নাম লিখবি না?
নাম নিজে থেকে চলে যাবে।
শুভেচ্ছা দিবি না?
ই-মেইলে কেউ বাজে কথা লিখে না।
শুভেচ্ছা বাজে কথা হল?
বিল্টু গম্ভীর গলায় বলল, ই-মেইলে শুভেচ্ছা বাজে কথা। মানুষ শুধুমাত্র কাজের কথা লিখে। বানানগুলো পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত
আমি গরম হয়ে বললাম, আমার সাথে ফাজলেমি করবি না। যা যা বলেছি সবকিছু লেখ।
বিল্টু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কেন খামোখা লিখব? তোমার ই-মেইল চলে গেছে।
আমি আঁতকে উঠে বললাম, চলে গেল মানে কখন গেল? কীভাবে গেল?
আমি পাঠিয়ে দিয়েছি। এতক্ষণে যেখানে যাবার কথা সেখানে চলে গেছে।
আমি কিছুক্ষণ বিল্টুর দিকে চোখ পাকিয়ে থাকলাম। মানুষের চোখ থেকে সত্যিকার আগুন বের হলে এতক্ষণ এই ফাজিল ছেলেটি পুড়ে কাবাব হয়ে যেত। কী করব বুঝতে না পেরে আমি তাকে সেখানে রেখে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলাম, আমার বোনকে মনে হয় জানানো উচিত যে তার ছেলে এখনই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
আমার বোন চুলোর ওপর ডেকচিতে কী একটা ঘাঁটাঘাঁটি করছিল। আমাকে বলল, না খেয়ে যাস নে। রান্না প্রায় হয়ে গেছে।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, আর খাওয়া!
কোনদিন থেকে তুই খাওয়ার ওপর এরকম দার্শনিক হয়ে গেলি?
না তা হই নি। আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, বিল্টুর সাথে একটু কথা বলছিলাম।
আমার বোন ডেকচির ভেতরের জিনিসটাকে ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল, বিল্টু হতভাগার কথা আর বলিস না। দিন-রাত কী একটা শয়তানের যন্ত্র আছে কম্পিউটার সেটা নিয়ে পড়ে থাকে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ নাওয়া নাই খাওয়া নাই পড়াশোনা নাই খেলাধুলা নাই-চব্বিশ ঘণ্টা এই কম্পিউটার।
আমি নাক দিয়ে একটা শব্দ করলাম।
বুঝলি ইকবাল, আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এই শয়তানের বাক্স আমি গুড়ো করে ফেলে দেব।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ঠিকই বলেছ আপা। ব্যাপারটা মনে হয় একটু কন্ট্রোল করা দরকার।
আমার বোন ডেকচির জিনিসটা ঘাঁটাঘাঁটি বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই-ই পারবি।
কী পারব?
বিল্টুর এই নেশা ছুটাতে। তোকেই দায়িত্ব দিচ্ছি। এক ধমক দিয়ে সিধে করে দে
আমি চমকে উঠে বললাম, আমি?
হ্যাঁ। ওকে বোঝা যে এটা হচ্ছে শয়তানের বাক্স। এটা যারা ব্যবহার করে তারা হচ্ছে বড় শয়তান!
বড় শয়তান?
হ্যাঁ!
আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন বিল্টু তার ঘর থেকে চিৎকার করে বলল, মামা! তোমার ই-মেইলের উত্তর এসেছে!
আমার বোন কোমরে হাত দিলে বলল, কী বলছে পাজিটা? তোর ই-মেইল আসছে? তোকেও ভজিয়ে ফেলেছে? তুইও বিল্টুর সাথে তাল দিচ্ছিস? ঘরের শত্রু বিভীষণ?
বোনের চোখ লাল হওয়ার আগেই আমি সুড়ুৎ করে রান্নাঘরের দরজা থেকে সরে গেলাম। বিল্টুর কাছে যেতেই সে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে দেখাল, সেখানে তিনটা ইংরেজি শব্দ, জরুরি। দেখা করুন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, এর মাঝে উত্তরও চলে এসেছে?
