‘তারপর?’
‘কয়েক মাস পর হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় থর্ন। সম্ভবত অতিরিক্ত খাটাখাটনির কারণে। মেয়েটা সন্তানের জন্ম দেয়-’ হাসল আর্থার। ‘-তবে জরায়ু থেকে বাচ্চা বের হয়নি।’
আর্থার ভেবেছিল কথাটা শুনে শীলা হয় হাসবে না হলে মুখ কোঁচকাবে। কিন্তু কিছুই করল না সে। চুপ করে থাকল। একটু পর ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ডেমিয়েন থর্নের মত সুদর্শন পুরুষ জীবনে দেখিনি আমি।
চোখ ট্যারা করে আর্থার চাইল স্ত্রীর দিকে, ‘তার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয়েছে? জানতাম না তো!’
‘আমি ওকে ছবিতে দেখেছি। স্কুলে পড়ার সময় ডেমিয়েন থর্নকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।’
আবার নীরব হয়ে গেল দু’জনে। আর্থারের দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুলো শীলা।
‘মেয়েটার নাম কি?’
‘কেট,’ বলল আর্থার। ‘কেট কি যেন।’
‘কেট,’ ফিসফিস করল শীলা। ‘ক্যাথলিন, ক্যাথি, ক্যাটেরিন। আমাকে কেট বলে ডাকবে।’ স্বামীর দিকে ফিরল সে, জড়িয়ে ধরল তাকে। ‘আমার নাম কি বলো?’
‘কেট।’ বলল আর্থার।
এরপর প্রেম করল ওরা। উদ্দাম ঝড় শুরু হয়ে গেল বিছানায়। এক পর্যায়ে উন্মাদিনী শীলা অসম্ভব সব কাণ্ড করতে বলল ওকে নিয়ে, ফ্যাসফেঁসে গলায় আর্থারকে বারবার ডাকল ‘ডেমিয়েন’ বলে; আর্থার ওর কাঁধের ওপর দিয়ে জানালার দিকে তাকাল। শীলা স্বামীর চোখে চোখ রাখল। আর্থারের মনে হলো এটা আসলে আলোর কারসাজি: তারার আলো পড়েছে শীলার চোখে, হলুদ, ম্লান দুটি বিন্দুর মত লাগল চোখ জোড়া।
পরদিন সকালে হোটেলে এল আলখেল্লা পরা এক তরুণ। চেহারায় উদ্বেগ। তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল হোটেল-ক্লার্ক।
‘আমার নাম ব্রাদার ডেভিড… শুরু করল সে।
‘ও, আচ্ছা,’ বলল ক্লার্ক। আপনার জন্যে একটা প্যাকেজ আছে।’ কাউন্টারের নিচে হাত বাড়িয়ে একটা কাউচ আর একটা খাম বের করল সে। খামের মুখ টেপ দিয়ে আটকানো। ওটা খুলল সন্ন্যাসী, একবার চোখ বোলাল, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
‘আমি কি একবার মি. আর্থারের সাথে কথা বলতে পারি, প্লীজ। স্যুইট নং চৌত্রিশ…’
‘উনি চলে গেছেন, স্যার।’
‘কোন মেসেজ রেখে গেছেন আমার জন্যে?’
