কেন? তোকে সুইসাইড করতে হবে কেন?
যে মামা মনে করে ই-মেইল একটা মেইল ট্রেন তার ভাগনেদের সুইসাইডই করা উচিত। বিল্টু আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, মামা, তুমি কি আফগানিস্তানে থাক? কোনোদিন পত্রিকা পড় না? রাস্তাঘাটে হাঁটো না? দুনিয়ার খবর রাখে এরকম একজন মানুষকেও চিনো না? তোমার হয়েছেটা কী?
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, দেখ, বেশি পাকামো করবি না। একটা জিনিস জিজ্ঞেস করেছি জানলে বল, না জানলে সোজাসুজি বলে দে জানি না। এত ধানাইপানাই কিসের?
মামা। আমি মোটেই ধানাইপানাই করছি না। ধানাইপানাই করছ তুমি। যাই হোক তোমার সাথে কথা বলা হচ্ছে সময় নষ্ট করা। তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করি কম্পিউটার কয় রকম, তুমি কী বলবে জান?
কী বলব?
তুমি বলবে দুই রকম। এক রকম হচ্ছে কম-পিউটার আরেক রকম হচ্ছে বেশি-পিউটার। কথা শেষ করে বিল্টু খুব একটা রসিকতা করে ফেলেছে এরকম ভান করে দাঁত বের করে হি হি করে হাসতে লাগল।
আমার এমন রাগ হল সেটা আর বলার মতো নয়, ইচ্ছে হল ঘাড়ে ধরে একটা দাবড়ানি দেই। আজকালকার ছেলেপিলেরা শুধু যে ফাজিল হয়েছে তা নয়, বড়দের মানসম্মান রেখেও কথা বলতে পারে না। আমি গম্ভীর হয়ে মেঘের মতো গর্জন করে বললাম, ঠিক আছে। তুই যদি আমাকে বলতে না চাস বলিস না। তুই ভাবছিস আমি এটা অন্য কোনোখান থেকে জানতে পারব না?
বিল্টু এবারে একটু নরম হয়ে বলল, আহাহা-মামা, তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তোমাকে বলছি ই-মেইলটা কী। এটা অ আ ই-এর ই না, এটা ইলেকট্রনিক-এর ই। ই মেইল হচ্ছে ইলেকট্রনিক মেইল। অর্থাৎ কাগজে লিখে খামে ভরে স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিঠি না। পাঠিয়ে কম্পিউটার আর নেটওয়ার্ক দিয়ে যে চিঠি পাঠানো যায় সেটাই হচ্ছে ই-মেইল। ই-মেইল পাওয়ার জন্য আর পাঠানোর জন্য যে ঠিকানা ব্যবহার করে সেটা হচ্ছে ই-মেইল অ্যাড্রেস। এখন বুঝেছ?
পুরোপুরি বুঝতে পারলাম না কিন্তু তবুও সবকিছু বুঝে ফেলেছি এরকম একটা ভান করে বললাম, বুঝেছি।
বিল্টু এক টুকরা কাগজে কুটকুট করে কী একটা লিখে আমাকে দিয়ে বলল, এই নাও।
এটা কী?
তোমার ই-মেইল অ্যাড্রেস।
আমার ই-মেইল অ্যাড্রেস? কোত্থেকে এল?
আমি তৈরি করে দিলাম।
তুই তৈরি করে দিলি? কখন তৈরি করলি? কেমন করে তৈরি করলি?
এই তো এখন। তোমার সাথে কথা বলতে বলতে।
আমি বিল্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম সে আমার সাথে ঠাট্টা করছে কি না-কিন্তু মুখে ঠাট্টার চিহ্ন নেই, সব সময় মুখে যে ফিচলে হাসি থাকে সেটাও নেই-বেশ গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আমতা-আমতা করে বললাম, তুই কেমন করে তৈরি করে দিলি? তুই কি পোস্টমাস্টার নাকি যে সবাইকে ই-মেইল অ্যাড্রেস তৈরি করে দিবি?
