হ্যাঁ। কাউকে না জানিয়ে নিজেরা যোগাযোগ রাখতে পারব। অত্যন্ত নিরাপদ।
হ্যাঁ। সেটা একটা কারণ। যেমন এই মুহূর্তে কয়েক ডজন নিরাপত্তাকর্মীদের নাকের ডগায় বসে আমরা কথা বলছি। তারা কিছু করতে পারছে না। কিন্তু সেটা বড় কারণ নয়।
বড় কারণটা কী?
বড় কারণটা হচ্ছে অনেক মানুষের মস্তিষ্ক যখন একসাথে কাজ করে তখন সবাই মিলে একটা সমন্বিত মানুষ হয়ে যায়। এই সমন্বিত মানুষটা আসলে একটা অতিমানব। তার বুদ্ধির কাছে কেউ আসতে পারে না। তথ্যকেন্দ্র চার চার শূন্য তিন নিরাপত্তা ভেদ করে সাধারণ কোনো মানুষের যাওয়া অসম্ভব একটা ব্যাপার, কিন্তু আমরা গিয়েছি। তুমি নিজের চোখে দেখেছ। ক্যাটাগরি-বি. মানুষের এই অসম্ভব ক্ষমতার সামনে ষড়যন্ত্রকারীরা অসহায় হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তখন বিপদের শুরু হল। তোমাকে দিয়ে–
আমাকে দিয়ে?
হ্যাঁ। আমরা মানুষের মস্তিষ্ককে সমন্বিত করার জন্য ছোট একটা ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট তৈরি করেছি। সেটা এমনভাবে কোড় করা আছে যে ক্যাটাগরি-বি. মানুষ না হলে কাজ করবে না। মস্তিষ্কের ভেতর সেটা বসাতে হয়। সেটা বলানোর খুব দীর্ঘ পদ্ধতি আছে। আমরা মানুষটাকে পুরোপুরি আলাদা রেখে তার সাথে একজন একজন করে সমন্বয় করি। সেজন্য বিশেষ ড্রাগ রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করি। মানুষটা নিজে প্রস্তুত থাকে বলে সেও সহযোগিতা করে। খুব ধীরে ধীরে একজন অভ্যস্ত হয়ে ওঠে আমাদের একজন হয়ে ওঠে।
সুহান ফিসফিস করে বলল, আমার মাথার ভেতরে সেরকম একটা ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট বসিয়ে দিয়েছে?
হ্যাঁ তথ্যকেন্দ্র চার চার শূনা তিনে যাকে খুন করেছে তার মস্তিষ্কের ইন্টগ্রেটেড সার্কিটটা এখন তোমার মাথায়। এটা যে কী ভয়ঙ্কর একটা কাজ তুমি জান না।
আমি অনুমান করতে পারি।
না তুমি অনুমান করতে পারবে না। যে প্রক্রিয়াটাতে অভ্যস্ত করার জন্য আমরা কয়েক মাস সময় নিই তোমাকে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেখানে ঠেলে দেওয়া হল। তোমার পাগল হয়ে যাবার কথা ছিল।
সুহান বলল, হ্যাঁ। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
তোমার ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এবং বিপদ হচ্ছে একটা ব্যাপার। আমাদের নিরাপত্তা হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য একটা ব্যাপার। হঠাৎ করে তাদের একজন মানুষ আমাদের সবচেয়ে গোপন
সার্কিটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তোমার সম্পর্কে কিছুই জানি না, অথচ তোমার মস্তিষ্ক আমাদের মস্তিষ্কের সাথে সমন্বিত, তুমি চিন্তা করতে পার?
হ্যাঁ। সেটা নিশ্চয়ই খুব বিপজ্জনক।
আমাদের এই সমন্বিত সত্তাটা হচ্ছে ক্যাটাগরি-বি. মানুষের একমাত্র আশা। আমরা। পুরো ব্যাপারটাকে নেতৃত্ব দিই, আমরা সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি এই সময় সবাই যদি ধরা পড়ে যেতাম কী ভয়াবহ ব্যাপার হত তুমি চিন্তা করতে পার?
