না। আমার সব খাবার পুনরুজ্জীবিত খাবার।
শরীর থেকে যে বর্জ্য বেরিয়ে আসে সেটাকে পরিশোধন করে আবার খাবার তৈরির পদ্ধতিটি অনেক পুরোনো কিন্তু তার পরেও একজন মানুষ দিনের পর দিন এরকম খাবার খেয়ে যাচ্ছে চিন্তা করে বিশির শরীর কেমন জানি গুলিয়ে এল। টিরিনা বলল, আজকে তোমার সম্মানে এখানে একটি আনুষ্ঠানিক ভোজের আয়োজন করতে পারি।
দ্রুমান রু কুঁচকে বলল, তোমাদের কাছে কী কী খাবার আছে?
মেষ শাবকের মাংস থেকে শুরু করে সমুদ্রের মাছ, যবের রুটি থেকে শুরু করে ভুট্টা দানা, সত্যিকার ফলের কাস্টার্ড থেকে শুরু করে স্নায়ু উত্তেজক পানীয় সবকিছু আছে।
দ্রুমানের চোখ কেমন জানি চকচক করে ওঠে, সে সুড়ুৎ করে জিবে লোল টেনে বলল, শ্চমৎকার।
রিশি বলল, আমাদের হাতে খুব সময় নেই। আমার মনে হয় আমরা আমাদের ভোজটি দ্রুত সেরে নিয়ে রওনা দিয়ে দিই।
দ্রুমান রিশির কথার কোনো উত্তর দিল না। অবিশ্বাস্য ব্যাপার কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় এই অভ গ্রহের অসুস্থ পরিবেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। রিশি বলল, মান। তোমার কি প্রস্তুত হতে সময় লাগবে? স্কাউটশিপ দিয়ে মহাকাশযানে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগবে—সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ?
মান কোনো উত্তর দিল না, বিড়বিড় করে বর্জ্য পরিশোধনের সময় নিয়ে সে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা বলল। রিশি মোটামুটি নিশ্চিত হতে শুরু করেছে এই মানুষটি সম্ভবত খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ।
ঘরটিতে তিন জন মানুষের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দুটি এলুমিনিয়ামের বাক্স এনে ব্রিশি এবং টিরিনার বসার জায়গা করা হল। যে টেবিলটাকে খাবারের টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে টিরিনা তার উপর একটা নিও পলিমারের চাদর বিছিয়ে দিল। তার উপর নানা রকম খাবার, গরম করে রাখা হয়েছে। দ্রুমান লোভাতুর চোখে খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে—সে শেষবার কবে এরকম একটি ভোজে অংশ নিয়েছিল নিশ্চয়ই মনে করতে পারবে না।
টিরিনা স্নায়ু উত্তেজক পানীয়ের বোতলটি খুলে দ্রুমানকে জিজ্ঞেস করল, তোমার কাছে গ্লাস আছে?
দ্রুমান মাথা নাড়ল, বলল, ছে। তারপর উঠে একটা ড্রয়ার খুলে তিনটা ক্রিস্টালের গ্লাস নিয়ে এল। টিরিনা গ্লাসে পানীয় ঢালতে ঢালতে বলল, কী সুন্দর গ্লাস।
দ্রুমান মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। বিশেষ বিশেষ দিনে আমি এই গ্লাস ব্যবহার করি।
টিরিনা তার গ্লাসটি উঁচু করে বলল, মান, এই গ্রহে তোমার শেষ দিনটি উপলক্ষে
রিশি মাথা নাড়ল, বলল, শেষ দিন উপলক্ষে।
দ্রুমান কোনো কথা না বলে একদৃষ্টে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। যখন এক-দুটি কথা বলা ভদ্রভা তখন সে চুপ করে থাকে, কিন্তু যখন প্রয়োজন নেই তখন সে নিজের সাথে বিড়বিড় করে কথা বলে।
টিরিনা পানীয়টিতে চুমুক দিয়ে বলল, চমৎকার পানীয়।
রিশিও পানীয়তে চুমুক দিয়ে বলল, হ্যাঁ। চমৎকার।
দ্রুমান বিড়বিড় করে বলল, নিহিলিয়ান ডাবল ডোজ।
স্নায়ুকে আক্রমণ করার এক ধরনের ভয়ংকর বিষের নাম নিহিলিয়ান। দ্রুমান হঠাৎ করে এই বিষটির নাম উচ্চারণ করছে কেন ভেবে টিরিনা খুব অবাক হল। সে ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি নিহিলিয়ানের কথা কী বলছ?
