হ্যাঁ।
রিয়ানা, সেখানে কিন্তু গার্ড বসিয়েছে।
সেজন্যই যেতে চাইছি। জায়গাটা আজ নিরাপদ হবে।
ড্রাইভার ট্যাক্সিটা ঘুরিয়ে সমুদ্রোপকূলের দিকে নিতে থাকে। রিয়ানা সুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার পকেটে কিছু রক্তের প্যাচ পাবে। আঙুলের মাঝে লাগিয়ে নাও। গার্ড যদি জিনেটিক কোডিং করার জন্য তোমার রক্ত নিতে চায় তা হলে থিরুর রক্ত পাবে।
সুহান তার পকেটে স্টিকারের মতো ছোট ছোট প্যাচগুলো খুঁজে পেল। তার আঙুলের ডগায় সেগুলো লাগিয়ে নেয়—দেখে বোঝার উপায় নেই কিন্তু রক্ত পরীক্ষা করার জন্য রক্ত নেওয়া হলে সুহানের রক্তের বদলে থিরুর রক্ত পাবে। সুহান একটু অবাক হয়ে বলল, তোমরা খুঁটিনাটি সবকিছু ভেবে রেখেছ?
হ্যাঁ। যে মানুষটি আজকে সুহান হয়ে তোমার বাসায় থাকবে তাকে দেখে বুঝতে পার নি?
পেরেছি। গলার স্বরটা পর্যন্ত আমার মতো।
হ্যাঁ। রিয়ানা বলল, শুধু রেটিনাটা তোমার মতো করতে পারি নি। তোমাকে তো আগে পাই নি–এই প্রথমবার পেয়েছি। এখন তোমার সব ধরনের প্রোফাইল নিয়ে নেব।
ট্যাক্সির ড্রাইভার নিচু গলায় বলল, সামনে গার্ড, রিয়ানা।
ঘাবড়ানোর কিছু নেই জেরিকো।
রিয়ানা সুহানের দিকে তাকিয়ে আশ্বাস দেওয়ার ভঙ্গি করে একটু হাসল।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কঠোর চেহারার একজন ট্যাক্সিটি দাঁড়াতেই রিয়ানা জানালার কাচ নামিয়ে দিয়ে মাথা বের করল। কঠোর চেহারার গার্ডটা ভাবলেশহীন মুখে বলল, কার্ড।
রিয়ানা এবং রিয়ানার দেখাদেখি সুহান তার কার্ডটি বের করে দেয়। কার্ডটি স্ক্যান করে গার্ডটি তীক্ষ্ণ চোখে তাদের দিকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
পিয়ারে।
কেন?
আমরা সেখানে কাজ করি।
গার্ড রক্ত পরীক্ষা করার ছোট যন্ত্রটা তাদের দিকে এগিয়ে দেয়, রিয়ানা ভেতরে আঙুল প্রবেশ করে গার্ডের সাথে অনেকটা খোশগল্প করার ভঙ্গি করে বলল, আজ অনেক কড়াকড়ি, কিছু হয়েছে নাকি?
গার্ড তার নাক দিয়ে একটা শব্দ করে বলল, সব সময় কিছু না কিছু হচ্ছে।
সুহানের বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটি ধকধক করে শব্দ করছে। গার্ড তার দিকে যন্ত্রটা এগিয়ে দিয়েছে, যদি ঠিক ঠিক রক্ত না নিতে পারে সে এক্ষুনি ধরা পড়ে যাবে। সুহান ফ্যাকাসে মুখে গার্ডের দিকে তাকাল। ঠিক তখন শুনল তার মস্তিষ্কে রিয়ানা কথা বলছে, কোনো ভয় নেই সুহান, তোমার আঙুলটা ঢোকাও।
সুহান কাঁপা হাতে আঙুলটি যন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করাল, সূক্ষ্ম একটা খোঁচা অনুভব করল সাথে সাথে। গার্ড ভুরু কুঁচকে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে, ঘুরে একবার সুহানের দিকে তাকাল, তারপর হাত নেড়ে তাদের চলে যেতে বলল। ট্যাক্সিটি চলতে শুরু করা মাত্র সুহান তার বুকের ভেতর আটকে থাকা নিশ্বাসটি বের করে দেয়। রিয়ানা তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, খুব ভয় পেয়েছিলে। তাই না?
