দ্রুমান টিরিনার ট্রলিটা তার কাজ চালানোর মতো অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে উপরের উজ্জ্বল আলোটা জ্বেলে দিয়ে বলল, এই আলোটা জ্বালানোর জন্য আমার বাড়তি কিছু শক্তি ক্ষয় হচ্ছে কিন্তু আমি সেজন্য আজকে মোটেও চিন্তিত নই। আমি একটু বাড়তি আলো আজকে ব্যবহার করতেই পারি কারণ আমার জেনারেটরে আজকে দুটো নতুন দ্রুমান ইঞ্জিন লাগাতে যাচ্ছি। তোমরা দুজন। আমার বিদ্যুৎ শক্তি কয়েক শতাংশ বেড়ে যাবে আজ থেকে। কী চমৎকীর!
দ্রুমান টিরিনার অচেতন দেহের দিকে তাকিয়ে জিব দিয়ে একটা শব্দ করে বলল, তোমার পোশাকটা আগে খুলে নিই! কিছুক্ষণের ভেতরেই তুমি বেঁচে থাকার জন্য যেসব বাহুলা করতে হয় তার সবকিছু থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। তোমার শরীরে যে পোশাক আছে বা নেই তুমি সেটাও জানবে না। দ্রুমান টিরিনার পোশাকের জিপ টেনে খুলতে খুলতে বলল, তোমার এই সুন্দর সুগঠিত শরীর অন্যরকম হয়ে যাবে, হাতগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে, ঘাড় আর বুকের মাংসপেশি অকেজো হয়ে যাবে। তবে পা দুটো আরো সুগঠিত হয়ে যাবে। কোমরের মাংসপেশিগুলো হবে শক্ত–
দ্রুম্মান টিরিনার পোশাকের জিপ টেনে নিচে নামিয়ে এনে বলল, আমি তোমাকে এভাবে নগ্ন করে ফেলছি, তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
ঠিক তখনই একটা বিচিত্র ব্যাপার ঘটল, টিরিনার চোখ দুটো খুলে যায়। সে একদৃষ্টে দ্রুমানের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলল, হ্যাঁ আপত্তি আছে।
দ্রুমান ইলেকট্রিক শক খাওয়া মানুষের মতো ছিটকে পেছনে সরে যায়। তার চোখেমুখে বিস্ময় এবং তার থেকে বেশি আতঙ্ক। সে একটা হাত সামনে বাড়িয়ে অপ্রকৃতিস্থ মানুষের মতো বলল, তু-ত-তুমি-তুমি-
আমি। টিরিনা তার ট্রলিতে উঠে বসল তারপর পোশাকের খুলে ফেলা জিপটি টেনে আবার বন্ধ করে দিয়ে বলল, তুমি দীর্ঘদিন একা একা আছ তাই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কী কী উন্নতি হয়েছে তার খবর রাখ না।
প্রমান এদিক-সেদিক তাকিয়ে ছুটে গিয়ে স্টেইনলেস স্টিলের একটা ধারালো সার্জিক্যাল চাকু হাতে নিয়ে চাপা গলায় চিৎকার করে বলল, খবরদার। খবরদার বলছি—
টিরিনা ট্রলি থেকে তার পা দুটো নিচে নামিয়ে বলল, তুমি শুধু শুধু উত্তেজিত হয়ে না মান।
খুন করে ফেলব আমি, তোমাকে খুন করে ফেলব।
আমার জন্য এই শব্দটা ব্যবহার করায় একটা সমস্যা আছে। টিরিনা হাসি হাসি মুখ করে বলল, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে খুন করতে পারে। আমি তো ঠিক মানুষ নই।
দ্রুমান ভয় পাওয়া গলায় বলল, তুমি তা হলে কী?