বিন্দু চোখ উল্টিয়ে বলল, তোমাকে সেটা বোঝানো খুব কঠিন মামা। চেষ্টা করে লাভ নেই। তুমি ই-মেইল কী জানতে চেয়েছিলে, আমি সেটা তোমাকে বলে দিলাম, একটা তৈরিও করে দিলাম! এখন তুমি সারা পৃথিবীতে যে কোনো মানুষের কাছে ই-মেইল পাঠাতে পারবে আবার সারা পৃথিবীর যে কোনো মানুষের কাছ থেকে ই-মেইল পেতেও পারবে।
কত টাকা লাগে ই-মেইল পাঠাতে?
কোনো টাকা লাগে না। ফ্রি। ইন্টারনেট থাকলেই পারবে।
ফ্রি? আমার বিশ্বাস হল না, পৃথিবীতে আবার ফ্রি বলে কিছু আছে নাকি! বললাম, ফ্রি হবে কেমন করে?
হ্যাঁ মামা ফ্রি। বিশ্বাস না হলে দেখো একটা ইমেইল পাঠিয়ে। কোথায় পাঠাবে বলো।
আমি পকেট থেকে সায়রা সায়েন্টিস্টের সেই কাগজটা বের করে দিলাম, বিল্টু সেখান থেকে দেখে কম্পিউটারে খুটখুট করে কিছু একটা লিখে বলল, বলো তুমি কী লিখতে চাও।
আমি বললাম, যেটা লিখব সেটাই চলে যাবে?
হ্যাঁ, ইংরেজিতে লিখতে হবে। বলো।
আমি কেশে গলা পরিষ্কার করে ইংরেজিতে বললাম, প্রিয় সায়রা সায়েন্টিস্ট, আমার শুভেচ্ছা নেবেন-
বিল্টু কিছু না লিখে বসে রইল। আমি বললাম, লিখছিস না কেন?
তুমি আগে বলে শেষ কর।
পুরোটা মনে থাকবে তোর?
তুমি আগে বলো তো?
আমি আবার কেশে গলা পরিষ্কার করে ইংরেজিতে বলতে প্রু করলাম, প্রিয় সায়রা সায়েন্টিস্ট, আমার শুভেচ্ছা নেবেন। আশা করি কুশলেই আছেন। আপনি সেদিন আমার ই মেইল অ্যাড্রেস জানতে চেয়েছিলেন। শুনে সুখী হবেন যে, আমার একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস হয়েছে। আপনাকে সেই অ্যাড্রেস থেকে একটি ই-মেইল পাঠাচ্ছি। এটি পেলে আমাকে জানাতে দ্বিধা করবেন না। তা হলে আমি বুঝতে পারব আপনি আমার ই-মেইলটি পেয়েছেন। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং সাফল্য কামনা কছি। ইতি আপনার গুণমুগ্ধ জাফর ইকবাল।
বিল্টু খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে খুটখুট করে কিছু একটা লিখে ফেলল। আমি বললাম, কী লিখেছিস?
তুমি যেটা বলেছ।
আমি তো কত কী বললাম তুই তো লিখেছিস মাত্র একটা শব্দ। আমি কি তোকে একটা শব্দ বলেছি?
বিল্টু আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, মামা, এটা ফ্রি সেই জন্য তোমাকে উপন্যাস লিখতে হবে না। ই-মেইলে মানুষ কখনো ভ্যাদর ভ্যাদর করে না। কখনো ফালতু একটা শব্দও বলে না! তুমি যে এত কিছু বলেছ তার মাঝে একটা কথাই জরুরি। সেটা হচ্ছে ই-মেইলটা পেয়েছ কি না জানাও। আমি সেটাই এক শব্দে লিখেছি। একনলেজ এর আগে-পিছে কিছু দরকার নাই।