সুহান মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ।
তোমার কোনো ভয় নেই সুহান। তুমি হচ্ছ আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সদস্য আমরা কিছুতেই তোমাকে ধরা পড়তে দেব না।
যদি কিছু একটা গোলমাল হয়ে যেত গার্ডের ওখানে?
সেজন্য আমাদের প্ল্যান বি. রেডি আছে।
সেটি কী?
আমরা রক্তপাত পছন্দ করি না তাই প্ল্যান বি. রক্তপাতহীন পরিকল্পনা। সেটাও যদি গোলমাল হয়ে যায় তখন প্ল্যান সি কাজে লাগাতে হয়। সেখানে খানিকটা রক্তপাত আছে।
সুহান এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ট্যাক্সিটা খামার পর দরজা খুলে রিয়ানা এবং রিয়ানার পিছু পিছু সুহান বের হয়ে আসে। একটা ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দুজন উপরে উঠে যায়। একটা দীর্ঘ করিডোর ধরে দুজন হেঁটে বড় একটা হলঘরে এসে পৌঁছাল। হলঘরের একপাশে খোলা জানালা। সেদিকে আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র এবং সমুদ্রের নোনা বাতাস ঘরের ভেতরে লুটোপুটি খাচ্ছে। হলঘরের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেশ কিছু মানুষ বসে আছে। সুহান এবং রিয়ানাকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়াল।
রিয়ানা অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, আমার প্রিয় কমরেডস—তোমাদের সবার সামনে উপস্থিত করেছি আমাদের সবচেয়ে নতুন সদস্য সুহানকে!
মধ্যবয়স্কা একজন মহিলা রহস্য করে বলল, আগে মাস্ক খুলুক তারপর বিশ্বাস করব। তোমাদের আমি বিশ্বাস করি না!
রিয়ানা হাসতে হাসতে সুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, মাস্কটা খোলো সুহান।
আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে না?
ফিরে যাবার সময় তোমাকে আবার আমরা থিরু বানিয়ে দেব। তোমার সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
সুহান তার ঘাড়ের কাছে খিমচে ধরে মাস্কটা টেনে খোলার চেষ্টা করতে থাকে। কমবয়সী একজন তরুণ এসে তাকে সাহায্য করল, পাতলা মাস্কটি খুলে এল সহজেই।
উপস্থিত সবাই একটা আনন্দের শব্দ করল। সুহান কী করবে বুঝতে না পেরে সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল।
একজন বয়স্ক মানুষ এগিয়ে এসে সুহানের হাত স্পর্শ করে বলল, এস সুহান, এতদিন আমরা তোমার কথা শুনেছি, আজ চোখে দেখতে পেলাম। বয়স্ক মানুষটি সহৃদয় ভঙ্গিতে হেসে বলল, আমার নাম পিরান। ডক্টর পিরান।
রিয়ানা বলল, ঢক্টর পিরান আমাদের মূল মস্তিষ্ক। আমাদের মস্তিষ্ক সমন্বয়ের পুরো ব্যাপারটি ডক্টর পিরানের পরিকল্পনা।
ডক্টর পিরান বলল, বুঝলে সুহান, এখন সবাই মস্তিষ্ক সমন্বয়ের কথায় একেবারে আবেগে আপ্লুত। প্রথম যখন বলেছিলাম তখন কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না।
কমবয়সী তরুণটি বলল, বিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল? আমার মাথা ফুটো করে সেখানে একটা ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট বসানো হবে সেটা মেনে নেওয়া কি এত সোজা?।