সেটি আমিও পুরোপুরি নিশ্চিত নই। খুব স্থূলভাবে যদি বলতে চাও রোবট বা এনরয়েড বলতে পার। কেউ কেউ আবার সাইবর্গ বলে। তুমি কোনটা বলতে চাও সেটা আমি জানি না। টিরিনা উঠে দাঁড়িয়ে মানের দিকে অগ্রসর হয়ে বলল, তবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। যে জিনিসটা তোমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে তোমার জেনে রাখা ভালো যে তুমি যে চাকুটা হাতে নিয়েছ সেটা দিয়ে আমার চামড়ায় আঁচড়ও দিতে পারবে না। কাটার কোনো প্রশ্নই আসে না।
দ্রুমান বিড়বিড় করে বলল, মিথ্যা কথা বলছ। তুমি মিথ্যা কথা বলছ।
টিরিনা একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, তোমাকে কোনো কিছু বিশ্বাস করানোর জন্য আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে আমি চাই না তুমি নতুন করে কোনো বোকামি কর। আমি খালি হাতে তোমার মাথাটা গুড়ো করে ফেলতে পারব।
মিথ্যা কথা বলছ তুমি—
আমার চোখের দিকে তাকাও দ্রুমান।
দ্রুমান টিরিনার চোখের দিকে তাকায় এবং আতঙ্কে থরথর করে কাপতে থাকে। টিরিনার দুটি চোখ জ্বলছে, তীব্র আলোতে ঝলসে উঠছে দুটি চোখ।
টিরিনা ফিসফিস করে বলল, আমি মানুষ নই। কিন্তু আমার ভাবনা-চিন্তা মানুষের মতো। আরেকজন মানুষ এখন যা করত এখন আমিও তোমাকে তাই করব।
কী করবে তুমি?
টিরিনা এক পা এগিয়ে হঠাৎ খপ করে দ্রুমানের হাত ধরে ফেলল, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় প্রমান আর্তনাদ করে ওঠে, তার হাত থেকে ধারালো চাকুটা পড়ে যায়। টিরিনা ফিসফিস করে বলল, তুমি তোমার এই জেনারেটরে আরো একটি দ্রুমান ইঞ্জিন হয়ে থাকবে।
দ্রুমান কাতর গলায় বলল, না!
নগ্ন দেহে পা দিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে তুমি তোমার বন্ধু ডক্টর নিশিনার পাশাপাশি শুয়ে থাকবে। তোমার বন্ধু ভক্টর নিশিনার মুখে যেরকম প্রশান্তির হাসি ফুটে আছে তোমার মুখেও
সেরকম হাসি ফুটে থাকবে।
না-না–
টিরিনা তার যান্ত্রিক হাত দিয়ে মুহূর্তে দ্রুমানকে ট্রলিতে চিৎ করে শুইয়ে ফেলল। দ্রুত হাতে নিও পলিমারের স্ট্যাপ দিয়ে ট্রলিতে বেঁধে ফেলে বলল, তুমি একটু আগে বলেছ তোমার এককালীন সহকর্মী, তোমাকে উদ্ধার করতে আসা মহাকাশচারীদের দেখে মাঝে মাঝে তোমার হিংসা হয়। তোমার আর হিংসা হবে না। তুমি এখন তাদের একজন হয়ে যাবে।
দ্রুমান মাথা নাড়ল, বলল, না। আমি তাদের একজন হতে চাই না।
টিরিনা শেলফের ওপর রাখা হেলমেটটা হাতে নিয়ে মানের দিকে এগিয়ে আসে, তার মাথায় পরিয়ে নিচু গলায় বলল, চুপ করে শুয়ে থাক দ্রুমান। শক্তির অপচয় করো না।
স্কাউটশিপের মৃদু কম্পনে রিশির জ্ঞান ফিরে আসে। সে ঘোলাটে চোখে টিরিনার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কোথায়?
তুমি স্কাউটশিপে।
রিশি প্রাণপণে মনে করার চেষ্টা করে, কিছু একটা ভয়ংকর ব্যাপার ঘটেছিল মানুষের শরীর নিয়ে। নগ্ন দেহে অসংখ্য মানুষ কোথায় জানি শুয়ে আছে, কিন্তু সে মনে করতে পারছে না। টিরিনা তার মাথায় হাত রেখে বলল, তুমি ঘুমাও রিশি। তোমার কোনো ভয় নেই। কেউ তোমার ক্ষতি কতে পারবে না।