বুঝেছি। তোমরা বলো।
সুহান দরজার নিরাপত্তা প্যানেলে একটি একটি সংখ্যা আর অক্ষর প্রবেশ করাতে থাকে। শেষ সংখ্যাটি প্রবেশ করানোর সাথে সাথে খুট করে দরজাটি খুলে গেল।
চমৎকার! সুহান বিড়বিড় করে বলল, এখন আমার দরকার দশ মিনিট সময়। মাত্র দশ মিনিট।
রিয়ানা চাপা গলায় বলল, । সেই দশ মিনিট সময় তুমি পাবে। তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাক। আমরা সবাই তোমার সাথে সমন্বিত হয়ে আছি। তুমি এখানে একা নও।
জানি। সুহান বলল, আমি সেটা জানি।
যাও, তুমি কাজ শুরু করে দাও।
সুহান পিঠ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা খুলে নিচে নামিয়ে রাখল তারপর বড় সার্ভারের সামনে গিয়ে তার দরজাটা খুলে নেয়। কী-বোর্ডটি বের করে নিয়ে আসে, সুইচ স্পর্শ করতেই সেটি অবলাল রশি দিয়ে সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে। সুহান একটা চেয়ারে বসে কী-বোর্ডের ওপর ঝুকে পড়ে। তার হাত হঠাৎ করে জীবন্ত প্রাণীর মতো কী-বোর্ডের ওপর ছুটতে থাকে। ঠিক তিন মিনিট পর সুহান একটা লম্বা নিশ্বাস নিল। সে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের প্রতিবেদনটা খুঁজে পেয়েছে। বিশাল প্রতিবেদন, প্রথমে সব বিজ্ঞানীদের পরিচিতি। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন বয়স্ক সমাজবিজ্ঞানী, হাসিখুশি মানুষ। এই রিপোর্টটি তৈরি করার অপরাধে তাকে নাকি খুন করে ফেলা হয়েছে। মনিটরে হাসিখুশি। মানুষটিকে দেখে সেটি বিশ্বাস করতে মন চায় না। দলটিতে আরো অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন, সবাই মিলে পুরো ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করেছেন, অসংখ্য মানুষকে পরীক্ষা করেছেন, তাদের বুদ্ধিমত্তা আর সৃজনশীলতা পরিমাপ করেছেন। তাদের একজনের সাথে আরেকজনের তুলনা করেছেন। ক্যাটাগরি-বিমানুষের বিশেষ জিনগুলো অন্য মানুষের ওপর প্রতিস্থাপন। করেছেন, তাদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। দীর্ঘ গবেষণা শেষে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করে মানুষের ভেতরে বিভাজন করার এই পুরো ব্যাপারটিকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন। প্রতিবেদনটি দেখার সময় নেই, সুহান তাই দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হতে চায় এখানেই পুরোটা রয়েছে কি না। প্রতিবেদনের শেষ অংশটা সুহানের চোখে পড়ে যায়, কিছু মানুষকে ক্যাটাগরি-বি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে পৃথিবীর সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার এই উদ্যোগটা ষড়যন্ত্রমূলক, অন্যায়, অমানবিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণােদিত। এই মুহূর্তে মানুষের মাঝে ক্যাটাগরি-বি হিসেবে বিভাজন বন্ধ করে যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে এমন একটি কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন যেন
ভবিষ্যতে কখনো কেউ এরকম হীন ষড়যন্ত্র করার সাহস না পায়।
সুহান প্রতিবেদন থেকে চোখ সরিয়ে এনে নেটওয়ার্কের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করার কাজে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করল। একজন মানুষের পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়, কিন্তু সে একজন মানুষ নয়। সে অনেক মানুষের সমন্বিত একটি অস্তিত্ব। দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করে সবাই মিলে এর প্রস্তুতি নিয়েছে, সে নিশ্চয়ই নেটওয়ার্কের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে বাইরের পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের এই প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দিতে পারবে। নিশ্চয়ই পারবে।
সুহান দাতে দাঁত চেপে তার কী-বোর্ডের ওপর ঝুঁকে পড়ল। ঝড়ের বেগে তার হাত কী-বোর্ডের ওপর ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকগুলো প্রতিরক্ষা ব্যুহ রয়েছে, একটি ভেদ করেই শুধুমাত্র পরের কূহে যেতে পারে। প্রথম ব্যুহ থেকে পরেরটি কঠিন, তার পরেরটি আরো কঠিন। শেষ বৃহগুলোর সাথে হার্ডওয়্যারের সংযোগ আছে, সেগুলো স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র স্বরে এলার্ম বেজে উঠবে, সাথে সাথে শত শত সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী ছুটে আসবে এই সার্ভার ঘরে। এলার্ম বাজার পর থেকে এই ঘরে তাদের আসতে বড়জোর তিন থেকে চার মিনিট সময় নেবে, তার ভেতরে তার শেষ বৃহটা ভেদ করে প্রতিবেদনটি মূল নেটওয়ার্কে পৌঁছে দিতে হবে। সে কি সত্যিই পারবে সেটা করতে? সুহান জোর করে মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে দেয়, এই মুহূর্তে সে শুধু কাজ করে যাবে। সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে নিরাপত্তা ব্যুহ ভেদ করার কাজে। একটু একটু করে সে ক্যাটাগরি-বি. মানুষকে পৃথিবীতে মুক্ত মানুষ হিসেবে পৌঁছে দেবার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে।
চতুর্থ ব্যূহটি ভেঙে নেটওয়ার্কের কাছাকাছি পৌঁছে যাবার সাথে সাথে সমস্ত তথ্যকেন্দ্র কঁপিয়ে কর্কশ এলার্ম বেজে উঠল, সুহানের সারা শরীর হঠাৎ আতঙ্কে থরথর করে কেঁপে ওঠে। তার হাতে আর মাত্র কয়েক মিনিট সময়, দেখতে দেখতে নিরাপত্তাকর্মীরা চলে আসবে এর মাঝে সে যদি শেষ ব্যুহটা ভেদ করতে না পারে তা হলে ক্যাটাগরি-বি. মানুষ আর কখনোই সত্যিকারের মানুষ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
সুহান তার কী-বোর্ডের ওপর ঝুঁকে পড়ল। দ্রুত কিছু সংখ্যা প্রবেশ করিয়ে মনিটরের দিকে তাকায়, সঠিক সংখ্যাগুলো প্রবেশ করাতে পেরেছে কি? সুহান নিশ্বাস বন্ধ করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকে, হ্যাঁ, সে সঠিক সংখ্যাগুলো প্রবেশ করেছে, শেষ বৃহটা ভেঙে যাচ্ছে। দুর্বোধ্য সংখ্যা মনিটরের স্ক্রিনটা প্লাবিত করে রেখেছে কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে এই শেষ বৃহটা। সুহান এবারে পায়ের শব্দ শুনতে পেল, নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষেরা চলে এসেছে। দরজায় হাত রেখেছে তারা, এখনো ব্যহটা ভেদ হয় নি। আতঙ্কে সুহানের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে কি সে পারবে না? তার একটু সময় দরকার, বেশি নয়, মাত্র কয়েক মিনিট।