সুহান চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, ডাক্তার।
একজন ডাক্তার তার কাছে এগিয়ে আসে। সুহান ক্লান্ত গলায় বলল, আমাকে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারবে?
কেন?
আমার মাথার মাঝে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।
কেউ কি তোমার সাথে কথা বলছে?
হ্যাঁ।
ডাক্তার চকচকে চোখে তার দিকে এগিয়ে আসে, কী বলছে তোমার মাথার ভেতরে?
বলছে ঘুমের ওষুধ দিয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।
ও। ডাক্তারের এক ধরনের আশাভঙ্গ হল। সে ওষুধের কেবিনেটের কাছে ফিরে গেল, একটা ছোট সিরিঞ্জ নিয়ে ফিরে এসে সুহানের হাতে সিরিঞ্জটা ঢুকিয়ে দিতেই তার সারা শরীরে একটা আরামদায়ক আলস্য ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সুহানের সারা শরীরে ঘুম নেমে আসতে থাকে।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুহান দীর্ঘ সময় ধরে বিয়ানা নামের একটা মেয়েকে স্বপ্নে দেখল। কমবয়সী হালকা-পাতল? তেজস্বী একটা মেয়ে, মাথার অবাধ্য চুলকে উজ্জ্বল লাল রঙের একটা স্কার্ফ দিয়ে বেঁধে রেখেছে। মেয়েটার বড় বড় বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, রোদে পোড়া ত্বক। প্রসাধনহীন মুখে এক ধরনের অগোছালো সৌন্দর্য। ছটফটে চঞ্চল এবং খানিকটা বেপরোয়া, হাসিটা খুব সুন্দর কারণ মেয়েটার মুক্তার মতো ঝকঝকে দাঁত। স্বপ্নটি শুরু হল এভাবে, শহরের মাঝামাঝি অতলান্ত সড়ক নামে যে ব্যস্ত ছোট রাস্তাটা আছে সেখানে কিশলয় ক্যাফের ভেতর থেকে বিয়ানা নামে মেয়েটি বের হয়ে বলল, এই যে শোন, তুমি এদিকে তাকাও।
সুহান তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখতে পেল। মেয়েটা বলল, আমার নাম রিয়ানা! নামটা তোমার মনে থাকবে তো?
সুহান বলল, কেন থাকবে না? রিয়ানা তো মনে রাখার জন্য এমন কোনো কঠিন নাম নয়।
রিয়ানা হাসল, বলল, । একেবারেই কঠিন নাম নয়। খুব সাধারণ নাম, মনে রাখা খুব সহজ। কিন্তু তুমি তো এখন স্বপ্ন দেখছ। মানুষ যেটা স্বপ্নে দেখে জেগে ওঠার পর সেটা ভুলে যায়। তুমিও যদি ভুলে যাও?
সুহান বলল, স্বপ্নের কথা মনে রাখতে হবে কেন?
মাঝে মাঝে মনে রাখতে হয়। তোমাকে এই স্বপ্নটার কথা মনে রাখতে হবে।
কেন? এই স্বপ্নটা কেন মনে রাখতে হবে?
সেটা আমি তোমাকে এখন বোঝাতে পারব না। বোঝালেও তুমি বুঝবে না।
কেন বুঝব না?
কারণ এটা স্বপ্ন। স্বপ্নে সবকিছু বোঝা যায় না। রিয়ানা নামে মেয়েটা বলল, তোমার খানিকক্ষণ সময় আছে?
তা অাছে।
তা হলে এস আমার সাথে। এই ফুটপাত ধরে হাঁট। চেষ্টা কর সবকিছু মনে রাখতে। প্রথমে একটা ছোট ফুলের দোকান তারপর একটা ক্রিস্টালের দোকান। মনে থাকবে তো?
হ্যাঁ মনে থাকবে।
চমৎকার। রিয়ানা সুহানের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল, তোমার নাম কী?
সুহান।
সুহান! রিয়ানা হাসল এবং হাসির সাথে সাথে তার মুক্তার মতো দাঁতগুলো ঝকঝক করে উঠল।
সুহান বলল, তোমার দাতগুলো খুব সুন্দর।
রিয়ানা হঠাৎ খিলখিল করে হাসতে থাকে। সুহান বলল, তুমি কেন হাসছ?