হ্যাঁ।
কেমন করে হতে পারে এই মাত্র না পাঠালি?
হ্যাঁ মামা, ই-মেইল তো আর কেউ ঘাড়ে করে নেয় না, নেটওয়ার্ক দিয়ে যায়। তাই দেরি হয় না। সাথে সাথে চলে যায়।
কী তাজ্জবের ব্যাপার! কয়দিন পরে শুনবে, ছবি চলে যাচ্ছে। কথা চলে যাচ্ছে। টেলিভিশনের মতো কথা বলছে।
কয়দিন পরে না মামা, সেটা এখনই করা যায়। আম্মুকে কিছুতেই পটাতে পারছি না একটা ছোট ভিডিও ক্যামেরা কিনে দিতে তা হলে ভিডিও কনফারেন্স করা যেত!
খেয়াল করি নি কখন আমার বোন এই ঘরে চলে এসেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলল, কী বললি? আমাকে পটাতে পারছিস না? এখনো জিনিস কেনা বাকি আছে? একেবারে ফতুর হয়ে গেলাম, তারপরেও শখ যায় না। একজনকে নিয়ে পারি না এখন দুইজন জুটেছে? দুইজনে মিলে ষড়যন্ত্র হচ্ছে? শয়তানের বাক্স নিয়ে মামু-ভাগ্নের শয়তানি?
আমি বললাম, না-না আপা! তুমি কী বলছ এটা? ষড়যন্ত্র কেন হবে?
ষড়যন্ত্র নয় তো কী? মামু-ভাগ্নে দুইজনে মিলে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছিস? ভাবলাম তুই অন্তত আমার ঝামেলাটুকু বুঝবি-আমার জন্য একটু মায়া হবে। আর শেষ। পর্যন্ত তুইও বের হলি ঘরের শত্রু বিভীষণ?
আপা খেপে গেলে তার মুখে একেবারে মেইল ট্রেন চলতে থাকে–আমি কিছুক্ষণেই কাবু হয়ে গেলাম। জরুরি কাজ আছে বলে এক-দুইবার উঠে যেতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো লাভ হল না, আপা হুঙ্কার দিয়ে বলেছে তোর জরুরি কাজ আছে? আমাকে সেই কথা বিশ্বাস করতে বলিস? জীবনে তোকে দিয়ে কোনো কাজ হয়েছে? জরুরি কাজ ছেড়ে দে-সাধারণ একটা কাজও কখনো তোকে দিয়ে হয়েছে? বাজার করতে দিলে পর্যন্ত পচা মাছ কিনে নিয়ে আসিস। ডিমের হালি কত জানিস না। দেশের প্রেসিডেন্টের নাম জানিস না–
কাজেই আমাকে বসে থাকতে হল। আপা টেবিলে খাবার দিতে দিতে বলল, খেয়ে তুই বিল্টুকে নিয়ে বের হবি।
আমি বিষম খেয়ে বললাম, বি-বিল্টুকে নিয়ে বের হব? আমি?
হ্যাঁ। এই ছেলেকে এই শয়তানের বাক্স থেকে দূরে সরাতে হবে।
আমি আমতা-আমতা করে বললাম, দূরে কোথায় সরাব?
সেটা আমি কী জানি? মামারা ভাগ্নেদের নিয়ে কত আনন্দ করে, মজা করে সেসব করবি। চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবি। শিশুপার্কে নিয়ে যাবি।
বিল্টু আঁতকে উঠে বলল, চিড়িয়াখানা? শিশুপার্ক? সর্বনাশ!
সর্বনাশের কী হল?
আমার স্কুলের বন্ধুরা যদি খবর পায় আমি চিড়িয়াখানা গেছি কিংবা শিশুপার্কে গেছি, তা হলে তারা আমার সাথে কথা বলবে ভেবেছ?