সুহান কিছু না বলে চুপ করে রইল। রিয়ানা বলল, আমাদের খুব সৌভাগ্য আমরা ধরা পড়ি নি—তুমি আমাদের রক্ষা করে। তোমার প্রতি আমাদের সবার কৃতজ্ঞতা।
কৃতজ্ঞতা জানাবার কিছু নেই। আমি যা করছি সেটা নিজের জনা করেছি।
তুমি প্রথমে ছিলে আমাদের সবার সবচেয়ে বড় বিপদ। এখন তুমি হচ্ছ আমাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ।
কীভাবে?
তুমি তথ্যকেন্দ্র চার চার শূন্য তিনের নিরাপত্তা প্রহরী। যেখানে ঢোকার জন্য আমাদের কয়েক মাস পরিকল্পনা করতে হয়, দু-একজনকে প্রাণ দিতে হয়, তুমি সেখানে যখন খুশি চুকতে পার এবং সবচেয়ে বড় কথা তুমি এখন আমাদের একজন। তুমি কি আমাদের সাহায্য করবে?
সেই বিষয়টি নিয়ে তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে রিয়ানা?
না নেই। তবুও আনুষ্ঠানিকভাবে জানার একটা ব্যাপার আছে। এতক্ষণ যদিও শুধু আমি তোমার সাথে কথা বলছি কিন্তু আসলে সবাই আছে এখানে। আমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকি, অনেক দূরে থাকি কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক একটা, আমাদের অস্তিত্ব একটা, ক্যাটাগরি বি, মানুষদের রক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের ব্যক্তিগত অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সমন্বিত অস্তিত্বকে গ্রহণ করেছি। আজ থেকে তুমি আমাদের সমন্বিত অস্তিত্বের একজন। তোমাকে আমরা গভীর ভালবাসা দিয়ে গ্রহণ করছি সুহান।
তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।
এখন আর এখানে আমি এবং তুমি নেই। আমরা সবাই এক।
সুহান হঠাৎ প্রথমবার তৃতীয় একজন মানুষের কণ্ঠস্বর নিজের মস্তিষ্কে শুনতে পেল, সুহান, আমি ফিরু। তোমাকে আমাদের মাঝে সত্যিকার অর্থে সমন্বয় করার জন্য আমাদের আরো একটা জিনিস দরকার হবে।
সেটা কী থিরু?
তোমার জিনেটিক কোভিং। সেটা বের করার জন্য আমাদের দরকার তোমার মাথার একটা চুল কিংবা এক ফোটা রক্ত।
আমি সেটা কীভাবে দেব?
তুমি তোমার টেবিলে মাথার একটা চুল ফেলে যেও। সেটাই সহজ। আমরা তুলে নেব।
ঠিক আছে থিরু।
সুহান আবার রিয়ানার কথা শুনতে পেল, আমরা এখন যাচ্ছি সুহান।
ঠিক আছে।
আমরা নিশ্চয়ই একদিন পাশাপাশি বসব—একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকাব, মুখ দিয়ে কথা বলব, কান দিয়ে শুনব, একজন আরেকজনকে স্পর্শ করব।
নিশ্চয়ই করব রিয়ানা। নিশ্চয়ই করব।
০৭.
সুহান খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে নিরাপত্তা বাহিনীকে ধোকা দেওয়া শুরু করল। প্রথমে সে তার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইল সে কয়েকজন মানুষের কথা শুনতে পাচ্ছে তার কোনো গুরুত্ব আছে কি না। ডাক্তার জানতে চাইল কথাগুলো কী। সুহান বলল কথাগুলো ব্যক্তিগত কথা অর্থ নেই, মনে হয় কয়েকজনের কথোপকথন। তবে কয়েকবার নেপচুন এভিনিউ কথাটা শুনতে পেয়েছে। ডাক্তার জানতে চাইল কত নম্বর নেপচুন এভিনিউ। সুহান যদিও খুব ভালো করে জানে তার বলার কথা ৩৭ নেপচুন এভিনিউ তারপরও সে ইতস্তত করে বলল তার ভালো করে মনে নেই সেটা ২৭ কিংবা ৩৭ কিংবা অন্য যে কোনো সংখ্যা হতে পারে।