তোমার কথা শুনে হাসছি।
আমি কি কোনো হাসির কথা বলেছি?
ন। বল নি। আমি হাসছি অন্য কারণে।
কী কারণে?
একটা মেয়ের সাথে তোমার দেখা হয়েছে এক মিনিটও হয় নি, তুমি সেই মেয়েটাকে বলছ তার পঁতগুলো খুব সুন্দর। কেন বলছ জান?
কেন?
কারণ এটা স্বপ্ন। স্বপ্নে মানুষের কোনো ভান থাকে না। যেটা সত্যি সেটা বলে দেয়। সেটা করে ফেলে।
কী আশ্চর্য!
কোন জিনিসটা তোমার আশ্চর্য মনে হচ্ছে সুহান?
এই পুরো ব্যাপারটা। এই স্বপ্নটা এত বাস্তব যে মনে হচ্ছে এটা সত্যি সত্যি ঘটছে।
মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে তখন তার কাছে সেটা সব সময় সত্যি মনে হয়।
কিন্তু এটা অন্যকরম।
রিয়ানা হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ঠিক আছে তা হলে তুমি মনে রেখ তোমার এই স্বপ্নটা একটু অন্যকরম। মনে থাকবে?
হ্যাঁ। মনে থাকবে। সুহান রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল, রিয়ানা।
বলো।
তোমার চোখগুলোও খুব সুন্দর।
রিয়ানা এবারে আগের মতো খিলখিল করে হেসে উঠল না, কিছুক্ষণ সুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার ভালবাসার কোনো মেয়ে আছে সুহান?
না নেই।
কেন নেই?
আমি ক্যাটাগরি-বি. মানুষ। ক্যাটাগরি-বি. মানুষের খুব দুঃখ। তাদের স্বপ্ন দেখতে নেই। ভালবাসার মেয়ে থাকতে নেই। কারো স্বপ্নকে নষ্ট করতে নেই।
রিয়ানা চোখ বড় বড় করে সুহানের দিকে তাকিয়ে রইল। সুহান বলল, আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি রিয়ানা?
না সুহান, আজকে নয়। তুমি আমাকে কী প্রশ্ন করবে আমি জানি। আরেকদিন জিজ্ঞেস করো।
কিন্তু এটা তো একটা স্বপ্ন। আরেকদিন তো এই স্বপ্ন আমি দেখব না। সেই স্বপ্নে তুমি থাকবে না।
তুমি যদি চাও তা হলে তুমি আবার এই স্বপ্ন দেখতে পাবে।
সেটা কীভাবে সম্ভব?
সেটা সম্ভব। কারণ এটা অন্যরকম স্বপ্ন।
সত্যি?
সত্যি। রিয়ানা সুন্দর করে হাসল, বলল, এটা হবে তোমার আর আমার স্বপ্ন। তুমি দেখতে চাইলেই এই স্বপ্নটা দেখতে পারবে।
তুমি আমাকে কথা দিচ্ছ?
হ্যাঁ আমি কথা দিচ্ছি। রিয়ানার চোখে-মুখে হঠাৎ এক ধরনের ব্যস্ততার ছাপ ফুটে ওঠে, সে সুহানের হাত ধরে বলল, সুহান আমাদের সময় নেই। তাড়াতাড়ি এস।
কোথায়?
এস আমার সাথে।
সুহান রিয়ানার সাথে হাঁটতে থাকে। একটা পোশাকের দোকান, তার পাশে একটা ভাস্কর্যের দোকান, তারপরে একটা ক্যাফে। বাইরে টেবিল, টেবিলকে ঘিরে ছোট ছোট চেয়ার। সেখানে তরুণ-তরুণীরা বসে কফি খাচ্ছে, নিচু গলায় কথা বলছে, হাসছে। রিয়ানা বলল, ওই ক্যাফেটার নাম ক্যাফে অর্কিড়। নামটা মনে থাকবে?