নিরাপত্তা প্রহরী তীক্ষ্ণ চোখে সুহানের দিকে তাকাল, বিড়বিড় করে বলল, অনেক দিন পরে?
সুহান মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। অনেক দিন পর।
অক্সিডেন্ট?
সুহান বলল, , অ্যাক্সিডেন্টের মতোই। সুহান ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আতঙ্কবোধ করে, তার গলার স্বরটি কি আজ একটু অন্যরকম শোনাচ্ছে, নিরাপত্তাকর্মীটি কি তার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে? না, সেরকম কিছু না, শেষ পর্যন্ত সে হাত নেড়ে তাকে ভেতরে যেতে বলল, বুকের ভেতরে আটকে থাকা একটি নিশ্বাসকে বের করে দিয়ে সুহান ভেতরে ঢুকে গেল।
আর কোনো ভয় নেই। এই তথ্যকেন্দ্রটাকে সুহান হাতের তালুর মতো চেনে। সে একেবারে নিচু পর্যায়ের নিরাপত্তাকর্মী, কাজেই তার সব জায়গায় যাবার অনুমতি নেই। কিন্তু যেখানে যেখানে যাবার অনুমতি আছে সে জায়গাগুলোর কোথায় কোন ত্রুটি আছে সেটি তার মুখস্থ। সেই ত্রুটিগুলো ব্যবহার করে কীভাবে একটার পর আরেকটা নিরাপত্তা ব্যহ ভেদ করে একেবারে সার্ভার রুমে যেতে হয় সেটাও সে জানে। আজকে তাকে সেগুলো ব্যবহার করে একেবারে ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। সুহান ঘড়ির দিকে তাকাল, তার হাতে অল্প কিছু সময় আছে। এখন তার নিজের ঘরে গিয়ে তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা তুলে নেবার কথা। সেটা হাতে নিয়ে তার নিচে যাবার কথা। সেখানে তাকে আজকের ডিউটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে, তখন তাকে ডিউটিতে যেতে হবে। কিন্তু সে এখন নিচে যেতে চায় না, নিচে গেলেই সবার সাথে দেখা হবে, সবার সাথে তার কথা বলতে হবে, সে এখন কথা বলতে চায় না। সে এখন কারো সাথে দেখা করতে চায় না। ডিউটিতে রিপোর্ট করতে যাবার আগে তার হাতে অল্প কয়েক মিনিট সময় আছে, সে সেই সময়টাই ব্যবহার করতে চায়। এই সময়ের ভেতরেই নিরাপত্তা ব্যুহ ভেদ করে সে ভেতরে ঢুকে যেতে চেষ্টা করবে। এখনই সবচেয়ে ভালো সময়, সবচেয়ে বড় সুযোগ। একটু পর সে সুযোগ আর নাও পেতে পারে।
সুহান তার ঘরে গিয়ে অস্ত্রটা তুলে নেয়, ভাগ্যিস সেখানে এখন রিকি নেই। রিকি থাকলে এখন তার কিছুক্ষণ রিকির সাথে কথা বলতে হত—বিকি তার অ্যাক্সিডেন্টের খোঁজ নিত। কোন হাসপাতালে ছিল, ডাক্তাররা কী বলেছে—সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে
চাইত। রিকি খুব চমৎকার একজন মানুষ, তার সাথে কথা বলতে সুহানের খুব ভালো লাগে কিন্তু এই মুহূর্তে সে কারো সাথে কথা বলতে চায় না।
