সুহান বলল, এখন বুঝতে পারছি।
তুমি সমন্বিত হয়েছিলে শেষ মুহূর্তে যখন একটু বাড়তি সময় লাগল, তুমি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে খানিকটা সময় নিলে
আমি জানি। কী ভয়ংকর বাস্তব সেই অনুভূতি—
তোমাদের দুজনের সমন্বয় ছিল অসাধারণ—আমরা তা না হলে কিছুতেই পারতাম। কিছুতেই না–
আমি সব বুঝতে পারছি রিয়ানা কিন্তু তবু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সুহান মাথা নেড়ে বলল, কিছুতেই না।
সুহান, অমিরা সবাই একসাথে সমন্বিত হয়ে ছিলাম। থিরুর মাঝে আমরা বেঁচে ছিলাম, আমাদের মাঝে থিরু বেঁচে ছিল। থিরু চিরদিনের জন্য আমাদের মাঝে সমন্বিত হয়ে গেছে। আমাদের সবার মাঝে থির একটা অংশ বেঁচে আছে। বেঁচে থাকবে।
সুহান কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক এরকম সময় লাল চুলের একটা ছেলে ছুটে এল, চিৎকার করতে করতে বলল, তোমরা এস। তাড়াতাড়ি এস। দেখ ভিডিস্ক্রিনে কী দেখাচ্ছে।
রিয়ানা আর সুহান বের হয়ে এল। বাইরে বিশাল ভিডিস্ক্রিনের সামনে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে, কালো চুলের একটি মেয়ে উত্তেজিত গলায় কথা বলছে সেখানে, মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমাদের সবার হাতে বিজ্ঞানীদের একটি প্রতিবেদন এসে পৌঁছেছে। এটি কেমন করে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে সেটি এখনো রহস্যাবৃত। আমাদের বিশেষজ্ঞরা এই মুহূর্তে সেটি বিশ্লেষণ করছেন, আমরা ইতোমধ্যে এর ভেতরের সতটুকু জেনে গেছি। যে বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর সত্যানুসন্ধানী মানুষেরা কথা বলে আসছিল সেটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের মাঝে কোনো বিভাজন নেই।
কালো চুলের মেয়েটি তার অবাধ্য চুলকে পেছনে সরিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল, পৃথিবীর সকল মানুষ এক। তাদের সবার দেহে একই রক্ত। তাদের মাথার চুল, গায়ের রং, মুখের ভাষা কিংবা ক্রোমোজম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু তারা একই মানুষ। মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। আগেও ছিল না ভবিষ্যতেও থাকবে না।
মেয়েটি হাতের মাইক্রোফোনটা হাতবদল করে বলল, সারা পৃথিবী থেকে আমাদের কাছে খবর এসে পৌঁছাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে এসেছে। তারা রাজপথে মিছিল করে তথাকথিত ক্যাটাগরি-বি. ছেলেমেয়েদেরকে এই মুহূর্তে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের কাছে খবর এসেছে শহরতলিতে নির্বাসিত তথাকথিত ক্যাটাগরি-বি. মানুষদের আবাসস্থলে হাজার হাজার মানুষ গিয়ে ভিড় করেছে। সেখানে মানুষের একটি অপূর্ব মিলনমেলার সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিস্ক্রিনে সবাই দেখতে পেল হাজার হাজার মানুষ একজন আরেকজনকে আলিঙ্গন করছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্মিত ছোট ছোট দুস্থ শিশু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, নানা বয়সী মানুষ তাদের গভীর মমতায় বুকে চেপে ধরছে। যে মানুষদের এতদিন ক্যাটাগরিবি, মানুষ হিসেবে অবহেলা করে এসেছে, সেই দুঃখী-অসহায় মানুষগুলোকে সাধারণ মানুষ জড়িয়ে ধরেছে গভীর ভালবাসায়।
যে ভালবাসা পৃথিবীর মানুষের সবচেয়ে পুরাতন অনুভূতি, সবচেয়ে অকৃত্রিম অনুভূতি, সবচেয়ে খাঁটি অনুভূতি।
যে অনুভূতি পৃথিবীর মানুষকে মানুষের পরিচিতি দিয়েছে।