‘জ্বী, না, স্যার। শুধু আপনার হাতের জিনিস দুটো দিয়ে গেছেন।’
চোখ বুজল সন্ন্যাসী, কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কি করে প্রীস্টকে বলবে সে ব্যর্থ হয়েছে।
আবার অশুভ সঙ্কেত – ৫
পাঁচ
ফ্রেডরিক আর্থারের সাথে ডিনার করার দিন তিনেক পর, এক অলস সন্ধ্যায় অফিসের এক এক্সিকিউটিভের সাথে বারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন জামশেদুর রহমান, কথায় কথায় রাষ্ট্রদূতের প্রসঙ্গ চলে এল। তিনি সন্ন্যাসীর গল্পটা বললেন এক্সিকিউটিভকে, ড্যাগার প্রসঙ্গে হা হা করে হাসলেন, মন্তব্য করলেন ব্যাপারটা নির্ঘাত কারও উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা।
পরদিন অফিসে ঢুকেই এক্সিকিউটিভ এক তরুণী রিপোর্টারকে ইঙ্গিত করলেন তাঁর ঘরে আসতে। তরুণীর নাম শ্যারন ফেয়ারচাইল্ড। বয়স তেইশ। মাস দুই হলো ফ্লিট স্ট্রীটে ঢুকেছে। ইতিমধ্যে সংবাদিক হিসেবে বেশ নাম করে ফেলেছে। তেমন লম্বা নয় সে, তবে শরীরটা সুগঠিত, মুখখানা লাবণ্যে ঢলঢল। দু’মাসের মধ্যেই প্ৰমাণ করে দিয়েছে সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ধারাল মস্তিষ্কের অধিকারিণী। কর্তৃপক্ষ তার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
‘বলুন, স্যার,’ দরজা বন্ধ করে হাসি মুখে জানতে চাইল শ্যারন।
‘এখন তো সামার চলছে,’ বললেন এক্সিকিউটিভ।
‘জী।’
‘সামনের ঢিলে দিনগুলোর জন্যে কিছু গরমাগরম খবর মজুত রাখা দরকার।’
হাসিটা ধরে রেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল শ্যারন।
‘কাল জামশেদুর রহমানের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,’ বললেন এক্সিকিউটিভ। ‘উনি একটা গল্প বলেছেন। গল্পটার সাথে লাশ, ছোরা ইত্যাদি ব্যাপার জড়িত। তুমি পুরানো খবরের কাগজ ঘাঁটলে হয়তো এ বিষয়ে তথ্য পাবে। সম্ভবত হত্যাকাণ্ডগুলোকে ‘ক্রুশিফিক্সন কিলিং’ বা এ ধরনের কিছু একটা নাম দেয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হলে গল্পটা আমাদের ‘আনসলভড্ ক্রাইম স্পট’ বিভাগে ছাপতে পারব। করবে কাজটা?’
মাথা দোলাল শ্যারন। করবে।
খুশি হলেন এক্সিকিউটিভ। বললেন, ‘তবে তাড়াহুড়োর কিছু নেই।’
তাড়াহুড়োর কিছু না থাকলেও শ্যারনের মাথায় কোন আইডিয়া একবার ঢুকলে ওটার শেষ না দেখা পর্যন্ত তার শান্তি নেই। সে কাজে লেগে গেল।
কিছু ক্লিপিং জোগাড় করে ফেলল শ্যারন। কয়েকটা ক্লিপিং খুবই পুরানো, চাপ দিলে মুঠোর ভেতর গুঁড়ো হয়ে যেতে চায় কাগজ। কাগজপত্র নিয়ে নিজের ডেস্কে বসল সে। একটা সুবিধে হয়েছে শ্যারনের। লাইব্রেরীতে ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় দুই পৃষ্ঠার একটা রেডিমেড গল্প পেয়ে গেছে। ওটাতেই প্রথম চোখ বোলাল সে:
এক করুণ বংশের কাহিনী:
অভিশপ্ত থর্ন পরিবার
হেডিং-এর নিচে একটা ড্যাগারের ছবি। ড্যাগারের হাতলে যীশুর প্রতিমূর্তি। ছবিটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল শ্যারন। তারপর কলমটা টেনে নিল।
লেখাটার বেশির ভাগ জিনিস কাজে আসবে না শ্যারনের, লেখক থর্ন পরিবারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। তবে কৌতূহল নিয়ে রচনাটি পড়ল শ্যারন।
গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন বৃটেনে নিযুক্ত তরুণ রাষ্ট্রদূত ডেমিয়েন থর্ন। বত্রিশ বছর বয়স্ক এই যুবকের মৃত্যুর মাধ্যমে যেন থর্ন পরিবারের শেষ অধ্যায় রচিত হলো। এই বিখ্যাত পরিবারটির সবই ছিল, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সকলেই বরণ করেছেন অকাল এবং অদ্ভুত মৃত্যু।