সুহান অস্ত্রটা কাঁধে ঝুলিয়ে করিডোর ধরে হাঁটতে থাকে, করিডোরের একেবারে শেষ মাথায় লিফট। লিফটে করে সুহান তিন তালায় উঠে এল। সামনে এক শ মিটার পর্যন্ত নিরাপদ এলাকা, এইটুকু সে যেতে পারবে, এরপর নিষিদ্ধ এলাকা, সেখানে কারো যাবার অনুমতি নেই। কেউ যেন ভুল কৱে চলে না যায় সে জন্য দুটো অদৃশ্য অবলাল আলোর রশ্মি বাম থেকে ডান দিকে গিয়েছে, একটি মেঝে থেকে আধামিটার ওপর দিয়ে অন্যটি দেড় মিটার ওপর দিয়ে। অসতর্ক কেউ এখানে চলে এলে অবলাল রশ্মিটি বাধাপ্রাপ্ত হয়, সাথে সাথে কর্কশ স্বরে এলার্ম বাজতে শুরু করে। সুহান সেটা জানে তাই সে খুব সাবধানে একটা রশির ওপর দিয়ে অন্যটির নিচে দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, কোনো এলার্ম বাজল না। সুহান তখন দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে। শ খানেক মিটার দূরে এই তথ্যকেন্দ্রের প্রথম ত্রুটিপূর্ণ লেজার, সুহান এটা আবিষ্কার করেছে। লেজারটি বন্ধ করে দেবার সাথে সাথে নিরাপত্তা সার্কিট অন হয়ে যাবার কথা। কোনো একটি অজ্ঞাত কারণে সেটি অন হয় না এবং অমূল্য দুই মিনিটের সময় পাওয়া যায়, এই দুই মিনিটে যদি মূল করিডোরের ক্যামেরাটি একটু ঘুরিয়ে দেওয়া যায় তা হলে ক্যামেরার দৃষ্টিসীমার বাইরে দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়া যায়।
সুহান লেজারটির কাছে গিয়ে ক্ষিপ্র হাতে সেটা বন্ধ করে প্রায় ছুটতে ছুটতে মূল করিডোরে ফিরে এল, ক্যামেরাটা এখন কাজ করছে না, আগের ছবিটা এখানে ফ্রিজ হয়ে আছে। দুই মিনিট সময়ের ভেতর ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে দিতে হবে, বেশি ঘোরালে ধরা পড়ে যাবে, কম ঘোরালে কাজ করবে না, এর মাঝামাঝি একটা জায়গায় আটকে দিতে হবে। সুহান নিশ্বাস বন্ধ করে ক্যামেরাটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুরিয়ে লেজারটির কাছে ফিরে গেল, এখনো কর্কশ স্বরে এলার্ম বাজতে শুরু করছে না, তার মানে এখনো সে ধরা পড়ে যায় নি। সুহান নিশ্বাস বন্ধ করে লেজারটি আবার চালু করে দিল, কোথাও এবারও এলার্ম বেজে উঠছে না, কাজেই সবকিছু পরিকল্পনা মতো কাজ করছে। চমৎকার!
সুহান ঘড়ির দিকে তাকাল, কাজ শুরু করার পর মাত্র দুই মিনিট পার হয়েছে অথচ তার কাছে মনে হচ্ছে বুঝি কয়েক যুগ কেটে গেছে। সুহান পিঠে ঝুলিয়ে রাখা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রী পরীক্ষা করে এবারে মূল করিডোরের দিকে হাঁটতে থাকে। ক্যামেরাটা একটু অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, সুহান দেয়াল ঘেঁষে ভেতরে ঢুকে গেল, ক্ষিপ্র পায়ে সে ছুটে যায়, সামনে সার্ভার রুম। সুহান সার্ভার রুমের কাছে গিয়ে দাঁড়াল, দরজায় গোপন সংখ্যা প্রবেশ করিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। সুহান গোপন সংখ্যাটি জানে না, তার এখন সাহায্যের দরকার। তাকে সাহায্য করার জন্য এখন তাদের সমন্বিত সত্তা অপেক্ষা করছে। সুহান বলল, সংখ্যাটি কি বের করা হয়েছে?
হ্যাঁ।
বলো আমাকে।
বলছি। খুব সাবধান—একটি ভুল সংখ্যা প্রবেশ করালেই কিন্তু ধরা পড়ে যাবে।
ঠিক আছে।
প্রথম দুটি হচ্ছে সংখ্যা। তারপর তিনটি অক্ষর তারপর চারটি সংখ্যা। বুঝেছ?