আথারটন নামে এক লোক, থর্ন ইন্ডাস্ট্রির চীফ এক্সিকিউটিভ, শিকাগোতে, থর্ন ম্যানসনে আইস হকি ম্যাচে অংশ নেয়ার সময় পানিতে ডুবে মরেছে। ডেমিয়েনের তেরোতম জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি দেয়া হয়েছিল। আথারটন বরফের মধ্যে পড়ে সলিল সমাধি লাভ করে।
আরেক থর্ন এক্সিকিউটিভ, পাসারিয়ান, ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় মারা যায়। তখন ডেমিয়েন আর তার বন্ধুরা গাইড নিয়ে প্ল্যান্ট দেখতে বেরিয়েছিল। রিচার্ড থর্নের সাক্ষাৎকার নেয়ার পরপরই অদ্ভুত এক ঘটনায় মারা যায় এক মহিলা সাংবাদিক। এ জায়গাটা পড়ার সময় কেন যেন শিউরে উঠল শ্যারন, দ্রুত ক্রুশ আঁকল বুকে। তারপর আবার মনোযোগ দিল পড়ায়।
থর্ন মিউজিয়ামের কিউরেটর দুর্ঘটনায় রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে মারা গেছে। ওই একই সন্ধ্যায় শিকাগোর থর্ন মিউজিয়াম আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ মৃত্যু তালিকার যেন শেষ নেই। চোখ ঘষল শ্যারন, আবার পড়া শুরু করল…
অ্যান্ড্রু ডয়েল, লন্ডনের ইউএস এমব্যাসির রাষ্ট্রদূত, নিজের অফিসে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি…
একটি টেলিভিশন স্টুডিওতে ডেমিয়েনের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় অজ্ঞাত পরিচয় এক লোক আগুনে পুড়ে মারা যায়…
দুই লোক, এদেরও পরিচয় অজানা, কর্নওয়ালের মৃগয়াভূমিতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় শিকারে বেরিয়েছিল ডেমিয়েন। একজনের হাতে ছিল একটা ড্যাগার, আরেকটা ড্যাগার ছিল অপর লাশটির পাশে…
নোট নিল শ্যারন। মৃত্যুর ঘটনাগুলোই শুধু তার গল্পের সাথে সম্পর্কযুক্ত। লেখক কোন দুর্ঘটনা সম্পর্কেই উপসংহার টানেননি, শুধু দেখাতে চেয়েছেন করুণ মৃত্যু ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছিল থর্ন পরিবারে। ক্লিপিংগুলোর ফটোকপি করল শ্যারন, তারপর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রেস অফিসে ফোন করল। গলা শুকিয়ে গেছে ওর। ফেদারসে ঢুকে ঠাণ্ডা কোকে গলা ভেজাল। তারপর গেল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে।
প্রেস অফিসারের বয়স কম। সুন্দরী শ্যারনকে সাহায্য করার জন্যে সাগ্রহে এগিয়ে এল। শ্যারনের মত মেয়েদের সাথে বিয়ার পান করার সুযোগ তার কদাচিৎ ঘটে বলেই হয়তো।
শ্যারনের দেয়া ড্যাগারের ছবিগুলোয় চোখ বোলাল অফিসার, কুঁচকে উঠল ভুরু, ‘আত্মরক্ষার জন্যে তৈরি অস্ত্র মনে হচ্ছে।’
‘এগুলো আপনাদের মিউজিয়ামে আছে?’
‘হ্যাঁ। পাঁচটা আছে। আচ্ছা, আমি ফাইল দেখছি।’
কয়েক মিনিট পর কাঁচ দিয়ে ঘেরা একটা ঘরে শ্যারনকে নিয়ে এল প্রেস অফিসার। এটার নাম ব্ল্যাক মিউজিয়াম। ড্যাগারগুলোকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। পাঁচটাই। প্রতিটি ড্যাগারের বাঁটে খোদাই করা যীশুর মূর্তি। কাঁচের ভেতর থেকে যেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
‘তিনটে ড্যাগারের খোঁজ পাওয়া গেছে,’ তরুণ অফিসার ফাইলে চোখ বোলাল। ‘কর্নওয়ালের এক চ্যাপেলে। ওই পাঁচটা আমাদের হাতে এসেছে তদন্ত করতে গিয়ে একটা ড্যাগার ছিল লোকটার পকেটে, আর দুটো ছিল পিঠে বেঁধা।’
‘ফাইলটা একবার দেখতে পারি?’
অফিসার শ্যারনকে ফাইল দিল। একটু ইতস্তত করে বলল, ‘লাঞ্চ করেছেন? চলুন, একসাথে লাঞ্চ করি?’
‘নো, থ্যাঙ্কস, মিষ্টি করে হাসল শ্যারন। ‘আমাকে এখুনি অফিসে ফিরতে হবে।’ জামশেদুর রহমানকে অফিসে নয়, এল ভিনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া গেল। লাঞ্চ করছেন। নিজের পরিচয় দিল শ্যারন, বলল, ‘আপনার বন্ধু, আমার বস্, মি. স্টিফেন গনজালেস বলেছেন প্রয়োজনে আপনার সাথে দেখা করতে। আমি একটা ফিচার করছি। মি. স্টিফেন বললেন রোমে ফ্রেডরিক আর্থারের সাথে আপনি ডিনার করেছেন-’
‘ওটা আমাদের ব্যক্তিগত আড্ডা ছিল,’ বললেন জামশেদ।
লেখাটার একটা কপি তাঁকে দিল শ্যারন। ‘এই ড্যাগারের কথাই কি তিনি বলছিলেন?’