সুহান ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। তাকে পুরোপুরি সুস্থ হবার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী অপেক্ষা করছে। ক্যাটাগরি-বি. মানুষের সমন্বিত দলটাও অপেক্ষা করছে সেজন্য।
এর মাঝে একদিন সুহান তার জীবনের সবচেয়ে দুঃসাহসিক কাজটা করল। সে অবিশ্যি একা একা করল না, তাকে সবাই মিলে সাহায্য করল। সে ভোরবেলা ঘর থেকে বের হচ্ছে ঠিক তখন সে তার মস্তিষ্কে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, সুহান।
কে? রিয়ানা?
হ্যাঁ।
আজকে তুমি আমাদের কাছে আসবে? তোমার সাথে আমাদের সবার দেখা হবে।
সুহান অবাক হয়ে বলল, আজকে?
হ্যাঁ।
কিন্তু সেটি কীভাবে সম্ভব? নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
রিয়ানা শব্দ করে হাসল। বলল, সেটা তুমি আমাদের হাতে ছেড়ে দাও। ঠিক আছে?
সুহান একটু ইতস্তত করে বলল, কিন্তু আমি যে একেবারেই প্রস্তুত নই। যদি একদুই দিন আগে বলতে–
আমরা ইচ্ছে করে তোমাকে এক-দুই দিন আগে বলি নি। আমরা অনেক দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি, তোমার প্রস্তুতি নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। একটু পরেই তুমি দেখবে।
সুহান বলল, ঠিক আছে।
চমৎকার।
আমি তা হলে কী করব?
প্রত্যেকদিন যা কর ঠিক তাই করবে। ঘর থেকে বের হয়ে লিফটে উঠবে। লিফটে তোমার সাথে একজনের দেখা হবে—চমকে উঠো না তাকে দেখে—ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
এখন ঘর থেকে বের হও সুহান।
সুহান ঘর থেকে বের হল। লম্বা করিডোর ধরে হেঁটে সে লিফটের সামনে গিয়ে দাড়ায়। লিফটের বোতাম স্পর্শ করে সে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকে। লিফটটি প্রায় নিঃশব্দে এসে দাড়াল, দরজা খুলতেই সে ভেতরে এসে ঢুকল, একজন মানুষ তাকে পেছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লিফটটি চলতে শুরু করতেই মানুষটি ঘুরে তার দিকে তাকাল। সুহান ভয়ানক চমকে ওঠে, মানুষটি হুঁবহুঁ তার মতো। মানুষটি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আমাদের হাতে সময় নেই। এই লিফটা নিচে পৌঁছানোর আগে আমি যেরকম করে সুহান হয়েছি, তোমাকে সেরকমভাবে থিরু হয়ে যেতে হবে!
সুহান ইতস্তত করে বলল, কিন্তু–কিন্তু–
মানুষটি একটি রবারের মাস্ক হাতে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দেয়, এটা মুখে লাগিয়ে নাও! ঠিক তোমার মুখের মাপে তৈরি করা হয়েছে।
আমি আগে কখনো মাস্ক পরি নি–
সুহানের মতো মানুষটি নরম গলায় বলল, আমরা কেউই আগে অনেক কিছু করি নি। এখন করি। করতে হয়।
সুহান মাস্কটি মুখে লাগিয়ে নেয়, চটচটে এক ধরনের আঠালো জিনিস তার মুখের সাথে লেগে যায়। সুহানের মনে হতে থাকে তার নিশ্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে আসবে। মানুষটি বলল, তুমি নার্ভাস হয়ো না, এক্ষুনি অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
কথাটি সত্যি, কিছুক্ষণেই সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। মানুষটি নরম গলায় বলল, এখন তোমার জ্যাকেটের সাথে আমার জ্যাকেট পাল্টে নিতে হবে। তোমার জ্যাকেটের পকেটে তোমার কার্ডটা আছে তো?
আছে।
চমৎকার।
মানুষটি জ্যাকেট পাল্টে নিতে নিতে বলল, তোমার যা যা দরকার সব তোমার পকেটে পাবে।
সুহানের হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল। উদ্বিগ্ন মুখে বলল, সকাল সাড়ে দশটার সময় মেডিক্যাল কিটে আমার রক্ত পরীক্ষা করা হয়–
মানুষটি তাকে বাধা দিয়ে বলল, জানি। এজন্য তোমার একটু রক্ত নেব।
সুহান দেখল লোকটা তার পকেট থেকে একটা সিরিঞ্জ বের করেছে। কিছু বোঝার আগেই সুহান তার কনুইয়ের কাছে একটা খোঁচা অনুভব করল। মানুষটি হাসি হাসি মুখে বলল, আমরা নিচে নেমে গেছি। আমি আগে বের হব। তুমি একটু পরে।
আমি এখন কী করব?।
সেটা নিয়ে চিন্তা করো না। রিয়ানা তোমাকে বলে দেবে। শুধু একটা জিনিস মনে রেখো।
কী?
তুমি এখন সুহান নও। তুমি এখন থিরু।
নিঃশব্দে লিফটের দরজা খুলে গেল। কয়েকজন মানুষ পঁড়িয়ে আছে, তাদের মাঝে কেউ নিশ্চয়ই নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষ। সুহান লিফট থেকে বের হয়ে এল। তার বুকের ভেতর সুপও ধকধক করতে থাকে। সুহানের মতো মানুষটি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে ঠিক যেভাবে সুহান হেঁটে যায়। সুহান চোখের কোন দিয়ে লক্ষ করল মানুষটি কফি হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যে কফি হাউসে সুহান যায়। খানিকটা নিরাপদ দূরত্বে থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ তাকে অনুসরণ করছে।
সুহান একটা নিশ্বাস ফেলে দুই পা অগ্রসর হতেই সে তার মস্তিষ্কে একটা পরিষ্কার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, সুহান।
বলা রিয়ানা।
আমরা একটা হলুদ রঙের ট্যাক্সিতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
কোথায়?
ডান দিকে কয়েকশ মিটার সামনে। তুমি এস।
ঠিক আছে।
সুহান রাস্তায় নেমে ডান দিকে হাঁটতে থাকে। মানুষজন যাচ্ছে–আসছে। রাস্তায় বাল, ট্রাম, গাড়ি এবং ট্যাক্সি। সুহান ফুটপাত ধরে এগিয়ে যায়, সামনে রাস্তার পাশে একটা হলুদ রঙের ট্যাক্সি অপেক্ষা করছে, সে কাছে আসতেই তার দরজা খুলে গেল। সুহান রিয়ানার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, ভেতরে ঢুকে যাও, সুহান।
সুহান ভেতরে ঢুকে গেল। পেছনের সিটে রিয়ানা বসে আছে, তার দিকে তাকিয়ে সে মুখ টিপে হাসল, বলল, কেমন আছ সুহান?
ভালো।
ট্যাক্সিটা গর্জন করে ছুটে যেতে শুরু করতেই রিয়ানা বলল, এর ভেতর আমরা নিরাপদ কিন্তু তবু আমরা কোনো ঝুঁকি নেব না।
তার অর্থ আমরা মুখে কথা বলব না?
ঠিক ধরেছ। আগে আমরা নিজেদের আস্তানায় চলে যাই। রিয়ানা ট্যাক্সির ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল, জেরিকো, তুমি আমাদের পিয়ারে নিয়ে যাও।
ড্রাইভার রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যি?