‘জ্বী।’
‘একটা কোট করছি শুনুন,’ প্রার্থনার ভঙ্গিতে হাত তুলল সন্ন্যাসী। ‘যখন দেখিবে সৈন্যবাহিনী পরিবেষ্টিত করিয়া ফেলিয়াছে জেরুজালেমকে, নিশ্চিত জানিবে ঊষর সময় সমাগত… ইহা হইবে প্রতিশোধ গ্রহণ করিবার দিন, যাহা লিখিত আছে তাহা পূরণ হইতে পারে।’ সেইন্ট লিউক থেকে বললাম।’
ঘড়ি দেখল আর্থার। ‘দুঃখিত, আমাকে একটু…’ অনেক হয়েছে। এসব সন্ন্যাসী হলো বসতে পেলে শুতে চাইবার মত। একে প্রশ্রয় দেয়াই ঠিক হয়নি।
উঠে দাঁড়াল আর্থার, তার সাথে ব্রাদার ডেভিডও। আমার কথাগুলো হয়তো আপনার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে,’ বলল সে। ‘ফাদার ডি কার্লো আঠারো বছর আগে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। যীশুর দ্বিতীয় আগমনকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। শয়তান পুত্রের শারীরিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছিলেন।’
ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাসল আর্থার, সন্ন্যাসী হাত ধরে পা বাড়াল দরজার দিকে।
‘কিন্তু যীশুর শত্রুর শক্তি এখনও বেঁচে আছে, মি. আর্থার। শুধু ড্যাগারগুলো দিয়ে তাকে ধ্বংস করা যাবে।’
দরজা খুলল আর্থার।
‘অনুগ্রহ করে চিঠিটি একবার পড়বেন। আমি কাল আপনাকে ফোন করব।’
‘পাভোত্তি,’ হাঁক ছাড়ল রাষ্ট্রদূত। দৌড়ে এল সিকিউরিটি, খপ করে চেপে ধরল সন্ন্যাসীর আলখেল্লা, হিড়হিড় করে টেনে বের করল ঘর থেকে।
‘বিদায়, ব্রাদার ডেভিড,’ বলল আর্থার।
‘শয়তানের বংশধর এখনও বেঁচে আছে, মি. আর্থার। তাকে হত্যা করতেই হবে।’
গম্ভীর চেহারা নিয়ে দরজা বন্ধ করল আর্থার। দূর থেকে ভেসে এল সন্ন্যাসীর গলা।
‘ঈশ্বরের নামে আপনার অবিশ্বাস বিসর্জন দিন…’
ঘণ্টাখানেক পর, কয়েকটা ফোন সেরে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল রাষ্ট্রদূত। হাত বাড়িয়ে খামটা নিল। হাই তুলতে তুলতে ভেতর থেকে বের করল ছ’টা ফটোকপি। কাগজগুলোর সাথে একটা চিরকুটও আছে। তাতে লেখা:
‘এই মহিলা যা বলেছে সব সত্যি। ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করুন। অনুগ্রহ করে চলে আসুন।’
নিচে দস্তখত: ফাদার ডি কার্লো, সুবিয়াকো।
প্রথম পাতার লেখাটা শুরু হয়েছে এভাবে:
‘ক্ষমা করুন, ফাদার, যে পাপ আমি করেছি…’ প্রথম পাতাটা পড়ে ফেলল আর্থার, অবিশ্বাসে ডানে-বামে মাথা নাড়ছে। হাত বাড়াল স্কচের বোতলের দিকে।
‘জেসাস ক্রাইস্ট অলমাইটি,’ বিড়বিড় করল সে, তারপর হাসতে শুরু করল।
.