গ্লাসের ভেতরে আমি দিয়ে রাখি। শুকিয়ে থাকে দেখে বোঝা যায় না।
রিশি আর টিরিনা ভয়ংকরভাবে চমকে উঠল, টিরিনা আর্তকণ্ঠে চিৎকার করে বলল, কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ চমৎকার বিষ। আমার সবচেয়ে পছন্দের।
রিশি লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, হঠাৎ করে তার হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। সে দাড়াতে পারছে না। নড়তে পারছে না।
দ্রুমান একদৃষ্টে রিশি আর টিরিনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, তোমরা আর নড়তে পারবে না। আরো কিছুক্ষণ তোমার জ্ঞান থাকবে, তারপর তোমরা অজ্ঞান হয়ে যাবে।
রিশি অনেক কষ্ট করে কোনোভাবে বলল, কেন?
কারণ তোমরা হবে আমার শক্তির সঞ্চয়। আমি একা একা এখানে কীভাবে এতদিন বেঁচে আছি তোমরা বুঝতে পারছ না? বেঁচে আছি কারণ আমি শক্তির কোনো অপচয় করি নি। আমি আমার জেনারেটরের জন্য কী ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি জানতে চাও? ব্যবহার। করেছি সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিন। তোমরা জান সেটা কী?
রিশি ফিসফিস করে বলল, মানুষের শরীর?।
হ্যাঁ। মানুষের শরীর। দ্রুমান জিব দিয়ে পরিতৃপ্তির একটা শব্দ করে বলল, বির্তনে লক্ষ লক্ষ বছরে মানুষের শরীরকে নিখুত করা হয়েছে, সৃষ্টি জগতে এর চাইতে ভালো কোনো ইঞ্জিন তৈরি হয় নি। আমি সেই ইঞ্জিনকে ব্যবহার করেছি আমার জেনারেটরে।
রিশি জিজ্ঞেস করতে চাইল সেই ইঞ্জিনগুলো কারা কিন্তু সে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না, হঠাৎ করে তার হাত-পা অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে, সে দেখতে পাচ্ছে শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু করতে পারছে না।
দ্রুমান বিড়বিড় করে বলল, নিহিলিয়ান হচ্ছে বিষের রাজা। একটু হিসেব করে দিতে হয়, বেশি দিলে কোমাতে চলে যাবে—কম দিলে ঘণ্টা খানেকের মাঝে শরীর মেটাবলাইজ করে ফেলবে, শরীর সচল হয়ে যাবে। মাঝামাঝি একটা পরিমাণ আছে যেটা দিলে তোমরা প্রথমে সবকিছু দেখবে, বুঝবে কিন্তু কিছু করতে পারবে না। আস্তে আস্তে জ্ঞান হারাবে। সেই জন্য এটা আমার প্রিয় বিষ।
দ্রুমান ঘর থেকে বের হয়ে একটা ট্রলি নিয়ে এল। ট্রলিটা রিশির পাশে রেখে আবার নিজের সাথে কথা বলতে থাকে, এখন তোমাদের আমি ইঞ্জিন ঘরে নিয়ে যাব। এত সুন্দর করে ডিজাইন করেছি, তোমাদের এটা দেখা উচিত। মানুষ যখন একটা সুন্দর সঙ্গীত রচনা করে তখন সে চায় এটা দশজন শুনুক, সুন্দর ভাস্কর্য করলে চায় দশজন দেখুক।