ফ্রেডরিক আর্থারকে সস্ত্রীক দাওয়াত দিয়েছেন বাঙালী সাংবাদিক জামশেদুর রহমান। ফ্লিট স্ট্রীটের সবচে’ খ্যাতনামা ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টদের একজন তিনি। পত্রিকাটির প্রায় জন্ম লগ্ন থেকে এর সাথে আছেন। অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ। রাজনৈতিক অঙ্গনের রথী-মহারথীরা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অফ দা রেকর্ডে অনেক কথাই হয় তাঁদের সাথে জামশেদুর রহমানের। রাজনীতিবিদদের সম্মান বাঁচিয়ে এমন দক্ষতার সাথে তিনি গোপন কথাগুলো বলে দেন যে রথী-মহারথীরা তাঁর ওপর কখনোই রাগ বা অভিমান করার সুযোগ পান না। এ ব্যাপারটা তাঁর কলিগদের ঈর্ষান্বিত করে তোলে। এ গুণটি আছে বলে জামশেদুর রহমান চোখ কপালে ওঠার মত একটি অঙ্কের বেতন পেয়ে থাকেন। শৌখিন স্বভাবের এই বৃদ্ধ মানুষটিকে আজ পর্যন্ত কেউ বাটনহোলে তাজা গোলাপ ছাড়া দেখেনি।
হোটেলের রেস্টুরেন্টে আর্থার ডিনার সারল জামশেদুর রহমানের সাথে। খাবারটা সুস্বাদু। সাথে কালো পোশাকে তার মোহনীয় স্ত্রী। সময়টা ভালই কাটছে ফ্রেডরিক আর্থারের। তবে কথা বলার চেয়ে শ্রোতার ভূমিকা পালন করতেই বেশি পছন্দ শীলার। বাঙালী সাংবাদিক আর স্বামীর খেলাধুলা, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক উপভোগ করছে সে।
শ্যাম্পেনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে চেয়ারে হেলান দিলেন জামশেদুর রহমান। এতক্ষণে সময় হয়েছে প্রশ্নটা করার। ‘শুনলাম এক পাদ্রি নাকি আজ আপনার সাথে দেখা করেছে,’ হালকা গলায় বললেন তিনি।
মাথা দোলাল আর্থার। জামশেদ ব্যাপারটা জানেন বলে অবাক হলো না সে। এই লোকটি কিভাবে যেন সব খবর আগেভাগে পেয়ে যান।
‘কোন্ এক মনাস্টেরি থেকে এসেছে,’ বলল সে। ‘জ্বালিয়ে মেরেছে।’
ড্যাগারের কথা খুলে বলল আর্থার। টের পেল বগলের নিচ দিয়ে ঠাণ্ডা ধারায় ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।
‘এই পাগলা সন্ন্যাসীটা চায় কি?’ জিজ্ঞেস করলেন জামশেদুর রহমান।
কাঁধ ঝাঁকাল আর্থার। ‘বিস্তারিত বর্ণনা করে আড্ডার মেজাজটা নষ্ট করতে চাই না। বলছে শয়তানের বংশধর বেঁচে আছে, ইংল্যান্ডে নাকি বাস করছে।’
‘মাই গড়’ হা হা করে হেসে উঠলেন জামশেদ।
‘এক বুড়ি মনাস্টেরিতে চিঠি লিখেছে…থাক্, বাদ দিন তো এসব।’
‘আরে, বলুন না,’ বললেন জামশেদ। ‘গল্পটা হয়তো ন্যাশনাল এনকুইরারে চালিয়ে দিতে পারব।’
‘আমার এসব শুনতে ভাল লাগছে না,’ এতক্ষণে মুখ খুলল শীলা। ‘আর কোন প্রসঙ্গ নেই?’
এরপর ওরা অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন।
ঘণ্টাখানেক পর, বিছানায় উঠে শীলা আর্থার জানতে চাইল স্বামীর কাছে, ‘ডিনারে কোন্ বুড়ির গল্প বলছিলে তুমি?’
‘ও কিছু না, অশ্লীল ব্যাপার।’ হাই তুলল আর্থার। ঘুম পাচ্ছে। ‘তবু আমি শুনতে চাই,’ জেদ ধরল শীলা। ‘বলো আমাকে।
শীলার সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে করল না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে বলল, ‘বুড়ি লিখেছে আমার এক পূর্বসুরি, ডেমিয়েন থর্নের সাথে বিবিসি’র এক মেয়ের দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল।’